দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই ঘটনায় দেশে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক আতঙ্ক ভাব বিরাজ করছে। এই আন্দোলন কে কেন্দ্র করে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ১৪৭ জন মানুষের প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেক মানুষ আহত অবস্থায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদও ধ্বংস হয়েছে। নরসিংদী কারাগার থেকে কয়েদী পলায়নের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাধারণ মানুষ ভীতিকর অবস্থায় রয়েছে। এমন ঘটনায় জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিংবা দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে সরকার কারফিউ জারি করেছে। কারফিউর ফলে পরিস্থিতি কিছু টা স্বাভাবিক হলেও কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় শিথিলযোগ্য করে সেই কারফিউ চলমান রেখেছে কারফিউ কে কেন্দ্র করে পুলিশ, সেনাবাহিনী,র্যাব,বিজিবি, আনসার সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে পুরো দেশে। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা কিছু টা বিরম্ভনায় পড়ছে এবং আয় রোজগারে করতে না পেরে পড়েছে বিপাকে। শিক্ষার্থীরা যে দাবি প্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করছে তা সরকার মেনে নিলেও আন্দোলন পুরোপুরি প্রত্যাহার হয় নি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক ডিবি কার্যালয় থেকে তাদের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ভিডিও বার্তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করলেও তা চুড়ান্ত হিসেবে অন্য সমন্বয়করা মেনে নেয়নি বরং তারা জিম্মি করে জোর পূর্বক ভাবে ভিডিও বার্তা নিয়েছে বলে অভিযোগ এনে এই ভিডিও বার্তা প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলন কারীরা তাদের সহকর্মীদের মৃত্যুর বিচার সহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। এমন আন্দোলন ও সহিংসতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোবাইল ইন্টারনেট সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষ প্রায় যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। বর্তমান মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও বন্ধ রয়েছে ফেসবুক। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ইন্টারনেট নির্ভর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। যদিও বা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সহিংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ইন্টারনেট আর সেই কারণেই বন্ধ ছিলো। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কারফিউ জারি করছে কিন্তু এই কারফিউর দিন যতই যাচ্ছে আন্দোলনের ধরণও পাল্টাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন সরকার পতনের আন্দোলন হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকার কে চায় না এমন গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ অবস্থায় পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের এই আন্দোলন কে যেনো কেউ ভিন্ন খাতের দিকে নিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল করা এবং তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন করছে সেটি পরিস্কার করা। অন্যথায় তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অন্যরা তাদের নিজস্ব সার্থ হাসিল করে নিয়ে তাদেরকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলে দিবে। দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অন্যরাই লাভবান হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি যাতে না হয় সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকা জরুরি। এবং সরকারের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া। তবে সেই সংলাপের উদ্যোগ অবশ্যই সরকার নিতে হবে। তবে সরকার চাইলে আরও আগে এই সমস্যার সমাধান করতে পারতো বলে মনে করছি। সহিংসতার জন্য সরকারের কিছু অতি উৎসাহি প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং দলের নেতাকর্মীরা কিছু টা দায় বলা যায়। তাই সরকারের উচিত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের সাথে সংলাপ আয়োজন করে অতিদ্রুত দেশ কে স্বাভাবিক করে তোলা। অন্যথায় দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ অবস্থায় পরিণত হতে পারে। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সকলে সহনশীল মনোভাবপন্ন হওয়া জরুরি। আর কোন মৃত্যু বা ধ্বংসযজ্ঞ হোক সেটা চাই না। দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। এই দেশ আমার আপনার সকলের ; তাই নাগরিক হিসেবে দেশের সংকট মুহূর্তে সকলে ধৈর্যশীল থেকে দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহনশীল হওয়ার কোন বিকল্প নাই। দেশের শান্তির জন্য চলমান সংকট মোকাবেলায় সব পক্ষকেই সহনশীল আচরণ করতে হবে।
Leave a Reply