1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মানবাধিকার কত দূর অর্জন হলো? -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ “অনিরাপদ রেল ভ্রমণ” চট্টগ্রাম -কক্সবাজার রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশনে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে -আলমগীর আলম গণঅধিকার পরিষদ- ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদন বাঘাইছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় বেগম রোকেয়া দিবস পালিত চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা: ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার চ.উ.ক কাজির দেউরী কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বাঘাইছড়িতে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শ্রমিক কল্যাণ ইউনিটের দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত অভিযাত্রী পত্রিকার উদ্যোগে বিজয় দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত। নারী দিবসে সফল নারী উদ্যোক্তা বিলকিস সুলতানাকে সম্মাননা প্রদান

মানবাধিকার কত দূর অর্জন হলো? -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • সময় মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩১ পঠিত

সমাজে মানুষের যথাযথ মর্যাদা দিতে এবং সঠিক ও উপযুক্ত মূল্যায়নের জন্য প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। তবে প্রয়োগের জায়গা থেকে তার কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, বিশেষ করে নারীর মানবাধিকারের ক্ষেত্রে, তা সন্দেহাতীতভাবেই প্রশ্নের সম্মুখীন!
মানবাধিকার হচ্ছে মর্যাদার দাবি। অর্থাৎ, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার। অপর কথায়, যে অধিকার সহজাত, সর্বজনীন, হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং অখণ্ডনীয়, তা-ই মানবাধিকার। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছিলেন, ‘মানবাধিকার হচ্ছে মানব অস্তিত্ব ও পারস্পরিক সহাবস্থানের ভিত্তি। মানবাধিকার সর্বজনীন, অবিভাজ্য ও পরস্পর সম্পর্কিত।’ নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে সবার জন্য মানবাধিকার সমভাবে প্রযোজ্য।
মানবসভ্যতার ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রতিটি সমাজে মানুষ তার অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে চলেছে। সময়ের ধারাবাহিকতায় এই আন্দোলন-সংগ্রামের মাত্রা ও প্রক্রিয়ায় হয়তো নতুনত্ব ছিল। তবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। তা হলো জন্মসূত্রে মানুষ হিসেবে সহজাতভাবে যেসব অধিকার পাওয়ার কথা, তার সুনিশ্চিত বাস্তবায়ন।
১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা সনদে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মানবাধিকারের কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। তখন এটিকে বলা হয় মানুষ ও নাগরিকের অধিকার। এরপর সময়ের ব্যবধানে জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। বহু আন্দোলন, ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে ১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে ‘নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান নির্বিশেষে’ সব ক্ষেত্রে সম-অধিকারের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়, যাকে ‘নারীর সমতা’ ধারণার প্রথম মাইলফলকও বলা চলে।
জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকার ঘোষিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপকভাব বিস্তার লাভ করতে থাকে মানবাধিকার-সংক্রান্ত ধারণা। তখন থেকেই মানবাধিকার-সংক্রান্ত বহু দলিল জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায়, নারীর অধিকারসংক্রান্ত প্রথম পদক্ষেপটি ছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)। ১৯০২ সালের ‘হেগ কনভেনশন’-এ প্রথম আন্তর্জাতিক দলিল বা সনদ আকারে নারীর অধিকারকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথকে অধিকতর মসৃণ ও শানিত করার জন্য আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সনদ গৃহীত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে :১৯৪৯ সালে গৃহীত নারী পাচার ও পতিতাবৃত্তি নিরোধসংক্রান্ত কনভেনশন; ১৯৫২ সালে গৃহীত নারীর রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত কনভেনশন; ১৯৪৬ সালে গৃহীত দাসত্বের বিলোপসংক্রান্ত সম্পূরক কনভেনশন; ১৯৬২ সালে গৃহীত বিয়েতে সম্মতি, বিয়ের রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত কনভেনশন; ১৯৬৭ সালে গৃহীত ‘নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপের ঘোষণাপত্র’।
এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপসংক্রান্ত কনভেনশন (সিডও)। এই কনভেনশনে যে দলিলটি গৃহীত হয়, এটিকে বলা হয় নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ। অনেকের বিবেচনায় এটি ‘নারী মুক্তির সনদ’ও বটে। এই সনদে স্পষ্ট বলা হয় :রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা ও তথ্যে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্যসুবিধায় নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন করবে এবং বিবাহ ও পারিবারিক সব বিষয়ে নারীর প্রতি বৈষম্যের অবসান নিশ্চিত করবে। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠন কর্তৃক নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে রাষ্ট্রসমূহ উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে।
