1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
প্রবাসী সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন- প্রসাসের ইফতার অনুষ্ঠানে আরিফুর রহমান আশ্রয় প্রকল্পের জায়গা দখল করে জোরপূর্বক বাড়ি নির্মাণ, প্রতিবাদ করায় প্রাণনাশের হুমকি। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়াতে ২৬ টন চিনিসহ দুটি কভার্ডভ্যান জব্দ আটক-১ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধা ও শহীদ যোদ্ধাগণের পরিবারবর্গকে সংবর্ধনা প্রদান। জাতীয় গনহত‌্যা দিব‌সে চট্টগ্রাম সা‌র্কিট হাউ‌জে আ‌লোচনা সভা। সমন্বয়ক‌দের সহ‌যো‌গিতায় বি এন পি প‌রিবা‌রের জ‌মি জোড় পূর্বক দখল ক‌রে নেন আওয়ামীলীগ নেতা। দেশবাসিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তরুণ ব্যবসায়ী খোকন মিয়া। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ১৫টি হুইল চেয়ার প্রদান” সেনাবাহিনীর বরাদ্দকৃত ডাল আত্মসাতের চেষ্টায় বাকলিয়ায় ১৭ টন ডালসহ দুই প্রতারক আটক বাংলাদেশ ইয়ূথ ক্যাডেট ফোরাম (বিওয়াইসিএফ) পটিয়া উপজেলার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত

যদি ফোরাতের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা যায় তবে সে জন্য দায়ী থাকবে। – হজরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু

  • সময় সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪
  • ২৯২ পঠিত

 

আজ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা. এর পবিত্র শাহাদাত দিবস।
হিজরি নববর্ষে কখনোই খুশিতে উদযাপন করেনি মুসলিম জাহান।

এবার ওমর রা. এর সম্পর্কে কিছু তথ্য আবারও স্মরণ করা যাক।

১. উমর রা. এর ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার মুসলিমদের জন্য প্রকাশ্যে নামাজ পড়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়।

২. নামাযের জন্য আযান দেওয়ার ব্যবস্থা হযরত ওমর রা. এর মতামতের ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হয়।

৩. ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফিজ শহিদ হলে, হযরত ওমর রা. এর পরামর্শেই, হযরত আবু বকর রা. প্রথম আল কোরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

৪. যে কথা দিয়ে তিনি তাঁর রাজত্ব শুরু করেছিলেন, তা কখনই পুরানো হবে না। তিনি বলেছিলেন-

‘আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে দুর্বল, সেও আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে শক্তিশালী হবে, যতক্ষণ না আমি তার জন্য তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করি; কিন্তু যে সবচেয়ে শক্তিশালী, তাকে আমি দুর্বল মনে করব, যতক্ষণ না সে আইন মেনে চলে।’

ডেভিড স্যামুয়েল মারগুলিওথ উমর রা. সম্পর্কে বলেছেন, ‘এর চেয়ে ভালোভাবে রাষ্ট্রর কার্যকারিতার সংজ্ঞা দেওয়া অসম্ভব।’

৫. খেলাফত লাভের পর ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ভাষণে, জাতির উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি দুর্বল, আমাকে শক্তি দাও। হে আল্লাহ! আমি রূঢ় মেজাজি, আমাকে কোমলপ্রাণ বানাও। হে আল্লাহ! আমি কৃপণ, আমাকে দানশীল বানাও।’

৬. তিনিই সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয় বিভাগ হিসেবে গঠন করেন।

৭. তিনি রা. শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন।

৮. রাতের বেলা তিনি মদিনার জনসাধারণের অবস্থা যাচাইয়ের জন্য ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হতেন।

৯. শাসন ও খেলাফতের দ্বায়িত্বের ভার যে কতোটা তীব্র, সেটি তাঁর একটি উক্তি থেকেই বোঝা যায়। উইলিয়াম মুইর তার ‘দ্য ক্যালিফাট: ইটস রাইজ, ডিক্লাইন এন্ড ফল’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘উমর রা. কে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমার মা যদি আমাকে জন্ম না দিতেন না, তবে তার বদলে আমি এই ঘাসের ডালপালা হতাম!’

