প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যখন মাধ্যমিকে ভর্তি হব তখন গ্রামীন জনপদের বিদ্যালয়ের একধাপ অগ্রগতি করতে আমার প্রাইভেট শিক্ষকের পরামর্শে মফস্বলের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ পটিয়ার আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় আমাকে। পরিবারের অন্যান্য পুরুষ কর্তাগণ দেশের বাইরে থাকায় আমার একা যাতায়াত করতে হত। কেউ ছিলনা সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করার। নিজের যতটুকু সম্ভব চিন্তা চেতনায় আসত সেটাই করতাম। আমার এলাকা থেকে যখন স্কুলে যাবার জন্য গাড়ীতে উঠতাম তখন আরও দূরবর্তী ছাত্ররাও গাড়ীতে একসাথে যেতে দেখতাম। ছাত্ররা হাফ ভাড়ার কথা বললে গাড়ি ওয়ালা আইডি কার্ড দেখাতে বলত অথচ আমরা ইউনিফর্ম পড়া হাতে বই নিয়ে গাড়ীতে উঠেছি এবং স্কুল সময়ে উঠেছি তবুও তারা আইডি কার্ড চাইত। এই সমস্যা দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম মোহাম্মদ মুছা (বিএবিএড) এর অফিস কক্ষে গেলাম এবং ওনাকে খুলে বললাম। তিনি বললেন স্টেশনারি দোকানে প্লাস্টিক কভারের আইডি কার্ড পাওয়া যায় তুমি ছবি সহ নিয়ে এসো আমি সত্যায়িত করে দেব। বলে রাখি তিনি প্রথমে জিজ্ঞেস করেছেন তোমার বাড়ী কোথায়? যখন বললাম লড়িহরা গ্রামে। বাবার নাম জিজ্ঞেস করলেন। বাবার নাম শুনে বললেন খুব ভাল লোক ছিলেন এই কথা শুনে মনটা ভরে গেল। স্যারের বাড়ীও আমাদের নিকটবর্তী উজির পুর গ্রামে তাই তিনি সবার সম্পর্কে জানতেন। আমার দেখা সেরা শিক্ষক ছিলেন মুছা স্যার। যাক প্রসঙ্গে আসি আশির দশকের শেষে সে সময়ে আমি আইডি কার্ড নিয়ে স্কুলে যাতায়ত করেছি। এরপর গাড়ীতে আর কোন সমস্যা হয়নি। সে সময় আমার এলাকা থেকে পটিয়া ভাড়া ছিল এক টাকা আর আমার দিতে হত পঞ্চাশ পয়সা। তখন যাতায়তের জন্য এত পরিবহন ছিলনা। বাসের উপর নির্ভর করতে হত। এমনও হয়েছে গাড়ীতে উঠতে না পেরে সময় চলে যাওয়াতে ফেরত আসতে হয়েছে। সেদিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে টেম্পু আসল অনেক পরে। কিন্তু টেম্পুতেতো আর হাফ ভাড়া দেওয়া যাবেনা। টেম্পুতে চড়তে গেলে বাড়তি খরচ নিয়ে যেতে হবে। যেখানে প্রতিদিন ২-৩ টাকায় যাতায়ত ও টিফিন হয়ে যেত সেখানে ৫-৮ টাকার প্রয়োজন হবে টেম্পুতে চলাচল করলে। সেসময় এই আট টাকার মূল্য অনেক। ৮ টাকায় পটিয়া হতে শহরে আসা যাওয়া করা যেত। আমরা ছাত্ররা অতটাকা পাব কোথায়? তাই বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিলনা। এমনকি বাসে দাঁড়িয়ে একহাতে হাতল ধরা আরেক হাতে বই খাতা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি সামলে তারপর বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেছি। অনেকেই বলতে পারেন কেন বাসে এত কষ্ট করে যেতে হয়? একজন চাকুরী জীবি চাইলে প্রতিদিন বাড়তি ভাড়া দিয়ে আরাম আয়েশে যেতে পারেননা কারণ এটি তার আয়ের উপর প্রভাব পড়ে তেমনি একজন ছাত্র প্রতিদিন এত টাকা খরচ করে স্কুল/কলেজে আসা যাওয়া সম্ভব নয় এটি তার পরিবারের উপর প্রভাব পড়ে। একদিন দুইদিন হলে ভিন্ন কথা। তাই ছাত্র ছাত্রীদের ন্যায্য দাবী হাফ ভাড়া দেশের সবখানে কার্যকর করা হোক। শুধু কয়েকটি শহরে কেন? দেশের অন্য শিক্ষার্থীরা ধনীর দুলাল নয়। কার্যকর হলে সবখানে হোক সকল ছাত্র ছাত্রীর জন্য হাফ ভাড়া। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন অছাত্ররা ছাত্র সেজে সুযোগ নিতে না পারে। নির্ধারিত দিন ও সময়ের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। অভিভাবকদের দায়িত্ব থাকবে সন্তানদের প্রতি তারা যেন দাবি আদায়ের জন্য কোন রাজনীতির বলি না হয়। কারণ সরকার চায় হাফ ভাড়া কার্যকর হোক। যার ফল আমরা ঢাকা শহরে দেখতে পাচ্ছি। ছাত্র ছাত্রীদের ন্যায্য দাবী সারা দেশে হাফ ভাড়া কার্যকর হোক এই প্রত্যাশা করছি।
লেখকঃ
প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক চট্টগ্রামের খবর
সমাজকর্মী ও সংগঠক
Leave a Reply