1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ঈগল পরিবহনের চাকার নিচে দুই সিএনজি, চন্দনাইশে বউ-শ্বাশুড়ি সহ নিহত তিন নিবন্ধনপ্রত্যাশী ১৪৩টি দলের মধ্যে বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২টি। বহুল প্রতীক্ষার শেষে প্রথমবারের মতো গঠিত হলো ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কমিটি, রাজপথে আনন্দ র‍্যালী ডাকসুর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত, সিনেট সদস্য হচ্ছেন ৫ ছাত্র প্রতিনিধি। রাজশাহীতে বহিষ্কৃত ডিবি হাসানের সহযোগীদের চার্জশিটে অন্তর্ভুক্তির দাবি চট্টগ্রাম নগরীতে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার বাঘাইছড়িতে বিজিবির অভিযানে অবৈধ সেগুন কাঠ জব্দ বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে আল- আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক’র ‘তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ উদযাপন। শঙ্খ নদীতে ভেসে আসল অর্ধগলিত যুবকের লাশ

মা দিবস -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • সময় রবিবার, ১১ মে, ২০২৫
  • ২৭৯ পঠিত

সম্পাদকীয়ঃ

মা একটি হৃদয় জুড়ানো ডাক। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ শব্দটি ধ্বনি ‘ম’ দিয়ে শুরু অথবা শব্দটির মাঝে ‘ম’ ধ্বনি আছে। যেমন ইংরেজিতে মাকে বলে মাদার, মাম্মি কিংবা মম; হিন্দিতেও মাকে ‘মা’ বলে ডাকা হয়; পাঞ্জাবিরা বলে মাই কিংবা মাতাজি; উর্দুতে বলা হয় আম্মি; জার্মানরা বলে মুটার বা মাটার; ইতালিয়ানরা বলে মাডর, পর্তুগিজ ভাষায় মাকে বলা হয় মা; আলবেনিয়ানরা বলে মেইমি; গ্রিকরা বলে মানা; ড্যানিশরা বলে মোর; আইরিশরা বলে মাতাইর; পোলিশরা বলে মামা কিংবা মাটকা; রোমানিয়ানরা বলে মামা বা মাইকা ইত্যাদি। সুতরাং দেখা যায়, বিশ্বের বেশির ভাগ ভাষায়ই মাকে সবাই ‘ম’ ধ্বনি উচ্চারণের মধ্য দিয়েই ডাকে। মায়ের ভালোবাসাকে যেমন দেশের সীমানা দিয়ে, জাতিভেদ দিয়ে কিংবা বর্ণ–গোত্রের বিভাজনে আলাদা করা যায় না, তেমনি বোধ হয় মা ডাককেও কেউ আলাদা করতে পারেনি।
আমাদের সবার জীবনের একমাত্র ভরসার জায়গা হলো মা। আর মায়ের সম্মানে যে বিশেষ দিন উদ্যাপন করা হয়, তা হলো মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক ‘মা দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হয়। সে হিসেবে এ বছর ১১ মে বিশ্ব মা দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। দিনটিতে মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করেন সন্তানসন্ততি। তাঁকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান, ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরেন। মা দিবসের উদ্দেশ্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। দিবসটির গুরুত্ব আসলে কী? কেন উদ্যাপন করা হয় মা দিবস? তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
আসলে সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে দেখা যায়। পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদাকে উচ্চাসীন করেছে। ইসলাম ধর্মে ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়ষী’, অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকে অধিক গরিমাযুক্ত। খ্রিষ্টধর্মেও রয়েছে ‘মাদার মেরির’ বিশেষ তাৎপর্য। প্রথম থেকেই মেরি খ্রিষ্টানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন একজন নারী ও খ্রিষ্টধর্মের সর্বাধিক প্রতিভাবতী ও পবিত্রা সত্তারূপে বিবেচিত হন। বৌদ্ধরা বলেন যে মায়ের মঙ্গল শোধ করা কতটা কঠিন এবং মা হয়ে ওঠেন পুত্রের মঙ্গল ও ঋণের প্রধান উৎস। অর্থাৎ সব ধর্মে ও দেশে চিরকালই মায়ের ভূমিকা এক ও অভিন্ন। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। শুধু একজন নারী নন, মায়ের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানা যায়, মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিশ্বে মা দিবস উদ্যাপনের প্রথম উদ্যোগ নেয় যুক্তরাজ্যের জনগণ। তখন প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে উদ্যাপনের রেওয়াজ চালু হয়। মাদারিং সানডেতে ছেলেমেয়েরা পারিবারিক চার্চ বা মাদার চার্চের উদ্দেশে পবিত্র যাত্রা শুরু করতেন। দিবসটি পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ করে দিত এবং ঘরের ভৃত্যদের ছুটি দেওয়া হতো। বিশেষ করে মেয়েদের ছুটি দেওয়া হতো, যেন তাঁরা মায়েদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এর অনুসরণে ইংল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা জনগোষ্ঠী মা দিবস চালু করে সতেরো শতকে। পরে তা বেশি দিন টিকে থাকেনি। এরপর ১৮৭০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী এক মহীয়সী নারী অনুভব করেন যুদ্ধে আহত, নিহত, হারিয়ে যাওয়া সন্তানের মায়েদের বুকের ক্রন্দন, তাঁদের অন্তরাত্মার বেদনা। বিশ্বকে তিনি শোনান এক সাম্যের বাণী। সন্তানের জন্য জগতের সব মায়ের ভালবাসায় কোনো ভিন্নতা নেই। জাতি, ধর্ম, বর্ণের শ্রেষ্ঠত্বের বিভেদ টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো মায়ের বুকের ধন কেড়ে নেওয়া অন্যায়। তিনি এর প্রতিবাদে বিশ্বের সব মাকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ১৮৭২ সালের ২ জুনকে শান্তির জন্য মা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। এ ছাড়া তিনি দিবসটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য চেষ্টা করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। কারণ, তাঁর এ প্রচেষ্টা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরকেন্দ্রিক। তবে তাতে দমে যাননি, তিনি তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস উদ্যাপিত হতে থাকে। ১৮৮০ ও ’৯০-এর দশকেও মা দিবস প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলে। তবে স্থানীয় পর্যায়ের বাইরে তাঁর আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করেনি। এদিনের কর্মসূচিতে দুটি সুন্দর বিষয় ছিল। এগুলো হলো—মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া এবং মাকে কিছু উপহার প্রদান করা।
আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটি উদ্যাপনের কৃতিত্ব যাঁর প্রাপ্য, তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরের অধিবাসী অ্যানা জারভিস। জুলিয়া ওয়ার্ডের পথ ধরে সুদীর্ঘ ৩৭ বৎসর সংগ্রামের পর ১৯০৭ সালের ১২ মে প্রথমবারের মতো ‘মা দিবস’ পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে উদ্যাপিত হয়। অ্যানা জারভিস তাঁর মা অ্যানা মারিয়া রিভস জারভিসের মৃত্যুদিনটি একটু অন্যভাবে পালন করার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর মা অ্যানা একজন শান্তিকামী সমাজকর্মী ছিলেন এবং নারীদের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করতেন। একদিন ছোট মেয়েটির সামনেই ধর্মপ্রাণ অ্যানা হাত জোড় করে বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ, তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটা তাদের অধিকার।’ মায়ের প্রতিটি শব্দ মনে রেখেছিলেন অ্যানা। আর সে কারণেই অ্যানার মৃত্যুর দিনটিকে (১২ মে, ১৯০৭) সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। অবশেষে অ্যানার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। পরে ১৯৬২ সালে দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। সঙ্গে উপহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা কার্নেশন ফুল। যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি মা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হতে থাকে।
বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দিবসটি উদযাপিত হলেও অন্যান্য দেশে আবার ভিন্ন ভিন্ন দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। যেমন বাংলাদেশে আজ (১১ মের) দিবসটি উদযাপিত হলেও কসোভোয় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম রোববার মা দিবস উদযাপিত হয়। নরওয়েতে ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় রোববার, জর্জিয়ায় ৩ মার্চ দিবসটি উদ্যাপিত হয়। যুক্তরাজ্যে ৬ মার্চ দিবসটি উদযাপিত হয় এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে ১২ আগস্ট এবং সিঙ্গাপুরে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিবসটি উদযাপিত হয়। তার মানে মা দিবসের নির্দিষ্ট কোনো একক তারিখ বা দিন ধার্য নেই। এটি একটি বিশেষ দিন, যখন সন্তানেরা মাকে বিশেষভাবে সম্মান ও ভালোবাসা জানায়। তাই তারিখ যা-ই হোক না কেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত রোববারেই দিবসটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই প্রতিবছর বিশ্ব মা দিবস উদযাপনের বিস্তৃতি ঘটছে। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে এই দিবস উদযাপিত হয়।
বিশ্বের সব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট