উপসম্পাদকীয়ঃ
আমার হৃদয়ের কাবা ও নয়নের মদিনায়, করোনাকালের আল্লাহ্ মেহমান হাজ্বীদের কান্না কেউ শুনে না
লাবাইক, আল্লাহুমা লাবাইক। লাবাইক লা শরিকা লাকা লাবাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মূলক, লা শারিকা লাক।
প্রতি বছর আল্লাহ মেহমান ২৫ লক্ষ হাজ্বীদের এমনই এক হৃদয় ভরা ভালেবাসার প্রেমধ্বনি- যে প্রেম ধ্বনি হয়ে ওঠে পবিত্র কাবার চারি দিকে। শুধু কি মক্কার কাবা ? আমার হৃদয়ের বিশ্বাস এ ধ্বনি ছড়িয়ে যায় বিশ্বজগতের প্রতিটি প্রান্তে। এ এমনই এক প্রেমধ্বনি যা সব ধ্বনিকে স্তব্ধ করে প্রাণের গহিনে বুলিয়ে দেয় কাবার ভালোবাসার ও প্রেম স্পর্শ। যে টানে নয়ন ভরে অশ্রু আসে, আসে অসীমের প্রভুর প্রেম। যে প্রেমের উচ্ছ্বস আছড়ে পড়ে মহান আল্লাহর আরশের দরবারে।
এইবার দু:খজনক হলে ও সত্য হলো। এ বছর করোনায় মাহামারির কারনে এই প্রেমময় মধুর ধ্বনি উচ্চরণ করতে পারবে না অনেকেই। পারবেন না বিশ্বে ১৬০ টি দেশে পবিত্র হজ অংশগ্রহণ করতে। শুধু মনে হচ্ছে সৌদিআরবের কিছু সংখ্যক হাজিই কেবল অংশ গ্রহন করতে পারবেন।
কতই না সৌভাগ্যবান তারা, যারা এখন হজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুনাহমুক্ত হওয়ার তাওফিক পেয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্
বিশ্বের লক্ষ লক্ষ হাজ্বী হৃদয়ের কাবা ও নয়নের মদিনায় যেতে যেতে না পারায় মুমিনের হৃদয় আজ চাপা কান্না আল্লাহ ছাড়া কেউ শুনে না। আজ তাদের দিন কাটে ব্যাকুলতায়। প্রতি রাত পোহায় দুই চোখের পানিতে। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে আল্লাহ দরবারে হাত তুলে বলেন, আল্লাহ হে দয়াময় যেভাবে হোক তোমার পবিত্র ঘর ক্বাবার দরজার সামনে গিয়ে নিজ চোখকে শীতল করার তাওফিক দাও। এই পবিত্র কাবা হল মুমিন হৃদয়ের এমনই এক তীর্থ যার মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। আল্লাহর কোনো বান্দা-বন্দি যদি এই ঘরে এক রাকাত নামাজ আদায় করেন, তাহলে মহান প্রভু তাকে এক লক্ষ রাকাত নামাজের সমান সওয়াব দান করেন। আর যদি সোনার মদিনায় এক রাকাত নামাজ আদায় করেন ৫০ হাজার নামাজর সওয়াব পাবেন।
আর শুদু তাই নয়, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে চারিদিকে ঘুরে সাত বার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলে আল্লাহ তার প্রতি কদমে একটি করে গুনাহ ক্ষমা করেন। একটি করে নেকি লেখেন এবং ১০ টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। সুবহানআল্লাহ
এই করোনার লাখ লাখ হাজ্বী হজে যেতে না পারায় হৃদয়ের বেদনাময় আল্লাহ প্রেমীরা রাত গভীরের হলেই তাজ্জুতের নামাজের মধ্যে কান্নায় ঢেউ তুলেন। সেই আকুতি মিনতি তে রাতের নীরবতা ভেঙে আল্লাহ্ আরশও কেঁপে ওঠে। সবার চোখের জলে আমার প্রভুর প্রেম ভালোবাসা।
মনে রাখতে হবে হজ্জ সফরেরর সময় পরকালে কথা স্বরন করে একজন মৃতকে যেমন তার ছেলে মেয়ে নিকট আত্মীয় স্বজন বিলাশবহুল বাড়ি ঘর ও ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা সব কিছু ফেলে সাদা কাপনে কাপড়ে পরিধান করে চলে আসতে হয় কবরের ডাকে, ঠিক আল্লাহ মেহমান হয়ে আল্লাহ ডাকে একজন হাজ্বী কে ইহরাম পড়ে পরিধান করে মৃতের মতেই স্বজন ও সব কিছু ছেড়ে বিদায় নিয়ে চলে আসতে হয় কাবার পথে। এই উপলব্দি টা যতক্ষণ আপনি কাবা ঘরে না আসবেন ততক্ষণ বুঝতে পারবেন না
হে মুমিন ভাই, এইবার করোনা পরিস্হিতির কারনে এবার হজ্জের আয়োজন হচ্ছে সীমিত মানুষের অংশ গ্রহন। শুধু সৌদিআরবে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও দেশটি নাগরিক রা হজ করতে পারবে। আজ তারা ই হল অনেক বড় ভাগ্যবান।
এবারের করোনার জন্য হজে পবিত্র কাবা শরীফ স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া যাবে না। নিদিষ্ট দুরুত্বে থেকে তাওয়াফ ও সায়ি সম্পন্না করতে হবে। তাওয়াফের সময় দেড় মিটার দুরত্ব বজায় রাখতে হবে সম্মানিত হাজিদের। নামাজের জামাতেও দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। অবশ্য অবশ্যই প্রত্যেক জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
হে মহান খোদা, তোমার ই এই মেহমান তুমি আমাদের সকল হাজ্বী ভাই বোনদের কে সৌদিআরব সরকারের আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে সবাই কে শারীরিক ভাবে সুস্হতা রেখে হজ্ব করার তৌফিক দাও। আমিন।
লেখকঃ
সমাজকর্মী ও কলামিস্ট
Leave a Reply