তহিদুল ইসলাম রাসেল:
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিব। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ভাঙা হাড় পুনরায় মাথায় প্রতিস্থাপনের একদিন পরই আইসিইউ শয্যা ছেড়ে উঠে বসেছেন ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’ সাদা ব্যান্ডেজে লেখা মেডিকেল শিক্ষার্থী সেই আকিব। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক থাকলেও আরও বেশ কিছু দিন হাসপাতালে থাকতে হবে তাকে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, আকিবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা কথা বলছেন। এসময় আকিবকে শয্যা থেকে উঠে বসিয়েছেন তার চিকিৎসকগণ। আকিব তাঁদের সঙ্গে হাত নেড়ে কথাও বলেছেন। পরে তার মুখে তরল খাবারও দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘মঙ্গলবার আকিব শয্যা ছেড়ে উঠে বসেছে। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক আছে। তবে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এরপর আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে ছাড় দেয়া হবে।’
এর আগে, গতকাল সোমবার (২৮ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত পেটে ও মাথায় দুই দুটি অপারেশন কার্যক্রম চালায় চমেক হাসপাতালে পৃথক তিনটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দল। যে দলে নিউরো সার্জারি বিভাগ ও এনেস্থেসিয়া বিভাগের সর্বমোট ১৫ জন চিকিৎসক ছিলেন। পুরো অপারেশনটির নেতৃত্ব নেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী।
তার আগেরদিন, রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে মাথার খুলি প্রতিস্থাপনের জন্য চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিবকে। পরে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকেই তাকে অস্ত্রোপচারে জন্য প্রস্তুত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ অক্টোবর চমেকের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান আকিব। জখম গুরুতর হওয়ায় আকিবের পুরো মাথায় লাগানো হয়েছে সাদা ব্যান্ডেজ। এতে ডাক্তার লিখে দিয়েছেন ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না।’ যা দেশের মানুষের মনে নাড়া দিয়েছে। মাথায় আঘাত বেশি হওয়ায় আর্টিফিশিয়াল ডুরামেটার দিয়ে ব্রেইনের পর্দা তৈরি করেন চিকিৎসকরা। সেখানে থাকা হাড়টি পেটের চামড়ার নিচে আলাদা একটা কক্ষ তৈরি করে রাখা হয়। দ্বিতীয় অপারেশন করে হাড়টি প্রতিস্থাপন করা হবে।
আকিব চমেকের এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। কুমিল্লার বুড়িচং এলাকার গোলাম ফারুক মজুমদারের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট তিনি।
চমেক হাসপাতালে বিবদমান ছাত্রলীগের দুইটি পক্ষ রয়েছে। একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারি হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অন্যটি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুসারি হিসেবে। উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আকিবসহ তিনজন আহত হন। মারামারি ও হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
Leave a Reply