নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সম্প্রতি চ.সি.ক এর আওতাধীন কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট যাত্রী পারাপারে ইজারার দরপত্র আহবান করা হলে দরপত্রে অংশ নেন সাবেক ছাত্রনেতা ও পারিবারিক ভাবে জলযান পরিবহন ব্যবসায় সম্পৃক্ত খলিলুর রহমান নাহিদ।
তবে ঘাট ইজারার শর্তানুযায়ী একজন মাঝিকেই সেই ঘাট ইজারায় অংশ নিতে হয়। খলিলুর রহমান নাহিদের বাবার আমল থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে আসছিলো আমির হোসেন। আমির জানায় তার ছোট ভাই একজন তালিকাভূক্ত মাঝি, ফলে আমির তার ছোট ভাই মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে তার সদস্যপদের কাগজের কপি এনে খলিলুর রহমান নাহিদকে সরবরাহ করেন। বিনিময়ে ঘাট ইজারা পেলে মাসিক ভিত্তিতে কিছু টাকা মাহমুদকে দেয়ার মৌখিক চুক্তিও হয়।
মাহমুদ এর কাগজপত্র সহ নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে মাহমুদ মাঝির নামে দশ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় ঘাটের ইজারা দরপত্র জমা দেন খলিলুর রহমান নাহিদ। অন্যদিকে মিজানুর রহমান নামের আরেক এক ব্যক্তি চসিক’র সদরঘাটের ইজারা নিতে সকল দরপত্র ক্রেতাদের সাথে আপোষ করে শুধুমাত্র নিজের দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র জমা দেয়। যার একটির দর ছিলো দুই লক্ষ টাকা আর অপরটির দর ছিলো চার লক্ষ টাকা। শেষ মূহুর্তে খলিলুর রহমান নাহিদের দশ লক্ষ টাকার দরপত্র জমা হওয়ায় মিজানুর রহমানের মনোপলি ভেঙ্গে যায়। যেখানে মিজানুর মাত্র চার লাখ টাকায় ঘাটটি ইজারা নিতে চেয়েছিলো সেখানে খলিলুর রহমান নাহিদ রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা দিলো দশ লক্ষাধিক টাকা, যা ২য় সর্বোচ্চ দরদাতার চেয়ে দ্বিগুন বেশী । এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মিজানুর রহমান ও তার কথিত সহযোগীরা।
সেদিনের দরপত্রটি দরপত্র জমা দেয়ার সময়ই একদফা বাঁধার সম্মুখীন হয় নাহিদের পক্ষে দরপত্র জমা দিতে যাওয়া প্রতিনিধি। একপর্যায়ের নাহিদের সেই প্রতিনিধিকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করা হয় মর্মে থানায় জিডি’ও করা হয়। এরপরও মিজানুর রহমান অর্ধেকের কম মূল্যে সদরঘাট ইজারা নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। সেই চক্রান্তর অংশ হিসেবে ১১ এপ্রিল সাম্পান মাঝিদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ দরদাতার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির অভিযোগ তুলে। তবে তার সত্যতা না মেলায় চসিক নাহিদের দরপত্র বৈধতা বহাল রাখে। এর দুইদিন পর দৃশ্যপটে ১ম বার এসে হাজির হয় মাহমুদ হোসেন। মাহমুদের দাবী সে নাকি তার নামে নেওয়া দরপত্রের বিষয়ে কিছুই জানে না। তার অজ্ঞাতে তারই কাগজ জমা দিয়ে দরপত্র জমা দেয়া হয়। অথচ দরপত্র জমা দেয়ার দিন থেকেই অন্যরা সেই দাবি তুললেও মাহমুদ হোসেন টু শব্দটিও করেননি। এতোদিন কেন নীরব ছিলেন? মাহমুদের ব্যক্তিগত কাগজ কিভাবে নাহিদের কাছে গেছে সেই বিষয়ে মাহমুদ দাবী করছে তার কাগজপত্র চুরি করে কেউ এই কাজ করেছে। অথচ বাস্তবতা হলো মাহমুদের আপন বড় ভাই আমীরকে মাহমুদই ফটোকপি করে কাগজ গুলো দিয়েছিলো । তাহলে এখন মাহমুদ এই কথা বলছে কেন? এই প্রশ্নের জবাব জানতে অনেকবার মাহমুদ হোসেন ও তার পরিবারের নাম্বারে কল দিলেও কেউ সাড়া দেননি। অথচ মিজানুর রহমানের তত্বাবধানে একাধিক সাংবাদিক মাহমুদ হোসেনের বক্তব্য ঠিকই পেয়েছে।
মাহমুদের এই বক্তব্যের পেছনে কি রহস্য সেটা জানতে আমরা যোগাযোগ করি মাহমুদের আপন বড় ভাই আমীর হোসেনের সাথে। তিনি বলেন , “নাহিদ ভাইদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আমিই পরিবারে স্বচ্ছলতা আনি। আমার ছোট ভাই মাহমুদের নিজের একটা সাম্পানো ছিলোনা । আমিই তাকে আমার সাম্পানটা চালাতে দেই। সেই সাম্পান চালিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে কিস্তি কিস্তিতে আমাকে সাম্পানের দাম পরিশোধ করে। আমি বরাবরই চেয়েছিলাম আমার ভাইয়ের সংসারেও স্বচ্ছলতা আসুক। তাই যেদিন নাহিদ ভাই সদরঘাটের ইজারা জমা দিতে একজন মাঝির খোঁজ করছিলো আমিই তখন আমার ছোট ভাই মাহমুদ হোসেনের নাম প্রস্তাব করি । পরে আমি বাড়িতে এসে মাহমুদকে প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয় এবং নিজেই কাগজ কপি করে আমাকে দেয়।” যদি সে স্বইচ্ছাতেই কাগজ দিয়ে থাকে তাহলে এখন অস্বিকার করলো কেন জানতে চাইলে আমীর বলে ঘাট ইজারা পাওয়ার পর মাহমুদ সম্ভবত অন্যকোন লোভে পড়ে এসব করছে। যদি সে তার নামে টেন্ডারের বিষয় না-ই জানতো তাহলে সে সাথে সাথেই অভিযোগ করার কথা। অথচ তাকে একটি পক্ষ লোভে ফেলে চারদিন পরে অভিযোগ করালো।
কিসের লোভে মাহমুদ সব অস্বিকার করছে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান নাহিদ বলেন, ইজারা পাওয়ার পর মাহমুদ আমার কাছে মোটা অংকের একটি টাকা চেয়েছিলো । যা তাৎক্ষনিক দেয়া সম্ভব ছিলো না কারণ আমি যুগোপযোগি দরেই সদরঘাট ইজারা নিয়েছি। কোন মনোপলি বা সিন্ডিকেট করে কমদাম দেয়নাই। অন্যদিকে ২য় দরদাতা যেহেতু আমার দরের চেয়ে ৬ লাখ টাকা কমে ঘাট ইজারা বাগিয়ে নিতে চাচ্ছে তাই সেই ৬ লাখ টাকার একটা অংশ বিলিয়ে আজ আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে বেড়াচ্ছে । সবচেয়ে হাস্যকর কথা হলো কথিত জাল জালিয়াতির অভিযোগ । মাহমুদ হোসেনের যে কাগজের কপি জমা দিয়েছি সে গুলো কি জাল ছিলো? কই সেটা তো অরিজিন্যাল প্রমান হয়েছে। আর এমন না যে মাহমুদ ছাড়া আর কারো নামে সদস্যপদের কাগজ বাজারে নেই । কর্ণফুলীতে কিন্তু অনেক অনেক মাঝি বেকার বসে আছে। আপনারা খোঁজ নেন বিনা টাকা বিনিয়োগের লাভ পাওয়ার জন্যে অনেকেই নিজের সদস্যপদ ব্যবহার করতে দিতে এক পায়ে খাড়া। আমি আমাদের ৩০ বছরের পুরনো কর্মচারীর ওপর বিশ্বাস রেখেই তার এনেদেয়া তারই আপন ছোট ভাইয়ের নামে দরপত্র জমা দেই। আমার মনে যদি বিন্দুমাত্র অসৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে আমি কি কখনো আমার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি দরপত্রে লিখে দিতাম? এখন আমাকে অনেকটা ব্লেক মেইল করার মতন অবস্থায় ফেলে ফায়দা হাসিল করতে নেমেছে একটি সিন্ডিকেট। যারা অর্ধেকেরো কমদামে এই ঘাট ইজারা নিতে তো চাচ্ছেই সেই সাথে ঘাটটিকে অবৈধ পণ্যের উঠানামার পয়েন্ট বানাতে চায়।
আ্মার বিরুদ্ধে কথিত কাগজ জালিয়াতির অভিযোগ তুলে অনেকে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। অথচ কেউ এটা লিখে না যে সর্বোচ্চ দরদাতার সাথে সেই মিজানুর রহমানের দরের পার্থক্য ৬ লাখ টাকা। কেউ নয়-ছয় করে ইজারা নিলে কখনোই ২য় সর্বোচ্চ দরদাতার চেয়ে ২ গুনেরো বেশী দর জমা দিতো কিনা জাতির বিবেকের কাছে সেই প্রশ্ন রেখেছেন খলিলুর রহমান নাহিদ।
অন্যদিকে নিজের ভোল পাল্টে আত্মগোপনে চলে গেছে মাহমুদ মাঝি।
Leave a Reply