পলাশ সেন, চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি:
ব্যক্তিগত মুহুর্তের অশালীন ছবি আত্মীয়স্বজনের নিকট প্রেরণ করতঃ ব্ল্যাকমেইল করার অপরাধে ০১ জন সাইবার প্রতারককে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
জনৈক ভুক্তভোগী র্যাব-৭, চট্টগ্রামে অভিযোগ করেন যে, মোঃ জাহেদ হোসেন শাকিল (২২) এবং ভিকটিম একই স্কুলে পড়াশুনা করত। একই স্কুলে পড়াশুনার সুবাদে এবং একই এলাকায় বসবাসের কারণে প্রায়ই তারা একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া করত। এভাবে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। উক্ত সম্পর্কের জেরে প্রায়ই জাহেদ হোসেন ভিকটিমের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করত। বর্ণিত ব্যক্তি ভিকটিমের বাসার আশেপাশে ঘুরাফেরার কোন এক পর্যায়ে বাথরুমের জানালা দিয়ে ভিকটিমের গোসলের ভিডিও চিত্র তার ব্যবহৃত মোবাইলে ধারণ করে।
পরবর্তীতে মোঃ জাহেদ হোসেন শাকিল ভিকটিমকে উক্ত ভিডিও চিত্র দেখায় এবং বলে উক্ত ভিডিও চিত্র মুছে দিবে যদি ভিকটিম তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। ভিকটিম এ শর্তে রাজী হয়নি। গত ০২ জানুয়ারি ২০২১ইং তারিখে মোঃ জাহেদ হোসেন ভিকটিমকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে এবং না গেলে গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করবে মর্মে হুমকি দেয়। ভিকটিম মান সম্মানের ভয়ে তার সাথে ঘুরতে যেতে বাধ্য হয়। গত ০২ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকায় মোঃ জাহেদ হোসেন ভিকটিমকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় তার বন্ধু মামুনের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায় এবং কক্ষের দরজা বন্ধ করে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। ভিকটিম উক্ত কাজে বাধা প্রদান করলে সে পুনরায় তার মোবাইলে থাকা গোসলের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার এবং একটি চাকু প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রানে মেরে ফেলার ভীতি প্রদর্শন করে। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে প্রাণের ভয়ে ভিকটিম অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং মোঃ জাহেদ হোসেন ভিকটিমের অজান্তে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও চিত্র তার ব্যবহৃত মোবাইলে ধারন করে।
পরবর্তীতে শারীরিক সম্পর্কের ধারনকৃত ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার ভীতি প্রদর্শন করে বর্ণিত স্থানে ভিকটিমের সাথে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
এভাবে প্রতিনিয়ত ভিকটিমকে জিম্মি করে তার ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম মোঃ জাহেদ হোসেন এর সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে সে কিছু স্পর্শকাতর ছবি ভিকটিমের আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রেরণ করে ভিকটিমের মানহানি করে। গত ৩-৪ মাস পূর্বে সামাজিকভাবে ভিকটিমের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পরও মোঃ জাহেদ হোসেন মোবাইল ফোনে এবং রাস্তাঘাটে বিভিন্নভাবে ভিকটিমকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসার জন্য হুমকি প্রদান করে। এরই মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ রাত ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের স্বামীকে জোর পূর্বকভাবে মোবাইলে থাকা ভিডিও চিত্র সমূহ দেখায় এবং ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। উক্ত কাজে অতিষ্ঠ হয়ে ভিকটিম মোঃ জাহেদ হোসেন এর বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রূয়ারি ২০২২ ইং তারিখ চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে যাহার নং-১১৯৫। সাধারণ ডায়েরী করার পর মোঃ জাহেদ হোসেন ভিকটিমের বাবা, ভাই ও স্বামীকে মারধর সহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম বর্ণিত বিষয়ে অধিনায়ক র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গত ১২ মার্চ ২০২২ইং তারিখ ৬.৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন সড়াইপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ জাহেদ হোসেন শাকিল (২২), পিতা-মৃত মোঃ ফারুক, সাং-বাকিলাবাজার, থানা-হাজীগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর, বর্তমানে সাং-সরাইপাড়া, থানা-পাহাড়তলী, জেলা-চট্টগ্রামকে আটক করে।
পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে স্বীকার করে যে, সে কৌশলে বাথরুমের জানালা দিয়ে ভিকটিমের গোসলের ভিডিও চিত্র ধারন করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল এবং চাকু প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রান নাশের ভীতি প্রদর্শণ করে একাধিকবার ধর্ষণ করে উক্ত ধর্ষণের ভিডিও স্থির চিত্র তার ব্যবহৃত মোবাইলে ধারন করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মানহানি করার উদ্দেশ্যে উক্ত ভিডিও চিত্র তার আত্মীয়-স্বজন ও স্বামীকে প্রেরণ করে। ধৃত আসামী কর্তৃক ইতিপূর্বে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণের এবং ধর্ষণ করার স্ক্রীন শর্টের ০৬ কপি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply