পলাশ সেন চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি লবণাক্ততার কারণে পান করা যাচ্ছে না। এতে নগরবাসী খাওয়ার পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন কমলেও এখন সরবরাহ করা পানি পান করা যাচ্ছে না। এতে খাওয়ার পানি নিয়ে নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তাছাড়া সরবরাহ করা পানি ফুটিয়েও পান করার উপযোগী হচ্ছে না। এতে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্তরা লবণাক্ত পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যতটুকু সম্ভব লবণাক্ত পানি পান না করতে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তারা মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করছে। অন্যদের নিরুপায় হয়ে লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। যাদের বাসাবাড়িতে গভীর নলকূপ রয়েছে, তারা নলকূপের পানি ব্যবহার করছে। আর যারা ওয়াসার পানির ওপর নির্ভরশীল, তারাই খাওয়ার পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। নগরের অধিকাংশ এলাকায় একই অবস্থা। সুপেয় পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই এলাকাবাসীর। নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা। তারা জানান, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি লিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম লবণাক্ত থাকলে পান করা যায়। এসব পানি পান করলে শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টি না হলে পরিপূর্ণ লবণমুক্ত করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না ৩৯, ৪০ এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক এলাকায়। তাছাড়া নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী এবং ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে কমে এসেছে ওয়াসার পানি সরবরাহ। এছাড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে পানিতে লবণাক্ততা সমস্যা। এদিকে পানিতে লবণাক্ততা বাড়লেও এ সমস্যার সমাধান হাতে নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে। একের পর এক পানি শোধনাগার স্থাপন করা হলেও এমন পরিস্থিতিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান নেই প্রতিষ্ঠানটির হাতে। লবণাক্ততা সমস্যা নিরসনে রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় এ পদ্ধতির প্রয়োগ নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো পানিশোধনাগারে। তাই পানি পরিশোধন করলেও লবণাক্ততা কাটানোর সুযোগ নেই ওয়াসার।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম চৌধুরী দৈনিক চট্টগ্রামের খবর কে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সমুদ্রের পানি নদীতে উঠে আসার কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে ওয়াসার পানিতে কিছু লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার পানি শোধনাগার গুলো পানি পরিশোধন করছে মাত্র। কিন্তু লবণাক্ততা কমাতে ‘রিভার্স অসমোসিস’ নামে আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। যার মাধ্যমে খাবার পানি শতভাগ লবণমুক্ত করা যায়। এতে খরচ বেশি। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পানিতে অপ্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ থাকে না, তাই এই পানি পান করলে কিডনির ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং তাপ প্রয়োগ ব্যতীত পানি শতভাগ বিশুদ্ধ হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক চট্টগ্রামের খবর কে বলেন, কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানির পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সাগরের পানি নদীর অনেক বিস্তৃত এলাকায় ঢুকে পড়ছে। তাতে নগরবাসীর কাছে সরবরাহকৃত পানিও লবণাক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহর মুটে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যাস্ত আছেন বলে জানান।
Leave a Reply