1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো ১৪২ দেশ, সর্বশেষ জ্যামাইকা পটিয়ার সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপির জন্মদিন উদযাপন করলেন পটিয়া উপজেলা কৃষকলীগ। বঙ্গবন্ধু মানব কল্যাণ পরিষদ এর চট্টগ্রাম বিভাগের কমিটি ঘোষণা মাদকের ভয়াল থাবায় গ্রাস তরুন প্রজন্ম, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে পথশিশুরা-মোহাম্মদ আলী ইপিজেড থানা কমিউনিটি পুলিশিং এর উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামে র‍্যাবের নামে চাঁদা আদায়, গ্রেপ্তার ৪ বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ সম্পন্ন চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে কৃষক লীগের ৫২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল সম্পন্ন

ছোট গল্পঃ আয়শার দিনলিপি – কনক কুমার প্রামানিক

  • সময় শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১
  • ২০২ পঠিত

আয়শার দিনলিপি 

কনক কুমার প্রামানিক
রাত থেকে টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়েই চলেছে, থেকে থেকে দমকা হাওয়া এসে গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। সে কারণে মফস্বলের বাজারটিতে দেরীতে সব দোকানপাট খুলছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দোকানের বারান্দায় টিনের চালার নিচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে আয়শা পাগলী। দোকান খুললে বৃষ্টিতে ভিজে দোকানে দোকানে ভিক্ষা করে সে। ছাতা কেনার মত সামর্থ্য ওর নেই। সঙ্গে তার দুটি ছেলে। বড়টার বয়স বছর চারেক আর ছোটটা খুব ছোট। মাস ছয়েক হবে। ওদের পিতৃ পরিচয় আয়শার জানা নেই। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ওরা ভিক্ষা করে চলেছে। এ বাজারের সবাই তার পরিচিত। সে কারণেই সবার কাছে আবদারও বেশী। নাছোড়বান্দা আয়শা কারো কাছ থেকে ভিক্ষা না নিয়ে সে সরে না। আয়শার কোন বাড়িঘর নাই। এই বাজারেই থাকে সে। বয়স ওর বেশী নয় ২৩-২৪ বছর হবে। কিন্তু বেশ বয়স্ক দেখায় তাকে। ছিপছিপে গড়ন। ফর্সা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। বড় অযত্নে চুলগুলো উষ্কখুষ্ক আর জটা ধরে গেছে। কিছুকাল যাবৎ উকুনেরাও সেখানে পরম নিশ্চিন্তে বাসা বেঁধেছে। অবসর সময়ে দূরের বটগাছটার নিচে বসে বসে উকুন মারে সে। ছোট ছেলেটা এখন তার বুকের সাথে একেবারে লেপ্টে ঘুমাচ্ছে আর বড় ছেলেটা পিছু পিছু ওড়না ধরে ঘ্যান ঘ্যান করছে কিছু একটা কিনে দেয়ার জন্য। নাকে ওর প্রচন্ড সর্দি। তা সুরসুর করে নাক গলে মুখের দিকে বের হয়ে আসছে। আবার জোরে নাক টেনে সেগুলো ভেতরে টেনে নিচ্ছে সে। হঠাৎ মায়ের ধমক খেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার সে আগের মত মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলো। বাধ্য হয়ে ছেলেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে দেয় আয়শা। ছেলে দুটোকে খুব ভালোবাসে সে। ওদের নিয়ে পথঘাট আর এখানে সেখানে সময় কাটে তার। ভিক্ষা করতে করতে একটি চা স্টলের সামনে এসে খুব অনুনয় করে ছোট ছেলেটার দুধের জন্য। নাছোড়বান্দা আয়েশার জন্য দোকানি ছোট্ট বোতলে সামান্য একটু দুধ ঢেলে দেয়। টিপটিপ বৃষ্টিতে মা ছেলে তিন জনই ভিজে কাকভেজা  হয়ে গেছে। নোংরা কাপড় চোপড়গুলো বৃষ্টিতে ভিজে ঝবঝজে হয়ে গেছে। বুকের মধ্যে ছোট ছেলেটাকে ঢেকে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা। তবুও ভিজে গেছে সে। এখুনি বোধহয় জ্বর আসবে। তবু সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।  গরীর অসহায় বলে ওদের বুঝি রোগ বালাইও নাই? যদি থাকেও তাহলে ওদের ইমুনিটি হয়তো খুব বেশী। বড়লোকেরা এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর-সর্দি সহ আরো বড় কিছু হয়ে যেত। পিচঢালা রাস্তার ঢালু কিছু অংশে বৃষ্টির পানি জমে আছে। বড় ছেলেটা সে পানিতে লাফালাফি করে খেলছে। মা ধমক দিলে আবার ছুটে আসছে।
