1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
কবিতাঃ জনৈকের বৃত্তান্ত -উত্তম কে. বড়ুয়া আমিরাতে বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবীর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন । গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় এখনই -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ জুলাই জাতীয় রিপোর্টার্স ক্লাব, চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী কমিটি গঠনে জরুরি সভা সম্পন্ন চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত বাংলাদেশে নির্বাচনে PR পদ্ধতি বিশ্লেষণ আগুনে পুড়ে যাওয়া পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন কাউখালি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বাঘাইছড়িতে শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন চাটগাঁ ভাষার বানান রীতি, লোকজ সংস্কৃতি, স্বেচ্ছাসেবক আহ্বান, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় এখনই -লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • সময় সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫
  • ৩০ পঠিত

 

ছোট্টবেলা থেকে শুনে আসা একটা প্রবাদ বাক্য—অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তেমনি অত্যধিক সূর্যালোক মাটির জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি চারার জন্যও ক্ষতিকর। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে অনেকেই গাছের চারা রোপণ করছেন। আমাদের বুঝতে হবে, এ সময়টা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় কিনা। কারণ আপনি যে গাছের চারাটা রোপণ করছেন তার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া প্রয়োজন। সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা, বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে।
গ্রীষ্মে সূর্যের প্রখর তাপদাহে প্রকৃতি এক ভয়াল মূর্তি ধারণ করেছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে প্রায় প্রতিদিনই। এটা ঠিক যে, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনসহ ব্যাপক নির্মাণকাজে শহরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু শহরাঞ্চলে আবাদি জমি ও গাছপালা কমে যাওয়ায় বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে ছাদবাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। কোনো ভবনে ছাদবাগান থাকলে ওই ভবনের তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এমনটাই পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বাগানসহ ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদবাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৭ দশমিক ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাকসবজির বাগান তৈরি করে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাকসবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
যেসব গুণের কারণে আমাদের এ দেশকে সবুজ-শ্যামল বলা হতো তার বেশির ভাগেই ছিল চারদিকে ঘন গাছপালা আর সবুজের সমারোহ। এখন সেই সবুজ-শ্যামল রূপ খুব কমই চোখে পড়ে। গাছপালা ও ফসলি জমি ধ্বংসের কারণে পাখপাখালিও আগের মতো আর তেমন দেখা যায় না। গাছপালা কাটার ফলে পাখিদের আশ্রয়স্থলও কমে যাচ্ছে। অতিথি পাখির আগমনও সমীচীন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই এভাবে গাছপালা কেটে উজাড় করতে থাকলে পাখিদের বংশ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ রকম পরিস্থিতিতে পরিবেশ সুরক্ষায় সারা দেশে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিশেষ করে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় গাছ লাগাতে বলা হয়েছে।
দুঃখের বিষয় হলো, প্রতি বছর গ্রীষ্মে যখন গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে মানুষ, তখনই বৃক্ষনিধন নিয়ে বিলাপ, আর বেশি বেশি গাছ লাগানোর পরামর্শ চলতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃক্ষরোপণের আন্দোলন চলে। আমরা জানি, সূর্যের প্রখর রোদ আর শুষ্ক গরম বাতাস থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়, আমাদের চারপাশটা গাছগাছালির সবুজে ভরিয়ে দেয়া। তবে এর অর্থ এই নয় যে, যখন তখন গাছ লাগিয়ে ভরিয়ে দেব। এ তাপদাহের মধ্যে আপনি যদি গাছ লাগান সেই চারা গাছ বাঁচানো খুবই কষ্টকর। কারণ প্রতিটি জীবই তার জীবনধারণ ও সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। উদ্ভিদের জীবন চক্র সম্পন্নের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদ মাটি ও বাতাস থেকে তার খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মাটিতে অবস্থিত বিভিন্ন খাদ্য উপাদান পানির সঙ্গে মিশে উদ্ভিদের গ্রহণোপযোগী হয়। সাধারণত উদ্ভিদ মাটি থেকে মূল দ্বারা খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে এবং তা পাতার ক্লোরোফিলের মাধ্যমে সূর্যালোকের সাহায্যে নিজের খাদ্য তৈরি করে।
মনে রাখা প্রয়োজন, চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় কাজ। এজন্য প্রথমেই গরু, ছাগল বা অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর হাত থেকে চারাকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চারা রোগাক্রান্ত হলে রোগবালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় বন কর্মী বা কৃষি কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে। সঠিকভাবে চারা বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত আলো-বাতাসে গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। যেকোনো জাতের গাছের জন্য যা খুবই দরকারি। তাই বাড়িতে এমন স্থানে গাছ রাখুন যেখানে নিয়মিত আলো-বাতাস মেলে।
সুস্থ, সুন্দর ও বাসযোগ্য ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিরূপ প্রভাব মোকাবোলার জন্য যেকোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। এ তাপদাহ সহনীয় করতে চাইলে আমাদের উচিত, নির্বিচারে বন নিধনের পরও এখনো যতখানি টিকে আছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যান ও মানচিত্র তৈরি করে সেগুলো সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও বর্ধনে জোর দেয়া। বিভিন্ন এলাকায় এখনো পুরনো ও বৃহৎ বৃক্ষ টিকে রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণে নজর দিতে হবে। বাড়াতে হবে জলাধার, উন্মুক্ত মাটি। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণে দায়বদ্ধতা। আরো দরকার ব্যক্তিগত পরিবহন কমিয়ে গণপরিবহন এবং হাঁটার উপযোগী ফুটপাত।
পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বৃক্ষরাজি অনেক কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেমন পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ি বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, ফলদ বৃক্ষমেলা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছে। এ চারাগুলো পরিচর্যার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। আগেই বলেছি, চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় কাজ।
পরিবেশ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে একদিনে ১ কোটি ৩০ লাখ গাছ লাগিয়েছে তুরস্ক। এর মধ্যে ১ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃক্ষরোপণ বিচারে ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে তারা। এর আগে ইন্দোনেশিয়া ১ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৭টি চারা রোপণ করে রেকর্ড গড়েছিল। অন্যদিকে তুরস্ক ১ ঘণ্টায় রোপণ করে ৩ লাখ ৩ হাজার ১৫০টি চারা।
আসুন, আমরা এখন থেকে বৃক্ষের চারা রোপণের জন্য আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কেননা এটিই সঠিক সময়। এরপর গাছটি কোথায় রোপণ করব সেই স্থানও নির্বাচন করে রাখি। এর ওপরই নির্ভর করবে আপনি কোন গাছ রোপণ করবেন। বৃক্ষের আবর্তনকাল অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি (৫-১০ বছর), মধ্যমেয়াদি (১০-১৮ বছর) ও দীর্ঘমেয়াদি (১৮-৪০ বছর) বৃক্ষের প্রজাতি নির্বাচন করুন। প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশী প্রজাতির চারা রোপণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যদি চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করেন তাহলে উন্নত মানের চারা বাছাই করুন এবং দুর্বল ও রুগ্ন চারা বাতিল করুন। বেশি বয়সের চারা রোপণ না করাই ভালো। মনে রাখবেন, বৈদ্যুতিক লাইনের নিচে বৃক্ষ রোপণ করা উচিত নয়।
উপযুক্ত মৌসুমে গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি তাদের অনবরত পরিচর্যাও জরুরি। তা না হলে গাছের চারা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।
লেখকঃ প্রধান উপদেষ্টা, ক্লিন বাংলাদেশ

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট