নারীর জীবনে খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা ”মাসিক” । ৯/১০কিংবা ১১ বছর বয়সে মাসিক শুরু মানেই সুস্থতা আর সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা।
মানব শিশু জন্মের আদ্যপ্রান্ত হিসেব নির্ণীত হয় এই মাসিক চক্রকে কেন্দ্র করে। মাসিকের সময় মানে একটি ডিম্বাণু তথা একটি জীবন সৃষ্টির সম্ভাবনা।
অথচ এই স্বাভাবিক ঘটনাটিকে ঘিরে সমাজে ট্যাবুর কোন শেষ নেই। পরিবারে শুরুতেই বুঝানো হত এই ঘটনাটি ভীষণ লজ্জা আর গোপন রাখার যার কোন মানে নেই। বরং এই লজ্জাকে ঢাকতে যেয়ে মাসিকের ওই সময়টাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি না জানার কারণে অনেক নারীকে অসুস্থ হয়ে মাতৃত্বহীনতা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু বরণও করতে হয়েছে।
অনেক শিক্ষিত মানুষকেও বলতে শুনেছি ”প্রয়োজনে আমার স্ত্রী মরে যাবে তবুও ব্রেস্ট এবং সন্তান জন্ম দানের জটিলতায় কোন পুরুষ ডাক্তার নয়।” মনে মনে ভীষণ অবাক হয়েছি। ডাক্তারের দায়িত্ব কেবলই চিকিৎসা করা সেখানে কে ডাক্তার কি আসে যায় । বড় বড় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে পুরুষ ডাক্তারদের সহযোগী হিসেবে নারী ডাক্তার, নার্স এবং আয়া থাকে, অন্য কিছু ভাবার কোন সুযোগ নেই। গুটি কয়েক ডাক্তার যারা খারাপ তাঁরা যে কোন পেশায় গেলে খারাপই হতেন।
বেশ কয়েক বছর আগে বিলবোর্ডে এড দেখেছিলাম বাবা তাঁর কিশোরী কন্যার হাতে সেনেটারি প্যাড তুলে দিচ্ছেন। ভীষণ আশা জাগানিয়া মনে হয়েছিল। বাবা তাঁর কন্যাকে, ভাই তাঁর বোনকে, পুত্র তাঁর মা’কে প্যাড কিনে দিবে এটাতো ভীষণ স্বাভাবিক একটি ঘটনা এখানে লজ্জার কিছু নেই।
প্রতি পরিবারে মাসিক বাজারের সাথে সেনেটারি প্যাডও থাকবে। লজ্জা থেকে নিষ্কৃতি পেতে এখনো পর্যন্ত সেনেটারী প্যাড অন্য কাগজে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নারীর স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ অহেতুক লজ্জায় কেন পরিবর্তিত হল কারণ জানা নেই।
নারীর মাসিকের জন্য এখন প্যাড ছাড়াও মিন্সত্রুয়াল কাপ, টেম্পুন সহ নানাবিধ প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব যেয়ে পৌঁছায়নি। অনেকে লজ্জা কিংবা অর্থ সাশ্রয়ী বলে পুরনো কাপড় ব্যাবহার করছেন যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে আমাদের দেশের আরেক মেধাবী কন্যা পাটের উপর পরীক্ষা চালিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে প্যাড বানিয়ে ভীষণ প্রশংসিত হচ্ছেন। তাঁকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারা যাচ্ছে না ।
অভিবাদন
বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা
ও ড. মুবারক আহমেদ খান |
আপনাদের যুগান্তকারী উদ্ভাবন নিশ্চয়ই মা ও কন্যাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে |
আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ) আয়োজিত ৪র্থ ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড পুরষ্কার জিতেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) সহকারী বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা।
ফারহানা পাটের সেলুলোজভিত্তিক স্যানিটারি প্যাড তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবনের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন।
তাঁর এই পুরস্কার প্রাপ্তি বাংলাদেশের নারী বিজ্ঞানীদের আরো অনুপ্রাণিত করবে।
এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল—মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সম্মত বিশ্ব সম্প্রদায়।
Dr.মোবারক আহমেদ খানের (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা) সঙ্গে সমন্বয় করে ফারহানা সুলতানা ম্যানুয়ালি পাটের সেলুলোজভিত্তিক ডিসপোজেবল প্যাড তৈরি করে এর পরীক্ষা চালিয়েছেন
Leave a Reply