একজন লোক আয়শার সামনে এসে বললো- তোর তো দুইটা ছেলে। বড় ছেলেটাকে আমার কাছে দিবি। আমি পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবো। আমার কাছে খুব ভালো থাকবে।
সহসাই আয়শা পাগলী কাচুমাচু  হয়ে সজোরে ছেলেদেরকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো-
না। দিমু না। কি জন্যে দিমু। হামি কত কষ্ট করে ছোলগুলাক মানুষ করোচি। তোক দেয়ার জন্যে। হামাক দেকপে কে? বড় হলে অরাই হামাক কাম কাজ করে খিলাবে। অরাই হামাক দেকপে।
কথাগুলো বলে খুব আদর করে ছেলেদের চোখে মুখে বার কয়েক চুমু খেলো সে। লোকটি আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়। রোদ ওঠেছে। বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ আগে। পরনের জামাগুলো গায়েই শুকিয়ে গেছে। রোদের তিব্রতায় জানান দিচ্ছে এখন ভর দুপুর। বড় ছেলেটার  খুব ক্ষুধা পেয়েছে। কান্নাকাটি করছে খাবারের জন্য। কোলের ভিতর থেকে ছোট ছেলেটাও উসখুস করছে খাবার জন্য। গরীবের ক্ষুধা বেশী। কোন কিছুতে কি ক্ষুধাকে আটকানো সম্ভব? একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে পৃথিবীটা প্রতিনিয়ত চলছে ক্ষুধার তাড়নায়। সুকান্ত বাবু তো বলেছেন- ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। ময়লাযুক্ত অনেকগুলো থালা প্লেট পরিস্কার করা আর টিউবয়েল থেকে কয়েক বালতি পানি এনে দেওয়ার শর্তে হোটেলের কিছু বাসী উচ্ছিষ্ট খাবার জোটে কপালে। বোতলের দুধটুকু ছোট ছেলেটাকে খাইয়ে মা ছেলে পরম তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খায়। এরপর বড় বটগাছটার নিচে কিছু সময় জিরিয়ে নেয় তারা। সবেমাত্র চোখটা একটু ধরে এসেছে। তখনই চিল্লাতে থাকে ছোট ছেলেটা। পেট ভরেনি ওর। তাই কান্না করছে। ওর কান্না থামাতে মুখে একটা স্তনে ভরে দেয়। পরম নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে শুয়ে চুক চুক করে চুষতে থাকে মায়ের উন্মুক্ত স্তন। আশপাশে বিয়ে শাদী বা কোন অনুষ্ঠানাদি থাকলে কপালে কিছুটা ভাল মন্দ খাবার জোটে। সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে ফিরে রাতে কোন একটা দোকানের সরু গলির মধ্যে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ে তিনজন। মাঝে মধ্যেই কুকুর, পুলিশ আর বৃষ্টির চরম উৎপাতে পড়তে হয় ওদের। প্রায় রাতে সমাজের বিকৃত মানষিকতার কিছু মানব সন্তান তাদের বিভৎস যৌন লালসা তার উপর চরিতার্থ করে। নারকীয় নোংরা সে খেলায় ব্যথায় কুকড়ে ওঠে আয়শা। প্রচন্ড চিৎকার আর তিব্র আর্তনাদ বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে। নোংরা হাত দিয়ে চেপে রাখে মুখ। গুমরে উঠে সেখানকার পরিবেশ। ভারী হয়ে আসে আকাশ বাতাস। আদিমতার চরম সুখ নিয়ে ছুড়ে ফেলে তাকে। নগ্ন শরীর জুড়ে রেখে যায় হিংস্রতার ছাপ আর অনাগত মানব অস্তিত্ব। অবশ হয়ে আসে পুরো শরীর, অসহ্য ব্যথা। মরার মত পড়ে থাকে সে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। তবুও উঠতে সায় দেয় না শরীরটা। কষ্ট হলেও উঠতে হবে। আবার সে বেরিয়ে পড়ে প্রতিদিনের মত। এ তার রোজকার দিনলিপি। রাতের আঁধারে মদের নেশায় চুর কোন পশুর বিকৃত যৌন লালসাতে অসাবধানতায় নিক্ষেপিত ভ্রুণের প্রষ্ফুটিত ফসল ছেলে দুটির ভার যে তার শুধু একার। ওদের বাবা নেই। তাই নিত্যকার মত দোকানে দোকান হাত বাড়ায় সে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট