উপ-সম্পাদকীয়ঃ
পল্লী চিকিৎসকদের ‘নন গ্রাজুয়েট রেজিস্টার্ড ডাক্তার’ হিসেবে স্বীকৃতি, প্রতিবেশী দেশের মতো একাডেমিক বোর্ড গঠন, উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে সনদ দেওয়া, চেম্বারে ওষুধ রাখার অনুমতি ও ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায়ের সব স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটিতে গ্রাম ডাক্তার-পল্লী চিকিৎসকদের সদস্য রাখা অতি জরুরী মনে করি।
বিগত সরকার তাদেরকে সামাজিক হেয় এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের সাথে ফ্যাসিবাদী আচরণ সহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়েছে। তারা ভূয়া ডাক্তার নয়। তাদের প্রশিক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি রয়েছে , সনদ রয়েছে।
অথচ ১০ লক্ষাধিক গ্রাম ডাক্তার-পল্লী চিকিৎসক সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামগঞ্জে মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের অবহেলিত পল্লী-চিকিৎসক ও তাদের স্বজনদের বাঁচাতে হবে। দেশের ৮০ ভাগ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রাম ডাক্তার-পল্লী চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট আইনের আওতায় এনে সরকারি স্বীকৃতি দান করলে দেশের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে। কারণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৃণমূল জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পল্লী চিকিৎসকগণের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পল্লী চিকিৎসকদের ন্যূনতম এসএসসি পাশ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো উচিত। এতে পল্লী চিকিৎসকদের মর্যাদা বাড়বে এবং মানুষের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিগণও পল্লী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির তালিকায় স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল (১১.১) সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পূর্বতন আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) প্রণীত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি তারা পুনর্মূল্যায়ন করে নাই। দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, পুষ্টি, শিশু ও মাতৃমঙ্গল নিশ্চিত করলেও জনসংখ্যানীতি যুগোপযোগী করে পল্লী চিকিৎসকদের নিয়োগ ও স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রেখেছে।
বিগত সরকার ৩০ মে মন্ত্রিসভায় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির খসড়া অনুমোদন করলেও। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে প্রায় ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রম চালু করে এ সব কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ১৩ হাজার ৫০০ কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে পল্লী চিকিৎসকদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে পুরোপুরি চালু করতে পারেন। কারণ দেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পল্লী চিকিৎসক ও কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা ব্যাপক।
এদিকে দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য ৫৭ হাজার রেজিস্টার্ড চিকিৎসক রয়েছেন। এদের সিংহভাগই থাকেন শহরে। উপজেলা প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ লোকের জন্য চিকিৎসক আছে সর্বোচ্চ ১০ জন। যুগ যুগ ধরে চিকিৎসকদের এ বিরাট শূন্যতা পূরণ করে আসছে গ্রাম ডাক্তার ও পল্লী চিকিৎসকেরা। তারা রোদে- পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাত বিরাতে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিয়ে বিরাট জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করেছেন।
১৯৭৭-৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১ বছরের এমএফপিসি কোর্স চালু করেছিল। পরে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় বন্ধ হয়ে যায় ওই পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণ কোর্সটি। তবুও থেমে নেই বিভিন্ন পল্লীচিকিৎসক সংগঠন গুলো। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রাম ডাক্তারের যতগুলি সংগঠন রয়েছে অনুসন্ধানে দেখা যায় বিশেষ করে দেশের জনসংখ্যা প্রতিরোধ,প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মাদকাসক্ত মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন,স্যানিটেশন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় সক্রিয় ভাবে দেশের বিভিন্ন পল্লী চিকিৎসক সংগঠন গুলো ভুমিকা রেখে চলেছেন। এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
একটি সুস্থ সবল জনগোষ্ঠীই শুধু দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ জন্যে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা, রোগ প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা। সে লক্ষ্যে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসকদের প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্টগণ আরো সচেষ্ট হবেন বলে আশা করছি।
লেখক পরিচিতি :
চিকিৎসক, লেখক ও
সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ)
বাংলাদেশ ন্যাপ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
Leave a Reply