মোহাম্মদ জাবেদ, কানাডাঃ
কানাডা মন্ট্রিয়ল শহরে, টিম হর্টন্সের পাঁচটি স্টোরের মালিক,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শানু আলমকে চিনেন না, মন্ট্টিয়ল শহরে এমন বাঙ্গালী মানুষ খুব কমই খুজে পাওয়া যাবে। বাঙ্গালির দেখলেই মানুষটি নিজ থেকে আগবাড়িয়ে গিয়ে কথা বলেন,সহযোগিতা করেন। প্রচুর বাঙ্গালীর কর্মসংস্থান এই শানু আলমের প্রতিষ্টানে। চট্টগ্রাম শহরে নন্দনকানন পৈতৃক বাড়ী। ১৯৭৮ সালে পারিজমান কানাডায়, সেই থেকে বিভিন্নদাপ পেরিয়ে আজ তিনি মন্ট্রিয়ল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং মানবিক,দয়ালু একজন মানুষ। কথা বলতে বলতে তার জীবনের ছোট একটা গল্প শোনাবো আজ আপনাদের।
– ২০১৯ সালে পৃথিবীতে করোনাভাইরাস রোগ আঘাত করার কিছুদিন পূর্বে এক খরা দুপুরে টিমহর্টন্স এ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো কানাডার প্রবাসী বাংলা পত্রিকার মন্ট্রিল ব্যুরো চিফ সাংবাদিক হুমায়ুন কবির রতন। সাথে একজন তরুণ যুবক। লোকটার নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। যতটুকু মনে পড়ছে সে একজন বাংলাদেশী , স্ত্রী এবং এক শিশু সন্তানের বাবা। জীবনের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সে ইতালি গিয়েছিলো , সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলো ভাগ্যের অন্নেষণে। কিন্তু সেখানে তেমন সুবিধা করতে পারেনি বলে কানাডায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে।
কিন্তু আমার সাথে দেখা করার মূল কারন সেটা নয়।কানাডায় আসার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপালে নেয়ার পর তার পেটে ক্যান্সার নামক মরন ব্যাধি ধরা পড়ে , ডাক্তার তার জীবনের মেয়াদ ৩ মাস পর্যন্ত বেধে দেয়। ৩ মাস পরে তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।
তার জীবনের গল্প শুনে কষ্ট পেলাম। কিন্তু আজ একটা বিশেষ অনুরোধে সে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে ! সে জানে সে ৩ মাস পরে মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করছে , কিন্তু বিদায়ের আগে তার শেষ ইচ্ছে তার প্রিয়তমা স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে চায়। এবং একমাত্র আমিই নাকি পারবো তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে।
সাংবাদিক হুমায়ুন কবির রতন বললো মন্ট্রিলের তুখোড় রিফিউজি আইনজীবী জোসেফ এলেন বলেছে , যদি কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী বাংলাদেশে তার পরিবারকে স্পনসর করে তাহলে তার স্ত্রী সন্তানকে সে কানাডায় নিয়ে আনতে পারে। তার স্ত্রী সন্তানের ভবিষ্যতে চিন্তা করে আমি রাজী হলাম।
আইনজীবী জোসেফ এলেনের সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তার সাথে দেখা করলাম এবং স্পন্সর করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এলাম।
কিন্তু ভাগ্যের একটি নির্মম পরিহাস তার কিছুদিন পর পৃথিবী কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার স্পন্সরশিপের প্রসেসিং থেমে যায় , এবং এর কিছুদিন পর সেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
তার চলে যাওয়া যতটুকু কষ্ট পেয়েছি , তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি যখন সমাজসেবক জয়দত্ত বড়ুয়া আমার কাছে এসেছিলো তার লাশ দেশে পাঠানোর জন্য টাকা খুঁজতে।
আমি দিয়েছি। কিন্তু একদিন পর জয়দত্ত আমার টাকা আমাকে দিয়ে বলে , দাদা টাকা লাগবেনা। চাঁদা তুলে টাকা জোগাড় হয়ে গেছে। বললাম আমার টাকাটা তার স্ত্রীকে দিয়ে দাও , তার বিপদে কাজ জাগবে। তারপরেও জয়দত্ত আমার টাকা নেয়নি। পরে জানতে পারলাম আমি নাস্তিক তাই কিছু ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা আমার টাকা নিতে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সমাজের আসল শত্রু জাতি বা ধর্ম নয়, বরং অজ্ঞতা ও দারিদ্র। ছবিতে সাদা জেকেট পরা সেই ছেলেটা এখন আর পৃথিবীতে নেই। বেঁচে আছে কিছু ধর্মঅন্ধ মানুষ।
জয়দত্ত বড়ুয়া আর হুমায়ুন কবির রতন আজও মন্ট্রিলে বেঁচে আছে। তারা আমার জীবন গল্পের সাক্ষী হয়ে থাকুক।
Leave a Reply