বিশ্বব্যাপী ক্রমশ নারী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গড়ে ওঠে মানবাধিকারবিষয়ক নানা চুক্তি, নানা সমঝোতা, নানা আন্দোলন। এর ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে জেন্ডার বৈষম্য ও জেন্ডারভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটানোর আইনি ভিত্তি। মানবাধিকার ঘোষণায় নারী-পুরুষের অধিকারগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে গিয়ে বলা হয়েছে :জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সবারই অবাধে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে। নারী ও পুরুষের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ও বিয়ে ভেঙে দেওয়ারও সমানাধিকার রয়েছে। কেবল প্রত্যেক পাত্রপাত্রীর স্বেচ্ছায় ও পূর্ণ সম্মতিতেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নারীর সম-অধিকার অর্জনের পথে অপর একটি মাইলফলক হলো বেইজিংয়ের চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন। ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতাকে নারী-পুরুষের মধ্যে অন্যতম সমস্যা বলে চিহ্নিত করে গৃহীত প্ল্যান অব অ্যাকশনে বলা হয়, নারীর মানবাধিকার অবিচ্ছেদ, সর্বকালীন, অখণ্ডনীয় ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
সম্মেলন থেকে সব রাষ্ট্র নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপবিষয়ক সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, প্রচলিত আইন ও প্রথার জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। এরপর বেইজিং +৫, বেইজিং +১০ ইত্যাদি সম্মেলনের মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব প্ল্যান অব অ্যাকশন নেওয়া হয়েছিল, তার অগ্রগতির পর্যালোচনা এবং পরবর্তী প্ল্যান অব অ্যাকশন তৈরি করা হয়।
এসব আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তিসমূহে সুনির্দিষ্টভাবে নারীর মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রক্রিয়ায় জেন্ডার ইস্যুকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হয়, যার ফলে আপাতদৃষ্টিতে নারীর অধিকার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে হতেও পারে। তবে প্রকৃত অর্থে নারীর অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ বহুমাত্রায় এখনো অনর্জিত রয়ে গেছে। আজও সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অবহেলিত, বঞ্চিত। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো নারীর কোনো অবস্থান নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে নারীর উপস্থিতি উপেক্ষিত। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বেও দেশগুলোর প্রশাসনিক কাঠামোতে নারীর অবস্থান প্রায় অস্তিত্বহীন। কয়েকটি পরিসংখ্যানে বিষয়টি স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছে। যেমন—দক্ষিণ এশিয়ায় মাত্র ৭ শতাংশ নারী পার্লামেন্টে, ৯ শতাংশ মন্ত্রিসভায়, বিচার বিভাগে ৬ শতাংশ এবং ৯ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত আছেন (উন্নয়ন পদক্ষেপ-৭ম বর্ষ চতুর্বিংশ সংখ্যা)। থমসন রয়টার্স উইমেনের এক পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের চারটি দেশের নারী সব থেকে বেশি বিপন্ন—সেই চারটি দেশের মধ্যে প্রথম আফগানিস্তান, দ্বিতীয় কঙ্গো, তৃতীয় পাকিস্তান ও চতুর্থ ভারত। অর্থাৎ আফ্রিকান দেশ কঙ্গো ছাড়া বাকি তিনটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার। এসব পরিসংখ্যান থেকেই এখানকার বাস্তব পরিস্থিতির কিছুটা আঁচ করা যায়। ইদানীং অনেক দেশেই স্থানীয় প্রশাসনে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে দাবি উঠলেও বাস্তবতা মোটেই সুখকর নয়। বস্তুত, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখনো নারীদের অবস্থান এমন নয়, যা নারীর জীবনে কোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
বাংলাদেশ হলো বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে গত ৫০ বছরে শীর্ষস্থানে পুরুষদের তুলনায় নারীরা দীর্ঘ মেয়াদে রয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নে এটিই একমাত্র ‘সত্য’ নয়। এর বাইরেও ‘সত্য’ আছে! এখনো নারীর প্রকৃত মর্যাদা বা সম্মানের জায়গায় আমাদের অনেক অপূর্ণতা রয়েছে এবং এখনো নারীকে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হতে হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে শুরু করে অসম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নানা অজুহাতে নারীকে গৃহে অন্তরীণ রাখা, অসম উত্তরাধিকার ভোগ করা, পরিবার ও সমাজে নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করা, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি নারীর ওপর সহিংসতার একেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এসব সহিংসতা থেকেই লিঙ্গীয় সহিংসতা বা যৌন নিপীড়নজনিত সমস্যার উদ্ভব। পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু করে সামাজিক পরিমণ্ডলে, কর্মস্থলে, গণপরিবহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে উদ্বেগের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি নারী ও শিশুদের বিভিন্ন যৌন বিকৃত মানুষ দ্বারা ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হতে।

লেখক : যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগ

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট