
কৃষি জমির উৎপাদিত ফসলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পাওয়ায় জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে চলছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া,চন্দনাইশ,দোহাজারী সাতকানিয়া সহ এ অঞ্চলের কৃষি জমির মালিকরা।
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ।
এ দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষি কাজের মাধ্যমে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অনেক কৃষক ফসলে কাঙ্ক্ষিত ফলন ও ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এবং উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় লাভ কম হওয়ায় তাদের কৃষি জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন ও সেই জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন।
এর ফলে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এতে করে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।
কৃষি জমি কমে যাওয়ায় দেশে ধান, গম, ডাল, সবজি ইত্যাদি খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
এতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি জমিতে কংক্রিট ও ইটের নির্মাণের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, জলাধার কমে যাচ্ছে, বৃষ্টির পানি শোষণের পথ বন্ধ হচ্ছে এবং ভূমি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
কৃষি থেকে মানুষ সরে গেলে স্থানীয় কৃষি-নির্ভর অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশাংকা করা হচ্ছে।
কৃষক, শ্রমিক, পরিবহনকর্মী, ও বাজারের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।
কৃষিজমিতে বাড়ী নির্মাণের কারণে জলাবদ্ধতা, বন্যা, ও ভূমিক্ষয় বাড়ছে।
শহর ও গ্রামে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিচ্ছে,
ভূমি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
কৃষি ও আবাসিক জমির পার্থক্য বিলুপ্ত হওয়ায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা আইনগত সমস্যার সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে কৃষক ও ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন
বর্তমানে কৃষিপণ্যের বাজারমূল্য কম এবং
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নানা ধরনের অভাব চলমান রয়েছে।
সেচ ও সারসহ উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
তা ছাড়া বর্তমানে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে।
কৃষকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাব তৈরি হওয়ার আগে এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সমস্যা অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সবজি বিক্রেতা এনামুল হক এনাম।
কৃষকদের যদি প্রণোদনা প্রদান করে
সরকার কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, ন্যায্যমূল্য ও ফসল বীমা চালু করতে পারে, যাতে কৃষক ক্ষতির ভয়ে জমি বিক্রি না করেন সে বিষয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
উন্নত বীজ, ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা, মাটি পরীক্ষা, এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষিকে লাভজনক করা প্রয়োজন।
অনুমতি ছাড়া কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
আজ যদি কৃষকরা জমিতে ফসলের পরিবর্তে ইট-পাথরের বাড়ি গড়ে তোলেন, তাহলে আগামী প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা চরম সংকটে পড়বে। তাই সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, কৃষক ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে কৃষিজমি রক্ষা ও কৃষিকে লাভজনক করার উদ্যোগ নিলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
তাছাড়া দেশের অধিকাংশ জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় অনাবাদী জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের দূর্যোগের সৃষ্টি হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
লেখক:
সভাপতি :
এপেক্স ক্লাব অব পটিয়া।
যুগ্ন সদস্য সচিব :
পটিয়া সচেতন নাগরিক ফোরাম।
Leave a Reply