প্রতিটি অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের জীবন চলার পথে বন্ধু নামের বিশ্বাসী, মজবুত ও মায়াবী একটি সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। যাদের সঙ্গে মনের সব লুকানো কথা দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাসের সহিত শেয়ার করা যায়। যাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে একজন বন্ধুকে টেনে তোলা হয় সুকঠিন বিপৎসীমা থেকে সুনিপুণ নিরাপদ স্থানে। এ জন্য বন্ধুরা মিলে যৌথ উদ্যোগে হাত বাড়ায় জীবনের শক্ত ও নিরাপদ ভিত্তি গড়ার আশায়। আর তখনই প্রতীয়মান হয় যে; আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধনই হলো বন্ধুত্ব।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে; বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব নির্ভর করে সৎ- মননশীল ও ইতিবাচক সৃষ্টিশীল চিন্তার ওপর।
আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যেটা বলা যায়; চলার পথে আপনি দুই ধরণের বন্ধু পাবেন, সৎ বন্ধু এবং অসৎ বা বিশ্বাসঘাতক বন্ধু। বিশ্বাসঘাতক বন্ধুত্বের অস্ত্র এতো ধারালো যে, যেকোনো ভালো মানের সুপরিকল্পিত চিন্তার দীর্ঘ পথ ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগকে থামিয়ে দিতে পারে, ব্যার্থ করে দিতে পারে আপনার সুগোছালো উদ্যোগ ও অঙ্কিত সুন্দর পরিকল্পনা। তখন এরিস্টটল’র সেই বিখ্যাত উক্তি “প্রতিটি নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরোনো হয়, ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়”কে আপনার মিথ্যে মনে হবে। অন্যদিকে সৎ ও ইতিবাচক বন্ধু সম্পর্কে টেনিস উইলিয়ামস বলেছিলেন ” জীবনের কিছুটা গড়ে উঠে আমরা কেমন করে তা চালাই তার উপর ভিত্তি করে আর কিছু অংশ গড়ে উঠে আমরা কেমন বন্ধু বানাচ্ছি তার উপর ভিত্তি করে।” তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় জীবনের সফলতা বিনির্মাণে সৎ, ইতিবাচক ও উদ্যোগি মনোভাবাপন্ন বন্ধুর ভূমিকা অগ্রগণ্য।
এসবের পরেও এটাই সত্য যে, কিছুকিছু সময় বিশ্বাসঘাতক বন্ধুদের সাজানো কুটকৌশল ও পরস্পরের প্রতি ভুল বোঝাবুঝির কারণে অটুট ও সোনালি বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। ফলে নষ্ট হয় দৃঢ় ঐক্য, সোনালি বন্ধুত্ব্ব ও স্বপ্নের পরিকল্পিত উদ্যোগ। এই দুঃসময়ে আপনার উচিৎ হবে সেই বিশ্বাসঘাতক বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ স্থানে যত দ্রুততম সময়ে সরিয়ে নেওয়া অথবা সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনাপূর্বক বন্ধুত্বের সুন্দর সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা। এটা এজন্যই বলছি যে, বন্ধুর হাতে বন্ধু খুনের সেই আলোচিত নির্মম হত্যাকান্ডগুলো আমাদেরকে সেটাই ইঙ্গিত করে। এখানে কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে; ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ দাইয়্যাপাড়া এলাকায় ব্যবসায়িক বিরোধ নিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর হাতে ছুরিকাঘাত হয়ে ২২ নভেম্বর চমেক হাসপাতালে মারা যান মাত্র ২০ বছর বয়সী জালাল।
তাছাড়া ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাত্র ২৫ বছরের হাসান নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল।
২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার পোল্লাডাঙ্গা গ্রামের কাশ্মিরপাড়া এলাকায় একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর লাঠির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন আরিফ হোসেন নামে ৩২ বছরের এক টকবকে যুবক।
২০২১ সালের ৮ মে সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার মল্লিকপুর আবাসিক এলাকায় ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছুরিকাঘাতে মাত্র ২০ বছর বয়সী শুকুর আলী খুন হয়েছিল। এইরকম অসংখ্য প্রামাণ্য উদাহরণ বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় দেখতে পাবেন।
তারপরও আপনার সেই তথাকথিত বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন নাকি রাখবেন না, সেটা নির্ভর করবে বন্ধুত্বের প্রকৃত লেভেল ও উপস্থিত সৃষ্ট পরিস্থিতির উপর। যেটা অনুভব করতে পেরে আপনার তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।
লেখক : আবদুল মামুন( ফারুকী),
উদ্যোক্তা ও সংবাদকর্মী।
Leave a Reply