নগর প্রতিনিধিঃ
সমম্বয়হীনতা ও নাগরিক অসচেতনতা নাগরিক জীবনে অভিশাপ নিয়ে আসে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বহদ্দারহাটস্থ নিজ বাস ভবনে শুক্রবার ২ জুলাই বিকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, সমম্বিত উদ্যোগ ও নাগরিক সচেতনতা স্মার্ট সিটি গড়ার পূর্বশর্ত। আর্থিক দেনা, উন্নয়ন কাজের বিড়ম্বনা ও বৈশ্বিক মহামারীর দুঃসময়কে সাথে করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরের মানুষের সেবায় সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহন করার আগে থেকেই উন্নয়ন কাজে সংশিশ্লষ্ট সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাজে সমম্বয় সাধন অবশ্যই প্রয়োজন মনে করি। সমম্বয়ের অভাবে জনগণের অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়, নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ে। ফলে সরকারী সেবা সংস্থা গুলোর উপর মানুষের মনে বিরূপ ভাব, আস্থার সংকট ও অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
দায়িত্ব গ্রহনের সাথে সাথেই ১০০ দিনের কাজের পরিকল্পনায় রুটিন কাজকে অব্যাহত রেখে অধিকতর জরুরী কিছু সেবা কার্যকে অগ্রধিকার দিয়ে প্যাচওয়ার্ক শুরু করি। মশকনিধন, বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বেহাল সড়কগুলোর সংস্কার এবং আলোকায়নসহ চসিকের সেবামূলক পরিধিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই ও উপায় অন্বেষণ এর সাথে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়।
অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা ও জলামগ্নতা চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকতার সহিত চট্টগ্রামের মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন, মেগা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি সরাসরি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়, এ কাজ এখনো শেষ হয়নি। নগরীর পানি নিস্কাশনের প্রধানতম খাল ও নালা গুলোর প্রায় প্রত্যেকটির জায়গায় জায়গায় বাঁধ দেয়া রয়েছে এবং খাল ও নদীর সংযোগ স্থলে বাঁধ দিয়ে স্লুইচ গেইট ও টাইডাল ওয়াটার রেগুলেটর সিস্টেম নির্মানের কাজ অসম্পূর্ণ। তাই বর্ষা মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই আমি শংকা করছিলাম অল্পবৃষ্টিতেই বন্ধ পানি নগরীর অলি, গলি ও রাস্তাঘাট ডুবিয়ে বাসাবাড়ীতে প্রবেশ করে অবর্ণনীয় দুর্দশার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সিডিএকে অনুরোধ করেছিলাম বর্ষা মৌসুমের জন্য অস্থায়ীভাবে ও দ্রুততার সহিত খাল-নালার বিভিন্ন জায়গার বাঁধগুলো অপসারন করতে এবং খালের মুখে পানি বের করার জন্য অস্থায়ী পথগুলোকে আরো সম্প্রসারিত করতে। যে কোন কারণেই হোক এটি করা হয়নি বা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, তাই মৌসুমের প্রথম পসলা বৃষ্টিতেই নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বৃষ্টির পানিতে উন্নয়নও নির্মান কাজের বালি, মাটি, বর্জ্য ও আবর্জনা খাল নালায় পতিত হয়ে জমে গেলে কয়েক ঘন্টা সময়ের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে তা অপসারন করে এবং কিছু কিছু বাঁধ কেটে দিয়ে পানি চলাচলের রাস্তা করে দিই। ফলে, দুর্ভোগের এ মাত্রা আর বাড়তে পারেনি। তবুও ভারী বৃষ্টিপাত হলে এখনো নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যাচ্ছে, দ্রুততার সাথে পানি অপসারণ হচ্ছেনা।
নিজ বাড়ীর সামনে জমে থাকা পানি দেখিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৮ঘন্টা, এমন কি চব্বিশ আটচল্লিশ ঘন্টায়ও পানি সরে যেতে পারেনি। সেখানে নাগরিক দুর্ভোগ চরম মাত্রাকেও ছাড়িয়েছে। চসিকের নিয়মিত পরিষ্কার অভিযানে দেখা যায় আবর্জনার এক তৃতীয়াংশই থাকে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের বর্জ্য। এসব বর্জ্য অসচেতনভাবে খাল নালায় নিক্ষেপ করছে মানুষ। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ও পানি নিষ্কাশনে অন্তরায় হয়ে আছে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য। এমন সময়ে চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা, পরিবেশ রক্ষা ও কর্ণফুলী নদীর প্রবহমানতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং কাজে বড় বাঁধা এসব প্লাস্টিক পন্য ও পলিথিন। পলিথিনের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে নদী ও শহর বাঁচাতে পর্যায়ক্রমে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করতে চাই আমরা। এ ব্যাপারে সর্বমহল থেকে চসিককে সহযোগিতা করতে হবে।
সবশেষে বলতে চাই, আসুন সকলেই নিজের শহরকে সুরক্ষিত, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে সচেতনতার সাথে নিজেদের সহযোগি হই। সিটি কর্পোরেশনের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়াই। ‘আমার শহর, আমার অহংকার’ গড়বো একযোগে।’
Leave a Reply