এম,আনিসুর রহমান
দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা চালু হবে। যেসব হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এই সুবিধা মিলবে বলেও জানানো হয়। এদিকে প্রতিদিনই দেশে বাড়ছে করোনার নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ। জনমনেও তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। ঈদের ছুটিতে থাকা ফাঁকা ঢাকায় করোনার সংক্রমণ বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঈদের ছুটি শেষে জনসমাগম বাড়লে রাজধানীতে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে তাঁরা জানান, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত এক সপ্তাহের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আক্রান্তের অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায়। ঈদের ছুটি থাকার পরও ঢাকায় এমন সংক্রমণে বাড়ছে উদ্বেগও। এদিকে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন নগরবাসী। এতে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে ঢাকা। সঙ্গে বাড়বে জনসমাগমও।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, এতে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে সংক্রমণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ার। তাই ঢাকায় ফিরতি যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে এখনই সরকারি পদক্ষেপেরও জোর দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, যেসব হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, করোনা পরীক্ষা পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কিট আমদানির জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেছেন, আমরা আশা করছি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আবার চালু করা যাবে, তবে তা সীমিত পরিসরে। যাদের উপসর্গ থাকবে, তাঁরাই পরীক্ষার সুযোগ পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, যাঁদের করোনা উপসর্গ থাকবে, তাঁরাই শুধু পরীক্ষার অনুমতি পাবেন। হালিমুর রশীদ আরও বলেছেন, সংক্রমণের হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে পরীক্ষার পরিধিও বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত এক দিনে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শতকরা হিসাবে অত্যন্ত উচ্চ শনাক্ত। এরই মধ্যে ৯ জুন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে এবং বিমানবন্দরসহ সব প্রবেশপথে হেলথ স্ক্রিনিং অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনগণকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। এর আগে গত ৯ জুন ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দুজন। এর ফলে এই সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
Leave a Reply