১০. মাঝেমাঝেই তিনি মদিনার রাস্তায় এবং বাজারে ঘুরতেন চাবুক হাতে। ঘটনাস্থলেই অপবাদকারীদের শাস্তি দিতে প্রস্তুত থাকতেন। তাই তখন আরবের একটি বিখ্যাত প্রবাদ ছিল এমন-

১১. ‘ওমরের চাবুক অন্যের তরবারির চেয়েও ভয়ানক।’

১২. হিজরি বর্ষপঞ্জি তিনিই প্রণয়ন করেন।

১৩. সে সময়ে শ্রেষ্ঠ কবিদের প্রায় সব কবিতা তাঁর মুখস্থ ছিল। জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রেরো উমর রা. এর অবদান প্রচুর। তিনি আরবি কবিতা পাঠ এবং তা সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন। আরবি ভাষার শুদ্ধতা রক্ষার ব্যাপারে তিনি খুব সচেতন ছিলেন।

১৩. তাঁর শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। তিনি পূর্বের নাসরানী রীতি বদলে ইয়াহুদীদেরকে জেরুজালেমে বসবাস ও উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন।

১৪. খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সে সময় অমুসলিমদের উপাসনালয় রক্ষায় একটি রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন এবং ঘোষণা করেন, তাদের গির্জা ধ্বংস করা যাবে না এবং কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না। তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো বস্তু, তাদের ধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ ও তাদের সম্পদের কোনো ক্ষতি বা হামলা করা যাবে না।

১৫. হযরত ওমর রা. এর শাসনকালেই তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি, পারসিক সাসানীয় সাম্রাজ্য এবং রোমান বাইজান্টানীয় সাম্রাজ্যকে মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যে এবং বাইজান্টানিয় শাসনাধীন এশীয় ও আফ্রিকান অঞ্চলসমূহে মুসলিম শাসনের বিস্তার করে।

১৬. পারস্য বিজয় উমর রা. সবচেয়ে বড় সামরিক অর্জন। এসময় পুরো পারস্য সাম্রাজ্য জয় করে নেওয়া হয়।

১৭. উমর প্রায় ৩৬,০০০ শহর বা দুর্গ জয় করেন এবং বিজিত অঞ্চলে ১,৪০০ মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

১৮. তিনি আটার বস্তা নিজে কাঁধে বহন করে প্রজাদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। একদিন বায়তুল মালের একটি উট হারিয়ে গেলে তিনি প্রখর রৌদ্রের ভিতর ছুটাছুটি করেন এই দৃশ্য দেখে একজন প্রজা বলেন অকাজ আপনার না আপনি অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন। কিন্তু তিনি বলেন সরকারি মাল রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।

১৯. রাজকোষ থেকে তিনি মাত্র দুই দিরহাম দৈনিক গ্রহন করতেন।

২০. তার শাসনামলে সর্বাধিক অঞ্চল মুসলমানদের অধীনে আসে। তিনি ইতিহাসে অর্ধজাহানের বাদশা হিসেবে পরিচিত।

২১. ওমর রা. কে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবর্তক মনে করা হয়।

ওমর রা. এর নাম প্রচলিত দুয়েকটি ঘটনা।

ক.

একজন ইরানি শাহজাদাকে গ্রেফতার করে আনা হলো মদীনায়। মুসলমানদের অনেক ক্ষতি সাধন করেছে সে। অংশগ্রহন করেছে মুসলমান বিরোধী বহু যুদ্ধে। হযরত ওমর রা. জল্লাদকে ডাকলেন। ফায়সালা করার পূর্বে শাহজাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোনো অন্তিম ইচ্ছে আছে? সে বললো, হ্যাঁ, আমার পানির তৃষ্ণা হচ্ছে। পানি চাই। হযরত ওমর রা. তার জন্য পানির ব্যাবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন। তাকে পানি দেয়া হলো। সে পান করতে পারছিলো না। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো? পানি পান করছো না কেনো? শাহজাদা বললো, আমীরুল মুমিনীন! আমার ভয় হচ্ছে! পানি পান করতে গেলেই জল্লাদ হয়তো আমার গর্দান কেটে নিবে।

