
মোঃ মনিরুল ইসলাম রিয়াদ
স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের সূত্রে জানা যায়, গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান খান এর গাড়ীতে সংঘটিত হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করার পর অজ্ঞাতনামা তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে ডবলমুরিং থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তি এবং মাঠস্তরের অভিজ্ঞ গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে তৎপর হয়। সফল তদন্তের অংশ হিসেবে অদ্য ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ভোর ৪.৩০ ঘটিকায় বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর থানার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা কাজী মোঃ ইমন হোসেন বয়স ২৩ এবং মোঃ সুজন বয়স ২৪। গ্রেফতারকালে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলার অংশ ছিলামি এমন তথ্য স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে যে ঘটনার দিন তিন জন মোটরসাইকেলযোগে কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়ীকে সামনে থেকে গতিরোধ করে। তাদের দলে থাকা মোঃ সুজন তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে গাড়ীর সামনের কাচে কোপ মারে ফলে কাচ ভেঙে যায়। হামলা চলাকালীন তাদের দলের আরেক সদস্য আগুন উস্কে দিতে এবং গুলি করার আহ্বান জানায়। স্থানীয় লোকজন দ্রুত জমায়েতে শুরু করায় ঘটনাস্থল থেকে তারা পালিয়ে যায়।
মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের কর্মকর্তা জানান যে গ্রেফতারকৃতরা প্রথম দফায় যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে তারা বলেছে যে তাদের ভারতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তি বা তৃতীয় পক্ষের নির্দেশে এই কাজটি করেছে এবং ওই ব্যক্তির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলই হামলার সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। অন্য দুই পলাতক আসামি ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা দল আরও তথ্যাভিযান চালাচ্ছে।
ডবলমুরিং থানার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যমতে ঘটনার সঙ্গে আরও কতকটি ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। তাদের মোবাইল ফোন, সাক্ষ্যপ্রদানযোগ্য ইলেক্ট্রনিক তথ্য এবং ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ বলেছে যে দ্রুত সময়ের মধ্যে পলাতকরা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। সাবধানতা হিসেবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং আরও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা তদন্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কাস্টমসের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি আইন নিজের কাজ করবে।
স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ী মহল ঘটনাটিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন স্থানীয় জানান,কাস্টমস অফিসে কাজ করা অফিসারদের ওপর এমন হামলা এলাকার সাধারণ বাণিজ্যিক নিরাপত্তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা হলে শান্তি বজায় থাকবে।অপর একজন বলেন,যেখানে সরকারি কর্মকর্তার ওপর এমন আক্রমণ হয় সেখানে সাধারণ মানুষও ঝুঁকিতে থাকে।
আইনকালী প্রবীণ বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই ধরনের পরিকল্পিত হামলার নেপথ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছাড়াও ব্যবসায়িক লেনদেন, কস্টমস কর্তৃক আদায় করা রাজস্ব সংক্রান্ত বিরোধ ও অন্য পীচট-মোড় থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবেই আতঙ্ক সৃষ্টিকরা ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাই তদন্তকারীরা এখন মূল নির্দেশক পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল, ব্যবহার করা মোটরসাইকেল, কাছাকাছি স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, এবং স্থানীয়দের বিবৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত ও পার্শ্ববর্তী জেলায় সম্ভাব্য যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে এই হামলার পেছনে যদি কোনও বহিরাগত বা সংগঠিত হাতকারি থাকে তৎক্ষণাত খতিয়ে দেখা যায়।
প্রতিবেদন সম্পাদনাকালে ডবলমুরিং থানা ও মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ ঘটনার অপর দিকগুলোর অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। সংবাদের দায়িত্বশীল সূত্র জানায় যে পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান তৎপর রয়েছে এবং অদ্যাধিকালে নতুন তথ্য সংরক্ষণ করে দ্রুত বলবৎ করা হবে।
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়ীতে হামলা সংঘটিত হয়। ০৮ ডিসেম্বর মামলা রুজু। ১১ ডিসেম্বর ভোরে বান্দরবান থেকে দুই আসামি গ্রেফতার। তদন্ত চলছে পলাতকদের ধরা ও ঘটনা পেছনের নির্দেশদাতাদের খোঁজে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাংবাদিকদের জানান যে তারা যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার সকল বাস্তব তথ্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনবে এবং ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
যদি কোন ব্যক্তি এই ঘটনার সম্পর্কে তথ্য জানেন বা ঘটনার দিন যে কোনও সন্দেহজনক কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকেন, অনুগ্রহ করে ডবলমুরিং থানা অথবা মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
Leave a Reply