1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
সিনহা হত্যাকারী ওসি প্রদীপের বোনের সংখ্যালঘুর উপর আক্রমনের নাটকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন চট্টগ্রাম সিএমপির তিন থানায় রদবদল: ওসি বদলেই পরিবর্তন আনতে চায় পুলিশ প্রশাসন! ফটিকছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মো. মাসুদ আর নেই মিরসরাইয়ে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি। চন্দ্রগঞ্জে সবুজ বাংলা ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে শতাধিক  শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা পাকিস্তানের জাতির পিতাদের আমাদের উপর চাপানো কেনো? নারী শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সবুজে ঢাকা হাটহাজারী: বিএনপির উদ্যোগে এক হাজার বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা সম্পন্ন মন্দির ফটকের তালা ভেঙে বোয়ালখালীতে অটোরিকশা চুরি শারজাহ্তে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৪ ঘণ্টা ধরে বিমানে যাত্রী আটকা

পাকিস্তানের জাতির পিতাদের আমাদের উপর চাপানো কেনো?

  • সময় বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • ৪০ পঠিত

মোঃ কায়সার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।

গত ৫ আগষ্টের পর হঠাৎ গজিয়ে তোলা রেটরিকটি নতুন করে আলোচনায় এনেছেন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের একাধিক জাতির পিতার কথা বলেছেন, বলেছেন মওলানা ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব তৈরী হতো না।

আসেন প্রথম আলাপে।
১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন করেন অখন্ড বাংলার প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হক। একেবারে খাঁটি বরিশাইল্লা লোক৷ ১৯১৮ সালে একদিকে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সভায় সভাপতিত্ব করছেন আবার কংগ্রেস জাতীয় পরিষদেরও সেক্রেটারী৷ কলকাতার মেয়র, শিক্ষামন্ত্রী হয়ে একেবারে অখন্ড বাংলার প্রধানমন্ত্রী৷ বিশাল ব্যাপার। পাকিস্তান হবার পরও নানা কিছু। পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, গভর্ণর, এটর্নী জেনারেল ইত্যাদি। মারা গেছেন ১৯৬২ সালে।
স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলন তখনো শুরুই হয়নি।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালী। অভিজাত লোক। সামন্ততান্ত্রিক রাজনীতির বদলে আধুনিক ওয়েস্ট মিনিস্টার ধাঁচের রাজনীতির সুচনা তাঁর হাতে- বলা যায়। মুসলিম লীগের ভেতরে খাজা নাজিমুদ্দীনদের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে তাঁর বলয়টি ছিলো তরুনদের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য৷ ১৯৪৬ সালে অখন্ড বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য বাংলা, পাকিস্তানের পক্ষে না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না। পাকিস্তান হওয়ার পর, পাকিস্তানের রাজনীতি গুজরাটি, উত্তর ভারতীয় আর পাঞ্জাবীদের হাতে কুক্ষিগত হলে তেমন আর উদ্ভাসিত হতে পারেননি। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানেই থেকেছেন কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের তরুন জাতীয়তাবাদীরা তাঁকে নেতা মেনেছে। মারা গেছেন ১৯৬৩ সালে। তখনো বাংলাদেশ আন্দোলন দানা বাঁধেনি।

আবুল হাশিম। পশ্চিম বঙ্গীয় অভিজাত মানুষ। বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সেক্রেটারী। পড়ুয়া লোক। মুসলিম লীগের ভেতরের তরুন প্রগতিশীলরা তাঁকে তাত্বিক গুরু মানতেন। শরৎ বসু, সোহরাওয়ার্দীর সাথে শেষ মুহুর্তের যুক্ত বাংলার বিফল চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন। পার্টিশনের পর ভারতেই ছিলেন। ১৯৫০ এর পর পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। খেলাফতে রব্বানী নামে একটি দল গঠন করলেও আর গুরুত্ব পাননি। আইয়ুব খানের ইসলামী একাডেমির পরিচালক হিসেবে চাকরী করতেন। ঐ অবস্থায় অন্ধ হয়ে যান এবং ১৯৭৪ সালে মারা যান। বাংলাদেশ আন্দোলনে তাঁর কোন ভূমিকা নাই।

যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল। দক্ষিন বাংলার নিম্নবর্ণের হিন্দুদের নেতা। আইনজীবি। কলকাতা কর্পোরেশনের সদস্য। ঐ সময়ের জন্য বিশাল ঘটনা। ফজলুল হকের স্নেহধন্য ছিলেন। পরে মি: জিন্নাহর কাছের মানুষ। পাকিস্তানের প্রথম মন্ত্রীসভার আইনমন্ত্রী। জিন্নাহর মৃত্যুর পর আবার কোনঠাসা। ১৯৫০ সালে পদত্যাগ, পরে ভারতে আশ্রয় গ্রহন৷ পাকিস্তান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির সাথে কোন সম্পর্ক নাই।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। পূর্ববঙ্গীয় মানুষ হলেও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান ভারতের আসামে৷ নিম্ন আসামের দরিদ্র মুসলমানদের অধিকার নিয়ে রাজনীতি। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি৷ পার্টিশনের পর ভারত থেকে বহিস্কার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। ১৯৪৯ সালে সোহরাওয়ার্দী পন্থী তরুনদের গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে ন্যাপ গঠন করেন যা চীনপন্থী কমিউনিস্টদের গণসংগঠন হয়ে উঠে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ছয়দফাকে সিআইএ এর দলিল বলে প্রত্যাখান করেছিলেন৷
বাকীদের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাঁর ভূমিকা বেশী৷ কিন্তু তাঁর নিজের ভূমিকা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের চেয়ে পাকিস্তান সৃষ্টিতে বেশী।

পাকিস্তান চাইলে জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খানের সাথে এঁদের পাঁচজনকে তাদের জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারে। এটাই অধিক ইতিহাসসম্মত। তর্কের খাতিরে যদি বলেন- বাংলাদেশ তো হয়েছে পাকিস্তান হয়েছিল বলেই। বেশ, তাহলে পাকিস্তান হয়েছিল বৃটিশ ভারত হয়েছিল বলে। তার আগে মোগলরা এতো বড় সাম্রাজ্য গড়েছিল তাই বৃটিশরা পেয়ে গিয়েছিল। তারও আগে তুর্ক- আফগান, সেন, পাল, মৌর্য্য। আরো আগে স্রেফ অস্ট্রিক, নিগ্রয়েড। জাতির পিতার বোর্ডে কয়েক হাজার নিয়ে আসেন।

এবার আসি দ্বিতীয় আলাপে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭- গোপালগঞ্জের তরুন শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠনের একজন কর্মী। খাজা বনাম সোহরাওয়ার্দী গ্রুপিংয়ে সোহরাওয়ার্দী গ্রুপে। দৃষ্টিনন্দন, সাহসী এই তরুনকে সোহরাওয়ার্দীও স্নেহ করেন। এই সম্পর্ক ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিলো। ভাষা আন্দোলন, সংখ্যা সাম্য নীতি, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন ইত্যাদি নিয়ে সোহরাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিবের মতবিরোধ হলেও মুজিব তাঁকে অমান্য করেননি। অপেক্ষা করেছেন সময়ের। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীনভাবে তাঁর একক রাজনীতি করে গেছেন।

অপরদিকে ভাসানী তখন আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি। এই সময়ে শেখ মুজিবের সাথে তাঁর দেখাই হয়নি। অর্থ্যাৎ শেখ মুজিব রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার সময়ে ভাসানীর সাথে তাঁর কোন যোগাযোগ নেই, প্রভাব তো দূরের কথা। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করে ফেলেছেন।
পরের বছর ২৩ জুন যখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় তখন কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মওলানা ভাসানী হয়েছেন সভাপতি। আসাম থেকে আসা বর্ষিয়ান মুরব্বী তিনি। বাকী সবাই তরুন। শামসুল হক ছাড়া সবাই কলকাতায় সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের ছাত্রনেতা। শামসুল হকও সোহরাওয়ার্দী গ্রুপেরই। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় নেতা, কেন্দ্র ছেড়ে তো আসবেন না। অতএব মওলানা সাহেবই সভাপতি।
১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭- এই ৮ বছর শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন। ভাসানী আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে ন্যাপ তৈরী করে আলাদা হয়ে গেলে এর পরের দীর্ঘ বছরগুলো ছিলো রাজনৈতিক বিরোধীতার। দুজন দুই আলাদা রাজনীতি করেছেন।
যে ছয়দফা শেখ মুজিবের মাস্টারস্ট্রোক, ছয়দফার ভিত্তিতেই ‘৭০ এর নির্বাচন, নির্বাচন থেকে স্বাধীকার আন্দোলন এবং পরিনতিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ- মওলানা ভাসানী সেই ছয়দফার কট্টর বিরোধী।

সুতরাং ভাসানী না থাকলে মুজিব তৈরী হতো না- এমন কথার কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নাই। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় অকপটে শেখ মুজিব লিখেছেন মওলানার চরিত্র ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর মুল্যায়ন। মুজিব হত্যার পর খুনীদের আশীর্বাদ জানিয়ে মওলানাও জানিয়ে গেছেন মুজিব বিষয়ে তাঁর মনোভাব। কেইস এখানেই ক্লোজ।

নাহিদ ইসলামের মতো তরুনরা মিথ্যা বলছেন এমন বলবো না যদিও তাদের মেন্টরদের একজন অধ্যাপক আসিফ নজরুল ইতোমধ্যেই মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমানিত। তবে এই তরুনরা আরো নিবিড়ভাবে, যুক্তির মানদন্ডে ইতিহাস পাঠ করবেন এই আশা রাখবো। বুড়ো মিথ্যাবাদীদের ফাঁদে যেনো তারা পা না দেন। তাঁদের জন্য শুভ কামনা।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট