ভোর সকাল, মাথার উপর ফ্যানের শীতল হাওয়া বইছে, নিচে পালঙ্গে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মোটা কাতার নিচে বেশ আরাম করে ঘুমানো টা আমার নিতান্ত কাজ। দুনিয়া উল্টে গেলে ও কাতা টা মাগার ছাড়াছাড়ি নাই। সে সুবাদে আম্মার থেকে একটা বেশ ভালো খেতাব পেলাম – গন্ডার।
যাই হোক দিন টা বৃহস্পতিবার, ভোর ছ’টা নাগাদ বেশ জম্পেশ ঘুম আসছে। জম্পেশ ঘুমের মধ্যে সমান তালে জম্পেশ স্বপ্ন ও দেখছিলাম। তবে সুখে থাকলে ভুতে কিলাই সেটা তো বেশ পুরনো কথা। স্বপ্নের ফাইনাল রাউন্ডে প্রায় শেষ হয়ে আসছে ঠিক সে সময় এলার্ম টা ও বেজে উঠলো। হয়ে গেলো ঘুমের দফারফা! বেশ কিছু দিন ধরে চোখে সমস্যা। এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ কালা চাশমা লাগিয়ে হিরো আলম মাফিক স্টাইল নিয়ে হাটা চলা করছে। আমাকে ও সেই রোগে ধরছে। ঘুম থেকে উঠে নামাজ কালাম শেষ। নাস্তাটা ও করা হয়ে গেলো সাড়ে ছ’টা নাগাদ। এবার বাকি গন্তব্যে ছোটার। রেডি হয়ে চলে গেলাম কোচিং এ ক্লাস করাতে। আমি না গেলে শিক্ষার্থীদের হয় না। চলে গেলাম কোচিং এ ক্লাস করাতে। সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্লাস শেষ। শেষ করে বের হতে না হতেই বন্ধু কল আর কল ধরতেই চিটাইংগে ভাষায় প্রশ্ন,“ হডে রে.? ” আমার ও জবাব, “আছি ত, কোচিং অত আইস্সি দি। এহন বাইর অই দি ” এই বলতে না বলতে বলে উঠলো, “চল ঘুরতে যাবো। ” আমি জিগাইলাম, “কোথায়.? ” তারা বলিলো, “দেখি কই যাইতে পারি ”
বহু দিন পর বন্ধু দের সাথে কোথাও যাওয়ার সুযোগ হলো। কাজ ও নাই সে সুবাদে আম্মুকে বলে ছুটে চললাম তাদের সাথে। গন্তব্য – পাশের গ্রাম ধলঘাট। এলাকার বেশ ঐতিহ্যবাহী গ্রাম এবং বীর পুরুষদের গ্রাম ও বটে। এইখানেই জন্ম ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আর সুর্য সেন নামক মহান হস্তি দের৷ গাড়ি করে ছুটে চলিলাম চোখে চশমা লাগিয়ে। বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে চোখের যন্ত্রণা টা ও মুছে গেলো৷ তবে সাবধানতার জন্য চশমা টা লাগানো ছিলো। ঘন্টা খানেক পর পৌঁছালাম গন্তব্যে। আহা! কী অপরূপ দৃশ্য। মাঠ জুড়ে সারি সারি ধানের ক্ষেত, ফসলের লীলা খেলা। তার উপর আকাশের নীল আভা। যেন প্রকৃতির সৌন্দর্য এইখানে এসেই থমকে গেছে। বন্ধুরা ছবি তোলাতে মশগুল আর এদিকে এলোপাতাড়ি কাপড় চোপড়ের কারণে আমি কয়েকটা মাত্র তুলে ক্ষান্ত তার উপর চোখের কারণে সুন্দর ও লাগছিলো না। বেশ অনেক ক্ষণ ঘুরে ক্ষুধাটা ও বেশ লেগেছে পেটে। যাত্রা হলো এবার আবার বাড়ির দিকে, এক ছাদ খোলা মিশুক গাড়ি পেয়েছি আসার সময়। এইটাই হইলো আমাদের আসার বাহন। বাহনে করে এসেই পেট পুড়ে নাস্তা টা খেয়ে নিলাম। অবশেষে আরেকটি সোনালী দিনের সমাপ্তি।
শেষে বাসায় এসে আরো একটি আক্রোশ থেকে গেলো, “ইসস! এমন টা যদি প্রতিদিন হতো, বন্ধু দের সাথে। ” একটা সময় ছিল বন্ধুদের থেকে জিজ্ঞেস করতাম, “বন্ধু কখন দেখা করবি.? ” আর এখন জিজ্ঞেস করতে হয়, “বন্ধু কবে দেখা করবি.? ” আহা! জীবন কত পরিবর্তন শীল। বন্ধু গুলো ও সময়ের তালে হারিয়ে যায় স্মৃতির অন্তরালে।
লেখকঃ মোঃ শাহাদাত হোসেন (ফাহিম)
Leave a Reply