অবিভক্ত ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক মননের মনীষী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, শিক্ষা স¤প্রসারণের অগ্রদূত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অদ্য ২৪ অক্টোবর কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র উদ্যোগে মোমিন রোডস্থ এতিমখানা প্রাঙ্গণে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সঞ্চালনায় সভায় অতিথি আলোচক ছিলেন খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, ইউএসটিসি’র প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ডাঃ প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, সমাজসেবা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম’র উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম, চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুল আলম খোকা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন, চট্টগ্রাম ডেকোরেটার্স মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ সাহাবউদ্দীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো: খোরশেদ আলম, অধ্যক্ষ ড. মোঃ সানাউল্লাহ, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতীব অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র ও যুব উদ্যোক্তা এ.এম.এস. ইসলামাবাদী গাজী, কদম মোবারক এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, সমাজকর্মী নেছার আহমেদ খান, কদম মোবারক এম.ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জহুর, সাংবাদিক আকাশ ইকবাল, হাফেজ মাওলানা ইকরাম হোসেন, আজাদ নিজামুল হক, শ্রমিক নেতা কামাল উদ্দীন, সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ, মুজিবুল হক সিদ্দিকী বাচ্চু, সোহেল মোহাম্মদ ফকরুদ্দীন, বোরহান উদ্দীন গিফারী, মিনহাজুর রহমান শিহাব প্রমুখ।
সভায় প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মানবতাবাদে উজ্জীবিত, অহিংস মতবাদের ধারক, সুশিক্ষার প্রসারে দক্ষ এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক ও সংগঠক, উদার চিন্তার ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মনীষী। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী এবং বিপ্লবীও ছিলেন তিনি।
আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী প্রখ্যাত আলেম হওয়া সত্বেও ধর্মান্ধ ছিলেন না বরং যুক্তিবাদি, বিজ্ঞান মনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক ছিলেন। চলমান অসংযত ধর্মীয় উন্মাদনার নগ্নতান্ডব প্রতিহত করতে নতুন প্রজন্মের ইসলামাবাদীর জীবনাদর্শ অনুসরণ অপরিহার্য।
বক্তারা আরো বলেন, স্বকীয় সাধনা, চিন্তা, ত্যাগী জীবনসংগ্রাম ও ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের ফলশ্রুতিতে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। তিনি উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ দর্শনের পথপ্রদর্শক ছিলেন। ধর্মান্ধতাকে পরিহার করার পাশাপাশি প্রতিহিংসা-নৃশংসতা-সহিংসতা নির্মূলে এবং প্রত্যেক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা ও সম্প্রীতির অমূল্য বন্ধনকে কার্যকর করতে ইসলামাবাদীর প্রদর্শিত পথ অনুকরণ প্রয়োজন। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর রাজনীতি-সমাজনীতি সংঘাত ও প্রতিহিংসার ছিলো না বরং ঐক্য, দেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম, আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বয় ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। ব্যক্তিগত স্বার্থ, অতিমাত্রায় দলীয়করণ, বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতির বিপরীতে তিনি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির আলোকবর্তিকা। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী অসহযোগ, বঙ্গভঙ্গ রদ ও খিলাফত আন্দোলনে ও সক্রিয় ছিলেন। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। কৃষক প্রজা আন্দোলনের পরিচালক ছিলেন। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩৮ সাল থেকে জিন্নাহ’র দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানবাদের সমালোচক ছিলেন ইসলামাবাদী। প্রাদেশিক সংসদে তিনি বাংলায় বক্তৃতা ও বিতর্ক সম্পাদন করতেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পশ্চাৎমূখী মুসলিম সমাজকে কুপ্রথামুক্ত ও সময়োপযোগী করে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী করে তুলতে অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর কর্ম ও ধ্যান ছিল সাধারণ মানুষের বহুমাত্রিক উন্নয়ন। নৈতিক মূল্যবোধ, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে জ্ঞান দান, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদান, মাদ্রাসা এবং এতিমখানাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনক। বাল্যবিবাহ ও নারী-নির্যাতন রোধ, সমাজের কু-সংস্কার, সুদের ব্যবসা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে আজীবন উদগ্রীব ছিলেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের সমাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, ইতিহাস এবং আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞান সম্পর্কে অর্থকরী বিদ্যা শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তৎসময়ে তিনি ইংরেজী শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি অগ্রগামী হওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। মুসলিম সমাজকে শিক্ষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যে অগ্রগামী করা, সাহিত্যের বিকাশ, কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষের প্রভূত উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। তিনি এতদ্ঞ্চলে জাতীয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা তার অন্যতম কীর্তি।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন কে কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদ’র সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। ২৪ অক্টোবর মাওলানা ইসলামাবাদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এছাড়া কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন, জেয়ারত, দোয়া মাহফিল ও তবারুক বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
Leave a Reply