এম,আনিসুর রহমান
সম্প্রতি আলোচনায় আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে পুরোনো অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৭) চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিনায়ক থাকাকালে তার নেতৃত্বে ৫৭টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড (“ক্রসফায়ার”) সংঘটিত হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
একসময় সাহসিকতার জন্য ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া এই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ:
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)-এর “Judge, Jury, and Executioner” শীর্ষক একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমানের নেতৃত্বে র্যাব-৭-এর অধীনে পরিচালিত অভিযানে বহু ব্যক্তি “ক্রসফায়ার”-এ নিহত হন। এই সংখ্যাটি তৎকালীন সময়ে সারা দেশে র্যাবের অধীনে সংঘটিত মোট বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৫.৫ শতাংশ ছিল।
প্রতিবেদনে কয়েকটি নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
ছাত্রলীগ নেতা মহিমুদ্দিন মহিম হত্যা (নভেম্বর ২০০৪): দুবাই থেকে ফেরার পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মহিমকে ওই রাতেই “ক্রসফায়ারে” নিহত দেখানো হয়।
আহমদুল হক চৌধুরী হত্যাকাণ্ড (সেপ্টেম্বর ২০০৪): আহমদুল হক চৌধুরী ও তার দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তারের পরদিন “ক্রসফায়ারে” হত্যা করা হয়।
ছাত্রদল নেতা ইকবাল বাহার চৌধুরী হত্যাকাণ্ড (নভেম্বর ২০০৪): হত্যা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ইকবালকেও গ্রেপ্তারের সময় ক্রসফায়ারে” নিহত দেখানো হয়।
HRW-এর পর্যবেক্ষণে র্যাব-৭-এর তৎকালীন অভিযানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষপাতের অভিযোগও তোলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি বা তাদের রক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। HRW-এর প্রতিবেদনে আহমদুল হক চৌধুরীর পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “চট্টগ্রামের মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা HRW-কে জানান, র্যাব-৭-এর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে… আহমুদিয়ার পরিবার বিশ্বাস করে যে জামায়াত-ই র্যাবের মাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে গুরুতর এসব অভিযোগ নথিভুক্ত থাকলেও, এগুলোর জন্য লে. কর্নেল (বরখাস্ত) হাসিনুর রহমানকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। লক্ষণীয় যে, একসময়ে যার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল, সেই হাসিনুর রহমানকেই বর্তমানে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা যায়, যা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র: এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (hrw.org), রিফিউজি ডকুমেন্টেশন সেন্টার অফ আয়ারল্যান্ড (refworld.org), নেত্র নিউজ (netra.news) এবং উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত উৎস থেকে সংকলিত হয়েছে।
Leave a Reply