জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি ও তার ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনসহ পরিবারের বিরুদ্ধে একটি চক্র পরিকল্পিভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারটির। সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলে সংবাদটি অসত্য ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধমে প্রতিবাদ জানানো হয়।
হুইপের ছেলে শারুন চৌধুরীর ব্যক্তিগত বলয়ের ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং তার বন্ধুমহলের সদস্যরা জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু সংসদেও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১২-এর পটিয়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ।
এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ, পটিয়া উপজেলা পরিষদ, ১৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, উপজেলা ও পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কমিটিতে হুইপের নিজস্ব লোকজন দিয়ে সাজানো হলেও তারাও এ বিষয়ে হুইপ পরিবারের পক্ষে কোনো ধরনের প্রতিবাদ, বক্তব্য, বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি এখনো গণমাধ্যমে দেয়নি। দলীয় নেতাকর্মীরা রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে আসছেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নির্দেশনা না পাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের বক্তব্য, বিবৃতি এবং প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না বলে দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে জানান।
জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানার মিমি সুপার মার্কেটসংলগ্ন হিলভিউ আবাসিকের নাহার ভবনের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে। গত ৮ এপ্রিল ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চারজনকে আসামি করে স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেলকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তার দুজন নিকটাত্মীয় রয়েছেন।
নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবালকে জড়িয়ে গণমাধমে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ করে তাদের পক্ষের আইনজীবীরা গত ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী অ্যাডভোকেট তপন কুমার দাশ, অ্যাডভোকেট আজহারুল হক এবং অ্যাডভোকেট রুপেন আচার্য্য সংবাদ সম্মেলন করেন।
ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীর দাবি, লাভসহ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পরও তারা বিভিন্ন সময় টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকির দিয়ে আসছিল। এ কারণে তার স্বামী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন। পাঁচলাইশ থানায় গত ৮ এপ্রিল দায়েরকৃত মামলায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীকে আসামি করা হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য এমএ রহিম বলেন, পটিয়ার অভিভাবক ও বঙ্গবন্ধুকন্যার বিশ্বস্ত জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। পটিয়াবাসী প্রতিটি ষড়যন্ত্রের জবাব প্রতিবাদের মাধ্যমে দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আবার শুরু হয়েছে। মূলত পটিয়ার একজন সম্ভাবনাময় নেতা শারুন চৌধুরী ও হুইপ মহোদয়কে বির্তকিত করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। পটিয়াবাসী সবকিছু বোঝে এবং জানে। পটিয়াবাসীর আস্থা হুইপ মহোদয়ের পরিবারের সম্মানহানি করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, হুইপ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে, এখনো চলছে। একটি চক্র পটিয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে পটিয়াবাসী সজাগ রয়েছে, দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। লকডাউনের কারণে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে পারছে না বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পটিয়ার অভিভাবক ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পরিবারকে নিয়ে অপপ্রচা কোনোভাবে পটিয়াবাসী মেনে নেবে না। যে ঘটনার সাথে হুইপের পরিবার বিন্দুমাত্র জড়িত নয়, সে ঘটনায় অহেতুক তার পরিবারকে জড়িয়ে অপপ্রচার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া কিছু নয়। পটিয়াবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে হুইপ একজন পরীক্ষিত ব্যক্তি। পটিয়া যখন উন্নয়নের রোল মডেল, পটিয়ার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে কারো এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে চক্রটি।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেন, আমি ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটি শিল্প গ্রুপের কয়েকটি মিডিয়া উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের গ্রুপের পত্রিকা ছাড়া কোনো মিডিয়ায় এ নিউজ আসেনি। বিষয়টি চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ বুঝতে পেরেছে। যাদের আসামি করা হয়েছে এরমধ্যে ওই শিল্প গ্রুপের চাকরিজীবীবও রয়েছে। আমার ছেলের উত্থান তাদের সহ্য হচ্ছে না। ঘটনায় যারা জড়িত এবং ব্যাংক কর্মকর্তার আয়ের উৎস নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। একটি তদন্তাধীন বিষয়ে এভাবে কোনো ব্যক্তিকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা কোনো সভ্য সমাজে আছে কি-না আমি জানি না। এভাবে ষড়যন্ত্র বিগত সময়ে হয়েছে, এখনো চলছে। আমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো সংস্থা কোনো ধরনের একটিও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছি তা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি হক-হালালভাবে চলি, পটিয়াবাসীকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। পটিয়ার উন্নয়ন নিয়ে ভাবি। এর বাইরে আর কোনো আমার চিন্তা-ভাবনা নেই।
Leave a Reply