হযরত ওমর রা. তাকে অভয় দিয়ে বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। এই পানি পান করার আগে তোমাকে হত্যা করা হবে না। তখন শাহজাদা কৌশল অবলম্বন করে পানির পেয়ালাটি মাটিতে ফেলে দিলো। মাটিতে পড়ে পানি শুকিয়ে গেলো।

সে বললো, হে আমীরুল মুমিনীন ! আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি আপনার ওয়াদার ওপর অবিচল থাকবেন। আমি যেহেতু পানি পান করিনি তাই আপনি কৃত ওয়াদার কারণে আমাকে হত্যা করতে পারবেন না।

হযরত ওমর রা. সংকটময় পরিস্থিতির মুখে পড়ে গেলেন। একদিকে ইসলামের ভয়ঙ্কর শত্রু দাঁড়িয়ে, অপর দিকে নিজের ওয়াদা। বিবেক তো বলে, শত্রুর কথা না শুনে বরং তাকে হত্যা করে দাও, যেহেতু সে ইসলামের দুশমন। অথচ ওয়াদা পূরণ করাও ইসলামে জরুরী। আর ওমর রা. তো সে ওমর! যিনি “আশাদ্দুহুম ফী আমরিল্লাহি ওমর“-এর মিসদাক।

হযরত ওমর রা. কিছু সময় ভেবে বললেন, হ্যাঁ, তুমি যথার্থই বলেছো। আমি ওয়াদার খেলাফ করবো না। যেহেতু তুমি পানি পান করোনি তাই আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি না। সুতরাং তোমাকে হত্যার নির্দেশ স্থগিত করে দিলাম। তুমি এখন মুক্ত।

ইসলামের এমন ভয়ঙ্কর শত্রুর হত্যার আদেশ রহিত হওয়ায় মুসলমানগন হতাশ হয়ে গেলেন। সবাই বলাবলি করতে লাগলো, শাহজাদা চতুরতার মাধ্যমে রক্ষা পেয়ে গেলো। কিন্তু আসল ব্যাপার ছিলো ভিন্ন।
ক্ষমা পাবার পর সে বলতে লাগলো, হে আমীরুল মুমিনীন ! এ হেনো বাহানা আমি এ জন্য করেছি যে, যদি আমি জল্লাদকে দেখে কালিমা পড়ে নিতাম তবে বিশ্ববাসী বলতো, আমি শাহজাদা হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যূ ভয়ে কালিমা পড়েছি। তাই আমি একটি বাহানা করে জীবন রক্ষা করেছি। আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেননি। এখন আমি স্বাধীন !

হে আমীরুল মুমিনীন! আমি আমি অকপটে স্বীকার করছি, যে ধর্মে ওয়াদা রক্ষা করাকে এতোটা মূল্যায়ন করা হয়। আমি সে ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নিজেকে ধন্য করতে চাই। অতঃপর সে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলো। বর্ণিত আছে, হযরত ওমর রা. অনেক বিষয়ে তাঁর থেকে পরামর্শ গ্রহন করতেন। ইসলামের সেই শত্রু হয়ে গেলেন খিলাফাতের বড় সৈনিক।

খ.

খলিফা বের হলেন পুরো পবিত্র নগরী ঘুরে দেখার জন্য। তার সঙ্গে বের হলেন সোফ্রোসিয়াফ। নামাজের সময় হলো। নামাজের জন্য সোফ্রোনিয়াস তাকে গির্জায় আহ্বান জানালেন। কিন্তু তিনি একবাক্যে উত্তর দিলেন ‘না’। আবার অবাক হলেন রোম সম্রাট সোফ্রোনিয়াস। খলিফাতুল মুমিনিন তাকে জানালেন, আমি যদি এ মুহূর্তে এ গির্জায় নামাজ আদায় করি, তাহলে মুসলিমরা এ গির্জা ভেঙে মসজিদ বানিয়ে ফেলবে। এতে খ্রিস্টানরা তাদের ইবাদত ও তাদের পবিত্র স্থান হারাবে।

সেই গির্জা এখনো আছে, যার নাম, ‘চার্চ অব দ্য হলি সেপালচার।’

গ.

হযরত ওমর রা. একদিন রাতে এক গৃহ থেকে গুনতে পান যে হযরত ওমর পরিবার নিয়ে কত আরামে আছে। আর আমার স্বামী যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিদেশে কত দিন থাকে। তার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তিনি বিরহ কাতর স্ত্রীর নিকট ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। এবং ঘোষণা দেন ছয় মাসের বেশি কোন সেনাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

ঘ.

২০ হিজরীতে, দ্বিতীয় খলীফা ওমর রা. এর শাসনামলে বিখ্যাত ছাহাবী আমর ইবনুল আছ রা. এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম মিশর বিজিত হয়। মিশরে তখন প্রবল খরা। নীলনদ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। সেনাপতি আমরের নিকট সেখানকার অধিবাসীরা অভিযোগ তুলল, হে আমীর! নীলনদ তো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম পালন ছাড়া প্রবাহিত হয় না। তিনি বললেন, সেটা ক তারা বলল, এ মাসের ১৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা কোন এক সুন্দরী যুবতীকে নির্বাচন করব। অতঃপর তার পিতা-মাতাকে রাযী করিয়ে তাকে সুন্দরতম অলংকারাদি ও উত্তম পোষাক পরিধান করানোর পর নীলনদে নিক্ষেপ করব।

পরবর্তীতে, আমীরুল মুমিনীন ওমর রা. এর পক্ষ থেকে মিশরের নীলনদের প্রতি চিঠি লিখলেন। ‘যদি তুমি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয়ে থাক, তবে প্রবাহিত হয়ো না। আর যদি একক সত্তা, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তবে আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন।’

অতঃপর আমর রা. পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করলেন। পর দিন শনিবার সকালে মিসরবাসী দেখল, আল্লাহ তা‘আলা এক রাত্রে নীলনদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন। তারপর থেকে আজও পর্যন্ত নীলনদ প্রবাহিতই রয়েছে। কখনো শুষ্ক হয়নি।

ঙ.

এক খৃষ্টান বাদশাহ চারটি প্রশ্ন লিখে ওমর রা. এঁর কাছে পাঠালেন এবং আসমানী কিতাবের আলোকে উত্তর চাইলেন।

১ম প্রশ্নঃ একই মায়ের পেট হতে দু’টি বাচ্চা একই দিনে একই সময় জন্ম গ্রহন করেছে এবং একই দিনে ইন্তেকাল করেছে তবে তাদের একজন অপরজন থেকে ১০০ বছরের বড় ছিলো। তারা দুইজন কে? কিভাবে তা হয়েছে?

২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোন্ স্থানে সূর্যের আলো শুধুমাত্র একবার পড়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সূর্যের আলো সেখানে পড়বে না?

৩য় প্রশ্নঃ সে কয়েদী কে, যার কয়েদ খানায় শ্বাস নেওয়ার অনুমতি নেই আর সে শ্বাস নেওয়া ছাড়াই জীবিত থাকে?

৪র্থ প্রশ্নঃ সেটি কোন কবর, যার বাসিন্দা জীবিত ছিল এবং কবর ও জীবিত ছিল আর সে কবর তার বাসিন্দাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে এবং কবর থেকেতার বাসিন্দা জীবিত বের হয়ে দীর্ঘকাল পৃথিবীতে জীবিত ছিল?

হযরত ওমর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে ডাকলেন এবংউত্তর গুলো লিখে দিতে বললেন। ইবনে আব্বাস রা. উত্তরগুলো লিখেন।

১ম উত্তরঃ দুই ভাই ছিলেন হযরত ওযায়ের আ. এবং ওযায়েয আ. একই দিনে জন্ম এবং একই দিনে ইন্তেকাল করা সত্বেও ওযায়েয আ. ওযায়ের আ. থেকে ১০০ বছরের বড়। কারণ হল, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর আবার কিভাবে জীবিত করবেন? হযরত ওযায়ের আ. তা দেখতে চেয়েছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁকে ১০০ বছর যাবত মৃত্যু অবস্থায় রাখেন এরপর তাঁকে জীবিত করেন। যার কারণে দুই ভাইয়ের বয়সের মাঝে ১০০ বছর ব্যবধান হয়ে যায়।

২য় উত্তরঃ হযরত মুসা আ. এর মু’জিযার কারণে বাহরে কুলযুম তথা লোহিত সাগরের উপর রাস্তা হয়ে যায় আর সেখানে সূর্যের আলো পৃথিবীর ইতিহাসে একবার পড়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত আর পড়বে না।

৩য় উত্তরঃ যে কয়েদী শ্বাস নেওয়া ছাড়া জীবিত থাকে, সে কয়েদী হল মায়ের পেটের বাচ্চা, যে নিজ মায়ের পেটে বন্দী থাকে।

৪র্থ উত্তরঃ যে কবরের বাসিন্দা জীবিত এবংকবর ও জীবিত ছিলো, সে কবরের বাসিন্দা হল হযরত ইউনুস আ. আর কবর হল ইউনুস আ. যে মাছের পেটেছিলেন সে মাছ। আর মাছটি ইউনুস আ. কে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে। মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসার পর ইউনুস আ. অনেক দিন জীবিত ছিলেন। এরপর ইন্তেকাল করেন।

শাহাদাতের ঘটনা।

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. তখন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা। কিছু সাথী নিয়ে মদীনার একটি পথ ধরে চলছেন। পথের পাশেই একটি দোকান চোখে পড়লো তাঁর। দোকানটি অগ্নি উপাসক আবু লুলুর।

খলীফা প্রবেশ করলেন দোকানটিতে। আবু লুলুকে প্রশ্ন করলেন তোমার পেশা কী? আবু লুলুর উত্তর- আমি লৌহকার এবং ছুতার। পেষণযন্ত্রও (জাঁতা) তৈরি করি।

আমীরুল মুমিনীন তাকে লক্ষ করে বললেন, আমি শুনেছি তুমি নাকি বলেছো, আমি এমন পেষণযন্ত্র তৈরি করতে সক্ষম যা বাতাসে চলবে। শুনে অগ্নি উপাসক বলল, আমি আপনার জন্য এমন কিছু করব যা সারা দুনিয়ার মানুষ জানবে।

হযরত উমর রা. এবার সঙ্গীদেকে লক্ষ করে বললেন, দেখ সে কিন্তু আমার সাথে অঙ্গীকার করেছে। এ কথা বলে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লেন।

কিছু দিন পর আবু লুলু একটি খঞ্জর তৈরি করল। সেটির হাতল ছিলো মাঝখানে, ফলা দুইপাশে। উভয় দিকে ধারালো সেই খঞ্জরটি সে পুরো এক মাস বিষের মধ্যে ডুবিয়ে রাখলো। যেন সেটি দিয়ে কাউকে আঘাত করলে স্বল্প আঘাতেও বিষক্রিয়া রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং আঘাত মামুলি হলেও যেন আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই না পায়।

এরপর কোনো এক রাতের আঁধারে সে মসজিদে নববীতে সবার অগোচরে প্রবেশ করে মেহরাবের ভেতরে লুকিয়ে রইল।

হযরত উমর রা. অন্যান্য দিনের মত সেদিনও ফজরের নামজের জন্য মসজিদের প্রবেশ করেন এবং মসজিদে অবস্থানরত ব্যক্তিদের জাগিয়ে দিতে ‘আসসালাত’ ‘আসসালাত’ বলতে লাগলেন। জামাতে জন্য মুসল্লিবৃন্দ প্রস্তুত হলেন।

তখনকার দিনে বর্তমান সময়ের মত মসজিদে এত আলোর ব্যবস্থা ছিলো না। সারা মসজিদে একটি বা দুটি বাতি জ্বলতো। হযরত উমর রা. নামাজ শুরু করলেন। আবু লুলু তখনো মেহরাবে লুকিয়ে। সে মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায়।

আমিরুল মুমিনীনকে আঘাত করার সে দ্বিতীয় রাকাতকে বেছে নিলো। যেন মহল্লার সবাই জামাতে থাকে এবং তার পালিয়ে যেতে সহজ হয়।

