এবি রহমানঃ
তারুণ্য মানব জীবনের সাহসী, সংগ্রামী ও সৃজনশীলতার পর্ব। পুরাতনকে ভেঙে, সংস্কার করে নতুন কিছু করাই যেন তারুণ্যের ধর্ম। তারুণ্যের শক্তিতে উদ্বেলিত হয়ে কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত, গিরি-গুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত।’ তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে। সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে তরুণ সমাজকে এই সংস্কার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা এগিয়ে আসলেই সমাজের সকল স্তরে পরিবর্তনের বিপ্লব শুরু হবে। আর এ ক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী। সমাজে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি দেখলেই সম্মিলিত প্রতিবাদ করতে হবে। আর এ প্রতিবাদ যদি আসে তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে তাহলে তাদের রুখবে এ সাধ্য কার!
আজকের তরুণ সমাজ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা যদি অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়, তাহলে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সকল কল্যাণমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কালো মেঘের ছায়া কখনো দূর হবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজকল্যাণমূলক সকল কাজে। তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। জরাজীর্ণ সমাজ ব্যবস্থাকে সংস্কার করে নতুন কিছু রচনার জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকেই জাগতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজের স্তরে স্তরে দুর্নীতির যে সমারোহ তা দূর করা সম্ভব। তারুণ্যের শক্তিই সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল সংস্কারমূলক আন্দোলনে তরুণ সমাজের ভূমিকা ছিল নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমাদের ভবিষ্যত্ অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। তাই একটি আদর্শ সমাজ নির্মাণে তরুণ সমাজকে কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সমাজ রাষ্ট্র নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী সাহসিকতার সঙ্গে সকল বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের পথে হাঁটতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। আর তরুণ সমাজের সঠিক প্রস্তুতি শুধু নিজেকে নয়, বরং সমাজ, রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে এক অনন্য সাফল্যের পথে।
দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ তরুণ। এই তরুণ সমাজ বর্তমানে আমাদের সামাজিক সমস্যা সমাধানের এক অভিনব শক্তি। যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মতত্পরতার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে এবং দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ সমাজ হলো কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দীপ্তিমান সূর্যের মতো। সমাজের কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ, ভন্ড রাজনীতিবিদ ব্যক্তি স্বার্থে তরুণ সমাজকে নানা অপরাধমূলক, সমাজবিরোধী কাজে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। তবুও এসব প্রতিকূলতার মাঝেও সমাজের কিছু মহত্প্রাণ ব্যক্তি, দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, কিছু সমাজসেবী মানুষের সহযোগিতায় দেশের প্রান্তে প্রান্তে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করছে। তারা দেশের সংকটময় মুহূর্তে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া তরুণরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ সংগ্রহ করাসহ নানামুখী জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। তারুণ্যের হাত ধরেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে।
Leave a Reply