পলাশ সেনঃ
জনৈক ভুক্তভোগী ভিকটিম একজন গার্মেন্টস কর্মী।বিগত প্রায় ১৬ বৎসর পূর্বে ভিকটিমের বাবা মারা যাওয়ার পর তিন বোনকে নিয়ে তার মা আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন এবং তাদের সংসারে ১১ বছরের আরও একজন সৎ বোন আছে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে ভিকটিমের মা,তিন বোন এবং সৎ বাবা একই রুমে বসবাস করত।ভিকটিমের সৎ বাবা প্রায়ই রাতের বেলায় তাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতো।ভিকটিমের মা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে অন্যত্র বিবাহ দেয় কিন্তু উক্ত সৎ বাবা ভিকটিমের স্বামীর নিকট তার চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কু-রুচিপূর্ণ আপত্তিকর কথা বললে এক পর্যায়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয় এবং ভিকটিমের স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়।বাধ্য হয়ে ভিকটিম পুনরায় তার মায়ের সংসারে চলে আসে।
মায়ের সংসারে আসার পর থেকে ভিকটিমের সৎ বাবা বিভিন্ন সময় তাকে আপত্তিকর কু-প্রস্তাব দিতো।গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে ভিকটিমের সৎ বাবা রাতের খাবারের সাথে কৌশলে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। ভিকটিম ঘুমের ঔষধ মিশানো খাবার খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লে তার সৎ বাবা ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানের ছবি তার মোবাইলে ধারন করে।এক সময় ভিকটিমের মা ঘুম থেকে উঠে বিষয়টি দেখে ফেললে উক্ত বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে।ভিকটিমের মা উক্ত আসামীর ভয়ে কাউকে উক্ত বিষয়ে অবগত করেনি।
পরবর্তীতে গত ০১ মে ২০২২ খ্রিঃ তারিখে ভিকটিমের সৎ বাবা তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় এবং রাজী না হলে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শণ করে। গত ০২ মে ২০২২ খ্রিঃ রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়লে তার সৎ বাবা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জোর পূর্বক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে।উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫, চট্টগ্রাম আদালতে বর্ণিত আসামীর বিরুদ্ধে মামলা মামলা দায়ের করে যার মামলা নং-১৭২/২২, তাং-২৩/০৫/২০২২ খ্রিঃ , ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধণী/ ২০০৩) এর ৯(১)।
এরপর গত ১২ জুন ২০২২ খ্রিঃ অনুমান রাত আনুমানিক ০১০০ টায় উক্ত আসামী ভিকটিমের মোবাইলে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবিগুলো প্রেরণ করে এ মর্মে হুমকি প্রদান করে যে, যদি তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলাটি তুলে না নেওয়া হয় তাহলে উক্ত ছবিগুলো সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবে।বাধ্য হয়ে ভিকটিম আসামীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অধিনায়ক র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
ভিকটিমের অভিযোগের বিষয়টি র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সাথে আমলে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গত ১৩ জুন ২০২২ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১০৩৫ ঘটিকায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানাধীন কলসি দিঘীর পাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোনজুরুল কাজী (৫০),পিতা-মৃত মোঃ আলফাজ উদ্দিন কাজী, মাতা-মৃত আমেনা খাতুন,সাং-পুরান পাড়া,থানা-নরসিংদী সদর,জেলা-নরসিংদী, বর্তমানে সাং-কলসিদিঘীর পাড়, বাদামতলা, থানা-বন্দর, চট্টগ্রাম মহানগর‘কে আটক করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী স্বীকার করে যে, সে কৌশলে ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি মোবাইলে ধারণ করতঃ ভিকটিমকে ব্লাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় এবং ভিকটিম রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে জোরপূর্বক ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এছাড়া মামলা তুলে না নিলে ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply