যুগটা পাল্টেছে, সভ্যতাও আর থেমে থাকেনি চক্ষু লজ্জার ভয়ে। সেও গাঁ ভাসিয়ে তাল মিলিয়ে নিলো। এ যেনো এক গল্প। ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মত মানুষ আমরা নই। আমরা ইতিহাসকে বার বার স্মরণ করি। কেউ গানের কলিতে, কেউ কবিতায়।
সভ্য মানুষের গড়া সভ্য সমাজে বিষাক্ত একটি প্রথাকে দাপন করা হয়েছিলো ‘বাল্য বিবাহ’। সমাজের এই অভিশাপটি দূর করতে মানুষকে নানান বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। সভ্য সমাজ জিতেছিলো।সে সময়ে সম্পূর্ণ দাঁতের মালিক না হওয়া মেয়েটি স্বামীর মালিকানায় চলে যেত। চুলের বিনি লাল ফিতায় বাধাঁ মেয়েটি বুকে স্কুল ব্যাগ জড়িয়ে ‘বিয়ে করবো না’ বলে কান্না করতো। এখন আর এই বিষাক্ত প্রথা কাউকে আক্রমণ করে না। বিয়ে করবো না বলেও কোনো মেয়েকে অঝরে অশ্রু ঝড়াতে হয় না। সভ্যতার আলোতে মানুষ আজ ভুল করে না। সভ্যতা যেমন আমাদের জীবন আর সমাজকে আলোকিত করেছিলো ঠিক তেমনি অতি সভ্যতা আমাদের আলোকিত সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা দেখছি, শুনছি কিন্তু বুঝতে পারছি না। হয়ত অনেকে বুঝতে পারছে কিন্তু বলতে পারছে না। কারণ সে নিজেই তো দায়ী। টিকটক, লাইকি,ফেসবুকে ভিডিও ভাসছে তাদের, যাদের মুখ থেকে এখনো মধুর গন্ধ যাইনি। অশ্লীল ভঙ্গিমার গড়াগড়িতে পরিস্থিতি খুবই লাজুক। যে ছেলেটি ভালো করে স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিলে সামনে ঝুকে পড়ে সে আজ দিব্যি গার্লফ্রেন্ডকে কাঁধে তুলে ভিডিও আপলোড করছে। যে মেয়েটি ক্লাসে পড়া না পারার কারণে কান ধরে দাড়িয়ে থাকে সে এখন হাজারো গানের কলি মুখস্ত করে ঠুঁট মিলিয়ে বাবুর কোলে ঝাপ্টা ঝাপ্টি করছে। এতে কি সভ্য মা-বাবা, ভাই-বোন, আর সমাজটা লজ্জিত হয় না? এর জন্য আমরা দায়ী নই কি? ভালোই তো ছিলো অন্ধকারের দিনগুলো অসভ্যতায় মাখামাখি কাজগুলো অন্ধকারেই মিইয়ে যেত। ভালোই তো ছিলো দিনগুলো, তারা টিকটক সেলিব্রিটি হওয়ার স্বপ্ন না দেখে একজন মহীয়সী নারী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো, স্বপ্ন দেখতো একজন আদর্শ মা হবার, একজন আদর্শ গৃহকর্ত্রী হবার।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট শিক্ষিত মা চেয়েছিলো একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবে বলে। কিন্তু কে জানতো সভ্যতার আলোতেই শিক্ষিত মা গুলো জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিবে।তাহলেই হয়ত নেপোলিয়ন একজন সুশিক্ষিত মা চাইতেন আর আমরাও (সম্পূর্ণ জাতি) আরো বেশি সুসন্তান পেতাম।
লেখক:
সমাজকর্মী ও সংগঠক
Leave a Reply