বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম: দেশের জ্বালানি খাতের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র পতেঙ্গা। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) অধীনস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডসহ পাঁচটি কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার সকালে একযোগে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রধান ফটকের সামনে সকাল থেকে শুরু হয় অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি। এতে শত শত শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন। তারা ৫ দফা দাবি আদায়ে শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল করে তোলেন পুরো এলাকা।
শ্রমিকদের মূল দাবিঃ-1. ন্যূনতম দিনমজুরি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১০৫০ টাকা করতে হবে।(2).শ্রমিকদের জন্য দুই ঈদে উৎসব ভাতা চালু করতে হবে।(3). নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি শ্রমিকদের জীবনে যে চরম চাপ তৈরি করছে, তার জন্য ভর্তুকি বা সহায়তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।(4.) শ্রমিক পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহজলভ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
(5.) তেল সেক্টরে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও তালবাহনা বন্ধ করতে হবে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি নিযুক্ত ঠিকাদার দিনমজুর শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি. নং ১০২২)-এর সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন জুয়েল, প্রবীণ নেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোঃ আরাফাত রহমান, আনোয়ার হোসেন, মোঃ মিজান, মোঃ সালাউদ্দিনসহ আরও অনেকে।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এলপিজি কারখানার শ্রমিকরাও একাত্মতা প্রকাশ করে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন,-> “একদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি, অন্যদিকে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি কাঠামো অবহেলিত। ৮০০ টাকায় আর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। পরিবার চালাতে আমরা ন্যূনতম ১০৫০ টাকা চাই।”
শ্রমিক নেতারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,চেয়ারম্যান বা এমডি শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে যৌক্তিক আলোচনায় না বসলে এই আন্দোলন আরও কঠোর আকার ধারণ করবে। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করতে জ্বালানি উপদেষ্টা ও সচিবকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে।
দাবি উপেক্ষা করা হলে তেল সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে, যার মারাত্মক প্রভাব পড়বে সারাদেশে।
বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম গত এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দামও একের পর এক বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের দিনমজুরি এখনো ৮০০ টাকার কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে পরিবার চালানো, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয় বহন করা শ্রমিকদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি—এই বৈষম্যমূলক বাস্তবতা অবিলম্বে সমাধান করা না হলে জ্বালানি সেক্টরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তার সরাসরি প্রভাব পড়বে শিল্পখাত ও সাধারণ মানুষের জীবনে।
Leave a Reply