
বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২২ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহমেদ হলে অনুষ্ঠিত হলো “সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের অধিকার : রাষ্ট্র ও নাগরিকের দায়বদ্ধতা” শীর্ষক নাগরিক গোলটেবিল আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে বক্তারা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, নীতি বাস্তবায়নের দুর্বলতা এবং সমাজের নীরব উদাসীনতাকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন।
সভায় প্রধান আলোচক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই আলোচনায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে মূখ্য আলোচক ছিলেন প্রফেসর হাসিনা যাকারিয়া বেলা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ ও সমাজচিন্তক।
উক্ত সভায় আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্যে রাখেন জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, স্থপতি আশিক ইমরান, অনারারি কনসাল জেনারেল, রাশিয়ান ফেডারেশন, চট্টগ্রাম।মোছলেহ উদ্দিন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, শিশু একাডেমি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা অফিসের প্রসিকিউটর মোঃ নেজাম, মুহাম্মদ বরকত উল্লাহ খান, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। আর.এস.এম. নিজাম উদ্দিন, চেয়ারম্যান, ফ্রেশ অ্যান্ড সেইফ। সরোয়ার আমিন বাবু, স্টার্টআপ পরিচালক, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট টিভি। মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্যুরো প্রধান, আজকের বিজনেস বাংলাদেশ; স্থায়ী সদস্য, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফয়জুল আলম প্রিন্স,ঞ অপরাজেয় বাংলাদেশ চট্টগ্রামের
ইনচার্জ জিনাত আরা,চট্টগ্রাম নারী উন্নয়ন সংস্থার সহ সভাপতি শিরিন আখতার।
এই সময় বক্তারা বলেন -পথশিশুদের বাস্তবতা ‘পরিচয়হীন এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে’ দেশের পথশিশুরা নাগরিক অধিকার থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন একটি জনগোষ্ঠী। তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ জন্মসনদ-বঞ্চিত হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি সুরক্ষা ও আইনি পরিচয় থেকে বাদ পড়ে, নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতি, পরিদর্শন ও সমন্বয়ের দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতায় পথশিশুরা প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠছে। তারা মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, যৌন শোষণ, শ্রমনির্যাতন, গ্যাং-সংস্কৃতি ও পাচারের উচ্চঝুঁকিতে থাকে। বক্তাদের ভাষায়—
“এভাবে পরিচয়হীন এক নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে; যা ভবিষ্যতে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।”
এই সময় এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পথশিশুদের সহায়তায় চলমান উদ্যোগসমূহ সভায় উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পথশিশুদের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি
পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ক্যাম্পেইন
আইনি সহায়তা
মনোসামাজিক কাউন্সেলিং
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের পুনর্বাসন কার্যক্রম
উক্ত সভায় এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব মোহাম্মদ আলী পথশিশু সুরক্ষায় ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
পথশিশুদের সঠিক তালিকা তৈরি করে পরিচয় নিশ্চিতকরণ
বিদ্যালয় পর্যায়ে জলবায়ু অভিযোজন শিক্ষা
ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনবিরোধী আইন আরও শক্তিশালী করা
বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতা বাড়ানো
ভিকটিম-ফ্রেন্ডলি আদালত ব্যবস্থা
সাক্ষী সুরক্ষা আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন
নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কাউন্সেলিং সেবা সহজলভ্য করা
পুনর্বাসনের পর দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ
গণমাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতা প্রচারণা
তিনি আরও বলেন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার ও বিচার বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকে সরকারি কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এনজিও নিবন্ধন প্রক্রিয়া ঘুষমুক্ত ও সহজ করতে হবে।
দেশের প্রতিটি জেলায় ওয়ার্নিং হটলাইন ও স্থানীয় সাপোর্ট সেন্টার চালুর আহ্বান জানানো হয়।
সভাপতির বক্তব্য মোহাম্মদ আলী বলেন “পথশিশুরা রাষ্ট্র ও সমাজের সমান দায়িত্ব। কাগজের নীতিতে আলো আছে, কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় অন্ধকারই বেশি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
সভায় সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
Leave a Reply