উপসম্পাদকীয়ঃ
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ১৯৭১।এই দিনে বাঙালী জাতির মহাননেতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা মুলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে মহান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিল।বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্বাধীনতার মুলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালী স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে।ভাষণের প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে সেদিন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, পেশাজীবি, রাজনীতিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার সহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রবণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। তার প্রতিটি কথা সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, অর্থবহ ও বাচনবঙ্গি প্রখর ছিল বলে তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে কুন্ঠাবোধ করিনি। নিজের জীবন উজাড় করে স্বাধীনতার জন্য কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।তার প্রতিটি কথা খুবই অসাধারণ রুপে বাঙালীর হৃদয়ে উদ্বেলিত হয়েছিল বলে মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য পাগল ছিল।তিনি বলেছিলেন যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। সত্যি বাঙালী যার যা কিছু ছিল তানিয়ে দেশ মাতৃকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল।সবর্স্তরের মানুষ যুদ্ধে নিজের জীবন দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল।স্বাধীনতা যুদ্ধ করে স্বাধীন সার্ভমৌক্ত দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করেন যা ইতিহাস।
সেদিন ১৯ মিনিটের ভাষণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতা হাততুলে সমর্থন জানাই।বঙ্গবন্ধুর সাথে একমত পোষণ করে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে মাঠে-ময়দানে, পথ-প্রান্তরে,
রাস্তা-ঘাটে নেমে পড়ে যুদ্ধ করে।
আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের ইতিহাস,বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস,বঙ্গবন্ধু বলেন কি পেলাম আমরা। আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষের উপর। তাদের উপর হচ্ছে গুলি।আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ,আমরা বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে।সেদিন বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতা পেয়েও ক্ষমতায় বসতে দেয়নি।এমনকি তারা বঙ্গবন্ধুকে অসম্ভব ভয় করত।বঙ্গবন্ধু বুজতে পেরেছিলেন বলে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, এদেশের মানুষের অধিকার চাই।সত্যিকারের এদেশের মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন করার জন্য সেদিন তিনি ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে বাঙালীর স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। তিনি নিজের জীবনের কথা কখনো ভাবত না,সব সময় বাঙালী জাতির কথা ভাবত আর কিভাবে দেশকে স্বাধীন করা যায়।বাঙালীর অধিকারের জন্য নিজের জীবন দিতে কুন্ঠাবোধ করত না।
আমি পরিস্কার বলে দিতে চাই, যে আজ থেকে কোর্ট কাচারি,আদালত,ফৌজদারী,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে, গরীবের যাতে কষ্ট না হয়,যাতে আমার মানুষ কষ্ট না পায়।রিকশা, ঘোড়াগাড়ী চলবে,রেল চলবে,লঞ্চ চলবে। শুধু সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গর্ভমেন্ট,ওয়াপদা কোনকিছু চলবেনা। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবে।এরপরে একটা গুলি চললে আর আমার লোককে হত্যা করা হয়।তোমাদের উপর আমার অনুরোধ। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, তোমাদের যাকিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। আমি যদি হুকুম দিতে নাপারি তাহলে তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দিবে।বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষনে নির্দেশনা ছিল বলে তার অঙ্গুলির ইশারায় পুর্ব পাকিস্তান চলত।এই ভাষণের পরে এদেশের মানুষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল।চট্রগ্রামে শ্রমিকেরা জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে অস্বীকার করে। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশ মানুষেরা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।গ্রামে-গঞ্জে,পথ-প্রান্তরে,পাড়া-মহল্লায়,মানুষ যুদ্ধের দামাম বাজিয়ে দিতে প্রস্তুতি নেয়।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে শুধু বাঙালীরা নয় বিদেশি সাংবাদিকদেরও বিস্মিত করেছিল।যে এক মহাকাব্যিক শব্দ ব্যঞ্জনা সমৃদ্ধ সাবলীল বাচনভঙ্গি ছিল অত্যন্ত অমিয়বাণী। একারণে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সাপ্তাহিকী নিউজ উইক এর প্রচ্ছদ তাকে poet of politics অর্থাৎ রাজনীতির কবি আখ্যা দিয়েছে।বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী সেই ভাষণটি দেরিতে হলেও ইউনিসেফ ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারী হেরিটেজ অর্থাৎ বিশ্ব সহজ পঞ্চতল ঐতিহ্যের দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার অন্তর্ভুক্ত করেছে।পৃথিবীর ইতিহাসে দলিল হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে থাকবে এই ভাষণ।বিশ্বের অন্যতম ভাষনে ৬ তম স্থান অধিকার করে বাঙালী জাতির জন্য মর্যাদা এবং গৌরবের উজ্জ্বল হিসাবে সমুন্নত থাকবে।আজীবন চির অমলিন হয়ে বেচে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে।
বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষনে শেষ উক্তিটি ছিল স্বাধীনতার মুলমন্ত্র – এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় বাংলা।।
জাতিবর্ণ নির্বিশেষে এই স্বীকৃতিতে সমগ্র দেশ ও মানুষ
আনন্দে উদ্বেলিত। এদেশের মানুষের সাথে বিশ্বের মানুষের মাঝে ভাষণটি চির অম্লান হয়ে থাকবে। এখন দেশের মানুষ চাই ভাষণটির জন্য ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষণ দিবস হিসেবে সারাদেশে পালন করা হোক। বাঙালীর পথ চলার অনুপ্রেরণা ও গতি সঞ্চার করুক এই ভাষণটি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আর জননেত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক বাংলা গঠনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন।নানা কারণে জেফারসন আর লিংকন
ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।বঙ্গবন্ধু তেমনি অমর হয়ে থাকবেন তা হচ্ছে শত বাধা বিপক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে।এজন্য তিনি বাঙালী জাতির পিতা হয়েছিলেন।এটা ছিল তার জন্য বিরল প্রাপ্তি। তার অমিয় ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার মহানায়ক ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে ৭ ই মার্চের অমর রচয়িতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার প্রতি রইল অজস্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
লেখক –
সদস্য,অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।
Leave a Reply