আমিরুল মুমিনীন দ্বিতীয় রাকাত শুরু করলেন। সুরা ফাতিহা পড়ছেন- আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।… ইয়াকা নাসতাঈনু’ পর্যন্ত পৌঁছতেই আবু লুলু হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়লো তাঁর উপরে।

মুহুর্তেই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করল তাঁকে। একটি বুকে, অপরটি পার্শ্বদেশে এবং শরীরের বিভন্ন স্থানে আরো কয়েকটি।

সবচেয়ে গুরুতর আঘাতটি ছিলো তাঁর তলপেটে। নাভির নিচের অংশে পুরো খঞ্জরটি ঢুকিয়ে হেচকা টানে ফেঁড়ে ফেলে দিয়ে ছিলো পেট। জখম এতটাই বড় হয় যে, এতে আমীরুল মুমিনীনের অন্ত্রের কিছু অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে। তিনি একটি চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এবার আবু লুলুর পালানোর পালা। নামাজের কাতার থাকা মুসল্লীদের বিষাক্ত খঞ্জর দিয়ে ডানে বায়ে আঘাত করতে করতে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে।

এ সময় মোট তেরজন মুসল্লীকে আঘাত করে আবু লুলু। এর মধ্যে সাতজনই তৎক্ষণাত শহাদাত বরণ করেন। তাকে ধরতে অন্যরা পিছু নিলে রক্তাক্ত খঞ্জর নিয়েই সে ঘুরে দাঁড়ায় এবং কেউ কাছে এলেই তাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়।

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. তার নিকটবর্তী হয়ে গেলে তাকেও আঘাত করতে উদ্যত হয় আবু লুলু। তিনি একটু পিছিয়ে আসেন এবং নিজের গায়ের চাদরটি খুলে ছড়িয়ে সেটি ছুড়ে দেন আবু লুলুর দিকে।

চাদরটি তার শরীরের উপর গিয়ে পড়ে এবং শরীর আবৃত করে ফেলে। এক পর্যায় তার পুরো শরীর জড়িয়ে যায়।

এবার সাহাবীরা তার দিকে এগিয়ে যান। আবু লুলু বুঝে ফেলে, সে ধরা পড়ে যাচ্ছে এবং আর রেহাই পাবার সুযোগ নেই। এবার নিজের গলায় বিষাক্ত ছুরিটি চালিয়ে দেয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারপর সংক্ষিপ্ত দুটি সুরা দিয়ে নামাজ শেষ করা হয়।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমরা আমীরুল মুমিনীনের কাছে গিয়ে দেখি তার ক্ষতগুলো থেকে অনর্গল রক্ত ঝরছে। আমি রক্ত বন্ধ করার জন্য আমার হাতটি তার তলপেটে চেপে ধরতে চাইলাম।

কিন্তু ক্ষতটি এত বড় ছিলো যে আমার হাত তাঁর পেটের ভিতরে ঢুকে যায়। ততক্ষণাৎ আমি নিজের পাগড়ি খুলে আব্বজানের ক্ষতস্থানে বেঁধে দিই। ততক্ষণে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন। আমরা তাঁকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিই।

আমীরুল মুমিনীন শয্যশায়ী। আমরা তাঁর জ্ঞান ফেরানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু কিছুতেই তার জ্ঞান ফিরছিলো না।এভাবেই অনেক সময় কেটে গেল। সূর্য উদিত হলো।

একজন বুদ্ধি করে তাঁর কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে বলতে শুরু করলেন- ‘আসসালাত ইয়া আমীরুল মুমিনীন’। একসময় আমীরুল মুমিনীন চোখ খুললেন। ডানে এবং বায়ে তাকালেন। উপস্থিত সবার চোখে অশ্রু পর্দার উপার থেকেও চাপা কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।

নিজের শরীর ব্যাথায় ভারী। পরনের পোশাকে ছোপ ছোপ রক্ত। এমতাবস্থায় জ্ঞান ফিরে আমীরুল মুমিনীনের প্রথম প্রশ্ন- ‘মুসল্লীরা নামাজ পড়তে পেরেছেন? তোমরা সালাত আদায় করছ?’

