গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান নুরাল পাগল নামে একজন তথাকথিত দরবেশ। এরপর এলাকায় জানাজা হয়, দাফন হয়। কবর কেন উচুঁ করা হয়েছে সেটা নিয়ে বাকবিতন্ডায় শুরু হয়। সম্প্রতি নুরুল হক মারা গেলে তার মরদেহ প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে কাবা শরিফের আদলে দাফন করা হয়। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধানের চেষ্টা চললেও শুক্রবার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জনতা বিক্ষোভে নামে। বিক্ষুব্ধরা প্রথমে দরবার ভাঙচুর করে আগুন ধরায়। পরে দ্বিতীয় দফায় তার কবর খুঁড়ে মরদেহ তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এর আগে বিক্ষুব্ধ জনতা তার দরবার শরিফ ও বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ ঘাটের তথাকথিত পীর নুরাল পাগল এর শরিয়ত বিরোধী কার্যকলাপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো
১. ভন্ড নুরাল পাগল নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করতেন।
২. সে তার জীবদ্দশায় তার ভক্তদের কাছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনকে বলতো ভুজপাতা অর্থাৎ মুল্যহীন।
৩. তার ছেলে নুরতাজ খিষ্ঠান ধর্মের অনুসারী এবং সে মুসলমানদেরকে ধর্মান্তরিত করছে।
৪. সে মৃত্যুর পূর্বে তার কবরকে কা’বার আদলে নির্মাণ করেছে এবং মৃত্যু পর তার কবরকে তাওয়াফ করার অসিয়ত করে গেছে, যার ফলে তার মৃত্যুর পরের শুক্রবার তার কবরকে কেবলা করে জুমার নামাজ আদায় করে তার ভক্তরা।
৫. তার ভক্তরা মৃত্যুবরন করলে তাদেরকে ৬ তকবীর এর সহিত জানাজা দেয়া হয়।
৬. সে তার নামে নিজস্ব কালেমা তৈরি করেছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মেহেদী রসুল্লাহ।
৭. ভন্ড নুরাল পাগল এর দাফনের সময় তার মাথা দক্ষিণ এবং পা উত্তর মুখি করে রাখা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)
তার সকল কর্মের ফল সে পেত আখেরাতে। লাশ তোলার পর মানুষটাকে অন্য জায়গায় কবর দেওয়া যেত। পুড়ার অধিকার কে দিয়েছে? সে যদি কোন ইসলাম বিরোধী কাজ করে থাকে তাহলে তাকে জীবিত থাকা অবস্থায় আপনারা সংশোধন করতে পারতেন। কুরআনে কোথাও সরাসরি “লাশ পোড়ানো”র উল্লেখ নেই, কিন্তু মানুষের দেহকে সম্মানের সঙ্গে দাফন করার শিক্ষা আছে।
আল্লাহ বলেন: “আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তোমাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেব এবং পুনরায় তোমাদেরকে সেখান থেকে বের করব।” (সূরা ত্বাহা: ৫৫)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানুষের জন্য মাটিতে দাফনই নির্ধারিত নিয়ম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “মৃতদেহ ভেঙে দেওয়া জীবিত মানুষের হাড় ভাঙার সমান পাপ।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস ৩২০৭; ইবন মাজাহ, হাদিস ১৬১৬)।
এখানে বোঝানো হয়েছে, মৃতদেহেরও সম্মান আছে। সুতরাং পোড়ানো বা অপমানজনক আচরণ করা কঠিন গুনাহ।
শাস্তি হিসেবে আগুন: হাদিসে এসেছে, আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য জায়েজ নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দিও না। আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহর।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০১৬)
তাই লাশ পুড়িয়ে দেওয়া ইসলামি শরীয়তের পরিপন্থী। ইসলামে লাশ পোড়ানো নিষিদ্ধ। এটি মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন। ইসলাম-প্রদত্ত এই মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। ফলে নুরাল পাগলার লাশ পোড়ানো নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য কাজ। একটি অন্যায় রোধ করতে গিয়ে আরেকটি অন্যায় করার সুযোগ নেই। এ ধরনের বর্বরতা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।
Leave a Reply