বিনোদন ডেস্কঃ
এই সময়ের আলোচিত মুখ চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশের টিভি মিডিয়াতে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে প্রযোজক অরিন্দম মুখার্জি বিংকু।বাবা বিনয় কুমার মুখার্জী ও মাতা দিপালী মুখার্জীর প্রথম সন্তান অরিন্দম মুখার্জী বিংকু।
১৯৭৮ সালে ৩১ ডিসেম্বরে তার জন্ম। দুই ভাই এর মধ্যে বিংকু বড় তার ছোট ভাইয়ের নাম অনিরুদ্ধ মুখার্জী লাল্টু। বিংকু গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নওগাঁ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কোলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এবং সেখান থেকে তিনি ২০০৬ সালে থিয়েটার এন্ড ভিডিও প্রডাকশন নিয়ে এম এ পাশ করেন। পারিবারিক ভাবে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মধ্যে বড় হয়েছেন বিংকু। ১৯৯৪ সালে মহাদেবপুরে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ উদীচি শিল্পী গোষ্ঠীর শাখা খোলেন। সেখানে বেশ কিছু পথ নাটকেও অভিনয় করেন তিনি। সেখান থেকেই উৎপল দত্ত, মনোজ মিত্র, রূদ্রোপ্রসাদ সেন গুপ্ত ও ঋত্ত্বিক কুমার ঘটকের সাথে পরিচয়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহন অবস্থায় ২০০৪ সালে অসিত সেনের নির্দেশনায় উৎপল দত্তের লেখা ‘রাইফেলে’ অভিনয়ের মাধ্যমে ভারতের অভিনয় জগতে পা রাখেন।
এরপরেই সুযোগ আসে ফিল্মে, গুলশান কুমার প্রযোজিত প্রদিপ্ত ভট্টচার্য পরিচালিত ডবল ভার্সন প্রভু আমার লোকনাথ ও জয়বাবা লোকনাথ চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন তারপর মুম্বাই। কিন্তু কোলকাতা ছেড়ে বেশকিছুদিনের জন্য কোলকাতার বাইরে থাকলে পড়া লোখার ক্ষতি হবে সেই কারনে ছবিটিতে পরে আর অভিনায় করেননি। তারপর কোলকাতায় থেকেই কাজ শুরু করেন মঞ্চনাটকে। শুরু হলো অভিনয়, সীমা মুখার্জী, সোহীনি হালদার, পৌলমী চট্টপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দোপাধ্যায়,সহ আরো অনেকের সাথে। সেই সাথে শুরু হলো টেলিভিশন ধারাবাহিক। ইটিভি বাংলায় ‘সেনার হরিন’ আকাশ বাংলায় ‘নগর দর্পন’ তিথির অতিথী, বহ্নিশিখা, প্রসেনজিৎ এর প্রডাকশন থেকে ‘রেজিষ্টার জেনারেল অফ ম্যারেজেস’ এবং ইন্দ্রানী হালদারের প্রডাকশন থেকে অর্নব ব্যানার্জী রিঙ্গো পরিচালনায় জাফর ইকবালের গল্প নিয়ে দুই বাংলা মিলে তৈরী ‘নিশা তান্ত্রীক’ এ অভিনয় করেন।
তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার এর জীবনী নিয়ে লেখেন। কোলকাতায় নাট্য শোধ সংস্থান এর উপরে “২৫ বছরের নাট্যশোধ সংস্থান” এই শিরোনামে প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন অরিন্দম।
আকাশ বাংলায় এস, এস প্রোকাশনের ব্যানারে সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে বন্ধু বিশ্বজিৎ চক্রর্তীকে সাথে নিয়ে শুরু করলেন টেলিফিল্ম নির্মাণ। পাশাপাশি ‘তুলসী চক্রর্তী ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন এন্ড টেকনিশিয়ান্স ইন্সট্রিটিউট এ পারটাইম শিক্ষক হিসাবে শুরু হলো শিক্ষকতা। সেই সাথে পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন ষ্টেজ শোতে বোম্বের বিক্ষ্যাত সব ষ্টারদের সাথে উপস্থাপনা মিমিক্রি ও নাটকে অভিনয় করেন।
এবং সেই সাথে বিক্ষিপ্ত ভাবে শুরু হয় টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিকের শিল্প নির্দেশনা।পড়া শেষ করে দেশে ফিরে শুরু হলো সিনেমা। গোলাম মোস্তফা পরিচালিত বেঙ্গল এন্টার প্রাইজের ছবি ভালোবাসার সাদাকালো, সেখানেই মাহাফুজ আহমেদের সাথে পরিচয়ের পর তাকে সাথে নিয়ে তৈরী করেন বানীচিত্র প্রডাকশান। চলতে থাকে নির্মান ও অভিনয়। পিযুষ বন্দোপাধ্যায় ও রইসুল ইসলাম আসাদের এক রকম চাপে পড়েই টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন বিংকু। তিনি তথ্যচিত্রের একটা নতুন ধারা নিয়ে আসলেন। একজনের পাসপেক্টটিভে গল্প বলা, ফিকশন ও ননফিকশন নিয়ে তথ্যচিত্রের এক নতুন ধারাতেই নির্মিত হতে থাকলো ‘বাঙালী বিশ্বময়’। “বাঙালী বিশ্বময়” এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সব মানুষের বংশ পরিচয়, বেড়ে ওঠা, জীবন-চরিত্র, কর্ম, সাফল্যগাঁথা দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। যাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। এরা বাংলাদেশের সন্তান। বাংলাদেশের গর্ব।
অরিন্দম মুখার্জী একজন বাঙালী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, লেখক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। তিনি বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তার আন্দোলনের সাথে জড়িত । তিনি পেশায় একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা। তার পরিকল্পনা ও প্রয়োজনা ‘বাঙালী বিশ্বময়’ অনুষ্ঠানটির জন্য তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।
অরিন্দম মুখার্জি বিংকু দুই বাংলায় একই সাথে নির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবে ব্যপক পরিচিত।
তিনি কলকাতা ঋত্ত্বিক সিনে সোসাইটির একজন সদস্য।
তিনি ইন্টান্যশনাল ব্রডকাস্টিং মিডিয়া (আই বি এম) এর সদস্য।
এছাড়াও তিনি একজন আন্তর্জাতিক সহকারী পরিচালক হিসাবে হলিউডে কাজ করার অনুমোদন প্রাপ্ত একজন হলিউড নির্মাতা।
অরিন্দম মুখার্জি বিংকু ২০১৯ সালের ১ এপ্রিলে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্রগ্রাম কেন্দ্রে যোগদান করেন। তার আগমনের ফলে চট্রগ্রাম টেলিভিশনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। দুরদর্শি সম্পন্ন জি এম নিতাই কুমার আচার্য্যের সার্বিক সহোযোগিতায় কাজ পাগল বিংকু একের পর এক চমক উপহার দিতে থাকেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে। স্থানিয় প্রবীণ ও নবীন থিয়েটার কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তিনই প্রথম প্রযোজক যিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে হতে প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক নির্মান করেন।
তার প্রথম টেলিফিল্ম “গল্পটা তাদের” ২০১৯ সালের কুরবানী ঈদের অনুষ্ঠান মালায় প্রচার হয়। ঐ বছরেই তার নির্মিত প্রথম ধারাবাহিক “স্বপ্ন” রোজার ঈদের ৩দিনের অনুষ্ঠানমালায় প্রচারিত হয়েছিলো। এছাড়া
প্রথম ৭ পর্বের ধারাবাহিক “আলেয়ার পিছে” প্রথম ১৩ পর্বের ধারাবাহিক “কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি” প্রথম ১৫ পর্বের “ছায়া স্বাপদ” সিটিভিতে প্রচারিত হয়। প্রথম ৫২ পর্বের মেঘা ধারাবাহিক “খড় কুটোর আখ্যান” বর্তমানে প্রচারিত হচ্ছে। যা বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্রগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠানমালায় যুক্ত হয়েছে নবযাত্রা।
বিংকুর নির্মিত ও প্রচারত টোলিফিল্মের মধ্যে বোধনের দিন, প্রিতিলতা, মহাকাব্য, কালরাত্রী, সমসাময়িক, ৬৯ এর চিঠি, একুশের একুশ, যেখানে গল্পই হয়েছে বিষয়বস্তু, নায়ক সর্বস্ব নয়, জাদুর বাক্স, ধুষর বর্তমান, সমুদ্রস্নান, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পুর্বে বিটিভি চট্রগ্রাম কেন্দ্র হতে বাচ্চাদের নিয়ে কালেভাদ্রে একটা কি দুটো কাজ হত। অরিন্দম মুখার্জি বিংকু-ই প্রথম বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্রগ্রাম কেন্দ্রে শিশুদের নিয়ে টেলিফিল্ম নির্মাণ শুরু করেন। যা আগে স্টুডিওতে হতো। তিনি নিজ উদ্দ্যেগে বাইরে সুটিং শুরু করেন। যাতে করে শিশুরাও হয়ে ওঠতে পারে আগামীর অভিনেতা।
বিংকুর মতে- শিশুদের নিয়ে কেউ তেমন ভাবেনা, বড়দের নিয়ে ছবি হয় টেলিফিল্ম হয়, তাতে বড়রাই প্রধান্য পায়, ইউনিভারসিটিতে সবাই পড়ার সুযোগ পায়না, তাছারা চট্টগ্রামে ঢাকার মতো তেমন কোন ট্রেনিং সেন্টার নেই, তাই তিনি ছোটদের নিয়ে আউটডোরে কাজ করছেন, এতে তাদের হাতে কলমে ট্রনিং হচ্ছে, কে বলতে পারে আগামীতে এখানথেকেই বড় শিল্পী তৈরী হতেও পারে…। সেই ভাবনা থেকে ২০১৯ সালের মাঝা মাঝি থেকে তিনি প্রতি মাসে ২টা করে শিশুতোষ টেলিফিল্ম বানানো শুরু করেন।
পাপেট শো নিয়ে আউট ডোরে তিনিই প্রথম বিষয়, বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে।
বিংকু-ই প্রথম ২০২০ সালে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র হতে হতে “জনতার মুখোমুখী মেয়র” শিরনামে লাইভ অনুষ্ঠান শুরু করেন। এমনকি কবিগানের অনুষ্ঠানও স্টুডিও থেকে বের করে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বিশালতায় নির্মান শুরু করেন তিনি।
বিংকু চায় চট্টগ্রামে শিল্পীরা সবাই কাজ করুক, সবাই নিজেকে প্রেজেন্ট করুক। তারা যেন বলতে পারেন বা স্থানীয় শিল্পীরা তার কাজ দেখাতে পারেন। চট্রগ্রামের চ্যানেলে চট্টগ্রামের শিল্পীরাই কাজ করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
বিংকু ২০২০ সালের ১৩ মার্চ কক্সবাজার নিবাসি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। তার সহধর্মিণী একসময়ের নৃত্যশিল্পী হলেও বর্তমানে একজন চাকুরীজিবী।
অরিন্দম মুখার্জি বিংকু একজন বহুময় প্রতিভার অধিকারী। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রর একজন সফল প্রয়োজক হিসাবে বিংকু চট্টগ্রামে গর্ব। আর তাই তার কাছে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাসাও অনেক। আর এই প্রাপ্তি ও প্রত্যাসার সফল প্রতিফলন হোক এটাই সকলের কাম্য।
পরিশেষে অরিন্দম মুখার্জি বিংকু তার সহধর্মিণী চন্দিমা ভট্টাচার্য্যের সর্বিক সুস্থতা ও সফলতা কামনা করছি।
Leave a Reply