সবাই সমস্বরে জবাব দিল, জি, আমীরুল মুমিনীন আমরা নামাজ আদায় করেছি। তাদের জবাব শুনে তিনি বললেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’

হযরত উমর রা. এবার পুত্র আবদুল্লাহ রা. কাছে অজুর পানি চাইলে সবাই ধারণা করলো হয়তো তিনি পান করার জন্য পানি চাইছেন। কিন্তু না, তিনি অজুর পানি চেয়েছেন।

তিনি বললেন, আমাকে অজুর পানি দাও। আমি ফজরের নামাজ শেষ করতে পারিনি।

পানি আনা হলো। আমীরুল মুমিনীন অজু শেষ করে বললেন, আবদুল্লাহ আমাকে বসিয়ে দাও। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, আব্বাজন আপনি এভাবেই নামাজ আদায় করতে পারেন।

হযরত উমর রা. নামাজ শেষ করলেন। নামাজের পর ইস্তেগফার করলেন এবং জিকির-দোআ পাঠ করলেন।

এবার উপস্থিত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে তাঁর প্রশ্ন- আমাকে আঘাত করেছে কে? নামাজ শেষ করার আগ পর্যন্ত তিনি নিজের আঘাত সম্পর্কে একটি প্রশ্নও করেননি।

উপস্থিত কেউ উত্তর দিল, মুগীরা বিন শুবার দাস অগ্নিপূজক আবু লুলু আপনাকে আঘাত করেছে। একথা শুনে তিনি বললেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ। এমন ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে যে এক আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করেনি।’

তিনি কোনো মুসলিমের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হওয়ায় এবং মুসলমানদের অন্তদ্বন্দ্বের কারণ না হওয়ায় এই শুকরিয়া আদায় করেন।

তাঁর শাহাদাতে পর পবিত্র মদীনার নারীরা আক্ষেপ করে বলত, হায়! আমীরুল মুমীনীনের বদলে যদি আমার সন্তান মারা যেত!

মৃত্যুসজ্জায় হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,

কারও যেন নামাজ ছুটে না যায় এবং দাস দাসীদের প্রতি খেয়াল রাখো।

এরপর বলেছেন,
তোমরা নেতা হওয়ার আগেই ইলম শেখো।

ইমাম শাফী রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যখন অল্প বয়স পেরিয়ে যায়, তখন তার থেকে অনেক ইলম ছুটে যায়’।

ইমাম আবু উবায়েদ রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা নেতা হওয়ার আগে, শৈশবেই ইলম শিখে ফেলো। কারণ, নেতা হওয়ার পর অহংকার তাকে ছোটদের কাছ থেকে ইলম শিখতে বাঁধা প্রদান করে। ফলে সে গণ্ড মূর্খই থেকে যায়’।

তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গ্রহণ করার আগে, তোমরা তোমাদের হিসাব কষে নাও।

কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘উমর ফারুক’ কবিতার কিছু অংশ দিয়ে শেষ করা যাক।

তিমির রাত্রি –‘এশা’র আজান শুনি দূর মসজিদে
প্রিয়া-হারা কান্নার মতো এ-বুকে আসিয়া বিঁধে!

আমির-উল-মুমেনিন,
তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি – জানে না মুয়াজ্জিন!
তকবির শুনি শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি,
বাতায়নে চাই – উঠিয়াছে কি রে গগনে মরুর শশী?
ও-আজানা ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান?
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারই সে আহ্বান?

আবার লুটায়ে পড়ি!

‘সেদিন গিয়াছে’–শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি!
উমর! ফারুক! আখেরি নবির ওগো দক্ষিণ-বাহু!
আহ্বান নয় – রূপ ধরে এসো! – গ্রাসে অন্ধতা-রাহু
ইসলাম-রবি, জ্যোতি আজ তার দিনে দিনে বিমলিন!
সত্যের আলো নিভিয়া – জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ!
শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের
দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের,
ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এসো তুমি সেই শমশের ধরি,
আর একবার লোহিত-সাগরে লালে লাল হয়ে মরি!

ছবি – আয়া সোফিয়া মসজিদে ওমর রা. এর নামের ক্যালিগ্রাফি।

 

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট