“মা ও স্বাধীনতা ”
মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম (আলহাজ্ব খাজা হাবীব ) বি.এস.সি-অনার্স (গণিত) এম.এস.সি
বহু দিন ধরে এসেছি আমি
পাঠ অধ্যয়নে,
উচ্চ শিক্ষার আলোক শিখা
জ্বালাতে ভূবনে
ছয়মাস ধরে যাইনি বাড়ি
চিঠি লিখিনি কোন,
মা যে আমার বাড়িতে আছে
একথা এবার শোন।
রাত্রিতে ঘুম হয় না
অশ্রু ঝরে তার চোখে,
সুন্দর আমার মামনি তাই
চিঠিতে এসব লিখে।
তিনি সদায় জেগে থাকে তাই
পুত্র নেই তার কাছে,
জানিনা পুত্র আমার চিঠি দেয় না কেন-
সে জানি কেমন আছে।
আরও লিখে মা আদেশ উপদেশ
হট্টগোল করিও না,
এ ভূবনে আমার কে আছে বল
তুমি লক্ষী বিনা?
চিঠি পেয়ে মোর আনন্দতে ঘোর
মনটা গেল ছেঁয়ে,
চুমু দেব তাই মন তেড়ে যা
বাড়িতে এবার গিয়ে।
আগামী শুক্রে বাড়ি যাব তাই
করলাম মনস্থির,
প্রতিক্ষণে মন বাড়ি চলে যায়
‘মা’ মোর অস্থির।
কিন্তু হায়! কি হল ছাই
লাগলো তাড়ুম-তুড়ুম,
ছাত্র ভাইয়েরা কেহই যাবে না
আমি কেন ঢাকা ছাড়ুম।
দেশ স্বাধীনের বাদ্য বাজলো
শিহরিয়া উঠলো প্রাণ,
রক্ত দেব বলে শপথ নিলাম
আমরা নওজোয়ান।
রাত্রি দ্বি-প্রহর পাক শত্রু
কোথাও মেরেছে উঁকি,
এগিয়ে যাচ্ছে নবীন তরুণেরা
হাতে রাইফেল জীবনের ঝুঁকি।
একরাত্রের কাহিনী চিঠিতে লিখুনি
বালিশ ভিজিল অশ্রুজলে,
কতজন যে হারিয়েছি মা
স্বাধীন চেতনার ফলে।
কত শুক্র যে পার হয়েছে
পুত্র আসেনা মায়ের কাছে,
ঘরের কোণে ‘মা’ কাঁদে হায়
সে বুঝি মরে গেছে।
কতদিন পরে যেজনতরে
এনে দিল তার জামাটা,
রক্তমাখা চিঠি কাঁদছে যেন
চায় শুধু মায়ের দোয়াটা।
কথা কহে না আর এই উপহার
মা যে উন্মাদিনী,
কাতর হয়ে মাটিতে লুটাল
হল যেন তার কুরবানী।
“মাকে কাঁদিয়ে দেশকে বাঁচিয়ে
অমর হয়েছে নয়নমণি,
দোয়া করি বাবা সুখে থাক তুমি
স্মরিব দিবাযামী।”
রক্তমাখা চিঠি বাঁধাই করে মা
স্মরণ করে পুত্রটারে,
স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে যে সে কি কখনও মরে!
Leave a Reply