
মোঃ শহিদুল ইসলাম
বিশেষ সংবাদদাতাঃ
চীনের আনহুই প্রদেশের শিল্পসমৃদ্ধ শহর উহু সিটির মেয়র শু ঝি (Xu Zhi) মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। টাইগারপাসস্থ চসিক ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠককে চট্টগ্রাম–উহু সিটির মধ্যে শিল্প, প্রযুক্তি ও বন্দরকেন্দ্রিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই শহরের মধ্যে অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণ, বন্দর আধুনিকায়ন এবং স্মার্ট লজিস্টিক্স অবকাঠামোসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে যৌথ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে মেয়র শু ঝির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উহু ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনোলজিকাল ডেভেলপমেন্ট জোনের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটির ডিরেক্টর ঝৌ হাও, মিউনিসিপ্যাল ফরেন অ্যাফেয়ার্স অফিসের ডিরেক্টর লিউ শিংরং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যুরোর ডিরেক্টর কাও জিয়ে, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যুরোর ডিরেক্টর ঝৌ ওয়েই, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর দং লিয়াং, চেরি হোল্ডিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শু হুই, উহু শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ঝাং ঝাও এবং রুইইয়ান ইন্টারন্যাশনাল রিসোর্সেস ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
চসিকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সাদাত তৈয়ব।
বৈঠকের শুরুতে চট্টগ্রামের সামগ্রিক শিল্পবিন্যাস, চসিকের চলমান উন্নয়ন, বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং মানবসম্পদের সক্ষমতা নিয়ে মেয়র শু ঝিকে অবহিত করা হয়। জবাবে উহু সিটির মেয়র শু ঝি চট্টগ্রামকে “বাংলাদেশের কৌশলগত অর্থনৈতিক কেন্দ্র” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “উহু সিটি বর্তমানে চীনের দ্রুত অগ্রসরমান ও প্রযুক্তিনির্ভর শহরগুলোর একটি। নতুন এনার্জি যান,অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণ এবং বন্দর প্রযুক্তি উন্নয়নে আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা এখানে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতায় গভীর আগ্রহী।”
তিনি জানান, উহু সিটিতে চেরি অটোমোবাইল, বিওয়াইডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কোম্পানি রয়েছে, যারা বিদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী। চট্টগ্রামে অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট, গবেষণা ও উদ্ভাবন ল্যাব, স্মার্ট লজিস্টিক্স অবকাঠামো এবং পরিবেশবান্ধব নতুন এনার্জি গাড়ির যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেয়র শু ঝি আরও বলেন, “জাহাজ নির্মাণ শিল্পে উহু সিটির প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে। চট্টগ্রামের শিপবিল্ডিং সেক্টর দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং এই খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি ও যৌথ সহযোগিতার বাস্তব সুযোগ রয়েছে।” তিনি বন্দর আধুনিকায়ন, কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্মার্ট পোর্ট ম্যানেজমেন্টেও উহু সিটির আগ্রহের কথা জানান।
উহু–চট্টগ্রাম সিটির সম্পর্ক গভীর হলে শিক্ষা বিনিময়, পর্যটন, ম্যানুফ্যাকচারিং, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং শিল্প সম্প্রসারণ—এসব খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “এই পার্টনারশিপ দুই শহরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর শিল্প ও বন্দর এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও সরকারের নানা উদ্যোগ এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, “উহু সিটির বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানগুলো চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। এ সহযোগিতা শিল্পায়ন, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে।”
বৈঠকে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে যৌথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আদান–প্রদানের বিষয়ে সম্মত হয়। চসিক আশা প্রকাশ করে, উহু সিটির সঙ্গে এ সহযোগিতা চট্টগ্রামের শিল্পখাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
Leave a Reply