জামশেদুল ইসলামঃ
বাংলাদেশ, এক সময়ের কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে সাফল্যের শিখরে ওঠার গল্প যেমন আছে, তেমনি রয়েছে হঠাৎ করেই বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে ওঠার রহস্যময় কাহিনি। রাজনীতির ছায়ায় আশ্রিত থেকে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার এমন বিস্ময়কর ঘটনা আজকাল আর নতুন কিছু নয়।
এমনই এক আলোচিত চরিত্র চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোসলেমউদ্দীন, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘চিনি মুসলেম’ নামে পরিচিত। এক সময়ের সাধারণ রিকশাচালক থেকে কোটিপতি হয়ে ওঠার তার এই যাত্রা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
চিনি মোসলেমের জন্ম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ঈসামতী আলীনগর গ্রামে। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একসময় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকায় রিকশা চালাতেন। এরপর জীবিকার তাগিদে বোকারির কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে একসময় বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
যদিও চিনি মোসলেম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মাসুদ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সংযোগই কি তাকে রাতারাতি ধনী করে তুলেছে?—এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মনেই।
সংবাদপত্রের অনুসন্ধানী টিমের হাতে চিনি মুসলেমের নামে থাকা বিপুল সম্পদের তালিকা উঠে এসেছে, জালালাবাদ পশ্চিম খুলশী হাউজিং: এখানে তার নামে ২০০ শতক জমি রয়েছে। কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকা: ১০ কাঠার দুটি প্লট, যার বাজারমূল্য কোটি কোটি টাকা। বৃহৎ ডেইরি ফার্ম: বছরে বিপুল অঙ্কের লেনদেন হয়।
ওয়ার্ড, নিজাম রোড, চট্টগ্রাম:ওয়ার্ড নিজাম সোসাইটির রোড নম্বর ৩-এ একটি বহুতল ভবনের মালিক তিনি, তবে সেখানে তার পরিবার বসবাস করে না। এসব সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার এক আত্মীয়কে।
এত অল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিছু সচেতন নাগরিক ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
একজন রিকশাচালক কীভাবে এত দ্রুত কোটিপতি হয়ে উঠলেন? এই সম্পদের উৎস কী? তিনি কি কোনো অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন? নাকি রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে অস্বাভাবিক উন্নতি করেছেন?
এই রহস্য উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply