পলাশ সেন, চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি:
বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও চট্টগ্রাম নগরে গত কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। দিনে ও রাতে মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাতবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টা পার হলেও আসে না। আবার বিদ্যুৎ এলেও কিছুক্ষণ থাকার পরই আবার চলে যায়। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। এদিকে গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গত দুদিন আর্দ্রতা বেশি থাকায় নগরবাসী গরমে বেশ কষ্ট পাচ্ছেন। এদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বাড়িতেও তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। শহরের আসকার দিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম বলেন, গত রাতে প্রচণ্ড গরমের কারণে আমার ২ বছর বয়সী মেয়ে এক মুহূর্তের জন্য ঘুমাতে পারেনি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যানও চলছিল না। দিনে ৫/৬ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। তিনি বলেন, লোডশেডিং সকাল ৮টায় শুরু হয়, তারপর সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ আসে। তারপর আবার সকাল ১১টায় যায় এবং ১২টায় আসে। সারাদিন প্রতি ঘণ্টায় এভাবে চলতে থাকে। ফেরদৌসী বেগমের মতো নগরীর কোতোয়ালী, হালিশহর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, ব্যাটারির গলি, আসকার দীঘির পাড়, আন্দরকিল্লা, বাকলিয়া, শুলকবহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর বারো কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আহমেদ জানান, দিনে ৪-৫ বার লোডশেডিং হচ্ছে তাদের এলাকায়। তিনি বলেন, তাপমাত্রা খুব বেশি হওয়ায় আমরা ফ্যান ছাড়া ঘরে এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। লোডশেডিংয়ের সময় আমাদের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। বেসরকারি কলেজের প্রভাষক ও বাকালিয়া এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৮-১০ বার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ। আমার ৭ বছরের মেয়ে গত ২ দিনের প্রচণ্ড গরমে রাতে ঘুমাতে পারেনি, অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে মোট বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে বলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে পিডিবি চট্টগ্রামের (দক্ষিণ অঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী (ডিস্ট্রিবিউশন) রেজাউল করিম লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কিছুটা কম ছিলো। এইটি আমাদের সমস্যা না। আমাদের কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। এই কারনে আমরা প্রয়োজনীয় লোড পাচ্ছি না। তাই বিদ্যুৎতের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় গড়ে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আছে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, তাছাড়া শিল্পকারখানাতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। তাই আমরা লোডশেডিংয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। এদিকে গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,তাদের ব্যাবসা বানিজ্য সবকিছুই নির্ভর করছে বিদ্যুৎতে উপর। পবিত্র রমজানে ও ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। ফেইসবুকে ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নেচিজনরা। টেরিবাজার ব্যাবসায়ীরা বলেন সারাবছর রোজা মাস দিকে চেয়ে থাকি।এই একটা মাস আমাদের কিছু ব্যাবসা হয়। কিন্তু প্রচন্ড লোডশেডিং কারনে কাষ্টমার গরমে হিমশিম খেয়ে উঠছে। বিগত বছর তুলনায় এইবার লোডশেডিং এর কারনে ঈদ বাজারে প্রভাব পরেছে।
Leave a Reply