পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আবদুর রহিম প্রকাশ জঙ্গি রাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পটিয়া থানাধীন মুজাফরাবাদ এলাকা সংলগ্ন আবদুর রহিমের রিয়েল এস্টেট ফার্মে অভিযান চালিয়ে তাকে পটিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার নিজের গ্রামের বাড়ি মুজাফরাবাদ ও চন্দনাইশের উত্তর মুরাদাবাদ এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এলাকার লোকজন জানান আবদুর রহিম একজন জঙ্গি, দখলবাজ ও ভূমিদস্যূ। এলাকার লোকজন তাকে ‘জঙ্গি রাজন’ হিসেবে চিনে। মুজাফরাবাদ ও মুরাদাবাদ এলাকায় ১০/১৫ জন নিরীহ ব্যক্তির জায়গা জোরপূর্বক দখল করেছে এই আবদুর রহিম। স্থানীয় লোকজন তার কাছে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার।
গ্রেপ্তারকৃত আবদুর রহিমকে মাদ্রাসার মহাপরিচালক ওবাইদুল্লাহ হামযার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ গতকাল বুধবার পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দিলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। আবদুর রহিম খরনা চৌধুরী বাড়ির মৃত আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর আবদুর রহিমের নেতৃত্বে মাদ্রাসায় বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে মাদ্রাসার বিপদগামী উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের উসকানি দিয়ে রাত ১২ টা থেকে সারারাত মাদ্রাসায় ত্রাস সৃষ্টি করে কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র ভাংচুর চালায়। এসময় মহাপরিচালক ওবাইদুল্লাহ হামযার বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে তাকে জিম্মি করে রাখেন তারা। ভোর রাত ৪টার সময় প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ওবাইদুল্লাহ হামযার কাছ থেকে একটি পদত্যাগপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়। তারা মসজিদের মাইক নিয়ে হামলার ঘোষণা দেয়। এরপর সন্ত্রাসীরা মহাপরিচালকের স্ত্রী, সন্তানদেরও মারধর করে।
ওবাইদুল্লা হামযা বাদী হয়ে ২৯ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় পটিয়া থানায় ৭ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৫০-১০০ জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেন। ৩০ অক্টোবর (সোমবার) তা পটিয়া থানায় ৪২ নং মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
ভুক্তভোগী রফিক আহমদ জানান, তার থেকে ১০ গন্ডা জায়গা নিয়ে ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন রহিম। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে।
ভুক্তভোগী মহিউদ্দীন, রবিন, লোকমান, রায়হান তাদেরকে জায়গা জমি নিয়ে আবদুর রহিম মামলা, হামলাসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, পটিয়া জামেয়া মাদ্রাসার দেড়শ শতক ভূমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছিলেন রহিম। বিষয়টি ওবাইদুল্লা হামযার নজরে আসায় আবদুর রহিম তার উপর ক্ষেপে যায়। মুজাফরাবাদ ও মুরাদাবাদ এলাকায় জায়গা জমি দখল করে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেছে এই আবদুর রহিম। এলাকার লোকজন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গতকাল মিছিল করেছে।
পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, নাশকতা ও মাদ্রাসায় হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদ্রাসায় হামলা ও ভাঙচুরের মূলহোতা হিসেবে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply