নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার অবসানে কঠোর নীতি ও নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর এক জরুরি প্রেস ব্রিফিং মঙ্গলবার চসিক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বহুমাত্রিক সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “নগরবাসীর কাছ থেকে ইচ্ছামত টাকা আদায় ও দায়িত্বহীন ময়লা সংগ্রহের দিন শেষ। ডোর-টু-ডোর ময়লা সংগ্রহে নির্ধারিত সেবামূল্য ছাড়া অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা যাবে না।”
চসিক ইতোমধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডের জন্য নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করেছে, যেখানে ১৯২টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অভিজ্ঞ ও সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আগে সতর্কতা, পরে প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করা হবে। পরিচ্ছন্নতা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা আপসহীন।”
‘সেবার নামে লুটপাট নয়’
প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা জানান, “কিছু কোম্পানি মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে, অথচ চসিকের সঙ্গে তাদের কোনো বৈধ চুক্তি নেই। অন্যদিকে, একটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট করেও কাজ বন্ধ রেখে সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি করছে। এসব অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
চসিকের নতুন সিস্টেমে প্রতিটি কোম্পানির শ্রমিক সংখ্যা, যানবাহনের সক্ষমতা, এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স যাচাই সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হবে।
‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি কার্যকর
চসিক ইতোমধ্যে প্রায় ২০০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিলেও তিন মাস ধরে যারা কাজে অনুপস্থিত, তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। “নো ওয়ার্ক, নো পে” নীতিতে তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান ইখতিয়ার চৌধুরী।
তিনি বলেন, “প্রতিদিন ৩০-৪০টি অভিযোগ আসে— মানুষ টাকা দিলেও ময়লা নিচ্ছে না। নাগরিক ভোগান্তি লাঘবে আমরা সিস্টেমে কাঠামোগত পরিবর্তন আনছি।”
যন্ত্রপাতির সংকট ও নাগরিকদের ভূমিকা
পুরাতন যন্ত্রপাতির সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি। “অনেক ইকুইপমেন্ট ২০-২৫ বছর পুরনো। আমাদের স্কেভেটর, চেইন ডোজার পর্যন্ত ভাড়া করে কাজ চালাতে হচ্ছে। এ খাতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন।”
নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি নাগরিকদের অসচেতন ময়লা ফেলা ও অপরিকল্পিত আবর্জনা ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। “ড্রেন পরিষ্কার করার পরও আবার তা বন্ধ হয়ে যায় কারণ কেউ কেউ জানালা দিয়ে ময়লা ফেলে। সচেতনতা ছাড়া সেবা সম্ভব নয়।”
উপস্থিত কর্মকর্তাগণ
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা ও ডা. এস এম সারোয়ার আলম।
Leave a Reply