মোহাম্মদ জাবেদ, মন্ট্রিয়ল, কানাডা
টরন্টোর আকাশে চট্টগ্রামের আলোকছায়া, কানাডার দীর্ঘ শীত শেষে বসন্তের কোমল ছোঁয়া যখন প্রকৃতিকে উষ্ণ করে তুলছে, ঠিক তখনই ১৮ই মে, রবিবার, টরন্টোর স্কারবোরো এলাকার হোয়াইটশিল্ড ব্যাঙ্কুয়েট হলে অনুষ্ঠিত হলো চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা ইনক-এর অভিষেক ও ফ্যামিলি নাইট। প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীর প্রাণখোলা উপস্থিতিতে পুরো সন্ধ্যাটি রূপ নেয় এক আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগঠনের নতুন কমিটির অভিষেক পর্বে শপথ বাক্য পাঠ করান সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা নাসির উদ দৌজা। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি সারওয়ার জামান, নবনির্বাচিত সভাপতি শাহাব সিদ্দিকী বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ও কোষাধ্যক্ষ সনৎ বড়ুয়া। বক্তারা আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বলেন—প্রবাসে আমাদের মতো সংগঠন শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি পরিবার। এটি প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীর মাঝে বন্ধুত্ব, ঐক্য ও সহমর্মিতার সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়।
অনুষ্ঠান শেষে সম্মানিত স্পনসরদের হাতে ফুল ও উপহার তুলে দিয়ে জানানো হয় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
সন্ধ্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন সংগীতশিল্পী মুক্তা পাল, সমিত বড়ুয়া ও মহুয়া পারিয়াল। ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী এসমিতা চক্রবর্ত্তীর অনবদ্য পরিবেশনা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একের পর এক গান ও নৃত্যে ছিল পুরনো দিনের নস্টালজিয়া আর আধুনিকতার ছোঁয়া—এক অপূর্ব সুরের মেলবন্ধন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী চক্রবর্তী ও ডিরেক্টর ফারাহ হোসাইন, যাঁদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা পুরো সন্ধ্যায় প্রাণ সঞ্চার করে।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে ছিল চমৎকার আপ্যায়ন। সন্ধ্যায় চা, কফি ও নানা ধরনের নাস্তার পর পরিবেশিত হয় সুস্বাদু ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারের এক বৈচিত্র্যপূর্ণ বাফেট ডিনার। মেনুতে ছিল মাটন বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা, সবজি, পোলাও, সালাদ, চিকেন ফ্রাই, ফিশ ফ্রাই, মিষ্টি, আইসক্রিম ও নানা রকম পানীয়—যা অতিথিদের মন জুড়িয়ে দেয়।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়, আর কখন যে ঘড়ির কাঁটা রাত ১টা ছুঁয়েছে, তা কেউই টের পাননি। ফাঁকে ফাঁকে ছবি তোলার জন্য ছিল দৃষ্টিনন্দন ফটো বুথ, যেখানে অতিথিরা একে একে নিজেদের মুহূর্তগুলো বন্দী করে রাখছিলেন। সংগীতের তালে তালে দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত নাচ, অফুরান খাবার, চা ও পানীয় পরিবেশনা—সব মিলিয়ে ছিল এক অভূতপূর্ব আয়োজন।
অনুষ্ঠান শেষে দর্শকরা একবাক্যে আয়োজকদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন এবং আগামীতেও এমন হৃদয়ছোঁয়া আয়োজনের অনুরোধ জানান। চট্টগ্রামের প্রেমে নিবেদিত প্রবাসীরা যখন গভীর রাতের হালকা কুয়াশা ভেজা জ্যোৎস্নায় ঘরে ফিরছিলেন, তাঁদের মুখে তখনও লেগে ছিল তৃপ্তির উজ্জ্বল হাসি।
এ যেন এক প্রবাসী হৃদয়ে গাঁথা চট্টগ্রামের গন্ধভরা সন্ধ্যা—স্মরণীয়, প্রাণবন্ত, ভালোবাসায় ভরা।
Leave a Reply