১৭৮ বছরের পুরোনো বিদ্যাপীট পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৭৮ বছর ধরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে পটিয়া তথা চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে। পটিয়া নয় পুরো চট্টগ্রাম বিবেচনা নিলেও পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের মত সব দিক থেকে উন্নত ও সমৃদ্ধ প্রাচীন বিদ্যাপীট আর দ্বিতীয়টি নেই।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় নামে নয়, কাজেই সব কিছু প্রমাণ করেছে। এই বিদ্যালয় শুধু পটিয়া নয় পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, খেলাধুলা, প্রশাসনিক ও সরকারি কার্যক্রমের কেন্দ্র। সেই সাথে মেধাবী প্রজন্ম তৈরির সমৃদ্ধ কারখানা।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ঐতিহ্যগতভাবে সব ধরনের সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। পহেলা বৈশাখ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সমাবেশ, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের সরকারি কুচকাওয়াজ সহ পটিয়ার বৃহৎ সব আয়োজন পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়কে ঘিরেই হয়। যে আয়োজন গুলোর জন্য পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ছাড়া বিকল্প কোন স্থান কল্পনাই করা যায় না। অতি সম্প্রতি পটিয়ার গর্বের ৩ দিন ব্যাপী “পটিয়া উৎসব” এই স্কুলের মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি মুসলমানদের কোরবানির সব চেয়ে বড় গরুর বাজার ও হিন্দুদের ছাগলের বাজার এই স্কুলের মাঠেই বসে।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের জাদরেল সব মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরা। এই স্কুলের মাঠে আয়োজন করা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন অনেক মন্ত্রী, সরকারি আমলা ও কৃতি সন্তান।
পটিয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়াক্ষেত্র পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ। ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট মানেই এই স্কুলের খেলার মাঠ। আমার ভুল না হলে খেলার মাঠে প্রতিদিন অত্র স্কুলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের বেশি দেখা যায়। যারা বিনা বাঁধায় নিজের প্রতিষ্ঠানের মাঠের মত করেই খেলাধুলা করে।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ যে কোন শিক্ষার্থীর নিকট গর্বের বিষয়। সেই সাথে ঈর্ষার বিষয়ও বটে। ছায়াঘেরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। গুছানো সব দালান। নিজস্ব মিলনায়তন ও শহীদ মিনার। আদর্শ পাঠদান পরিবেশ, পড়ালেখার মান ও পাশ সব দিক থেকেই অদ্বিতীয় ও অসাধারণ।
জাতীয় ক্ষেত্রেও এই স্কুলের অবদান অনস্বীকার্য। তৈরি করেছে হাজারো রত্ন ও কৃতি সন্তান। সাহিত্যিক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, রাজনীতিবিদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও শিল্পপতি সাইফুল আলম মাসুদ এর মত ছাত্রদের স্মৃতি বিজড়িত এই স্কুলের কৃতি ছাত্রদের তালিকা এতো বড় যে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এক কথায় বলা যায়, এই স্কুলের সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা দেশের মধ্যে সব সময় নেতৃত্বের আসনে ছিল ও এখনো আছেন।
স্কুলের পাশে থাকা পটিয়া সরকারি কলেজও পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের বদান্যতায় উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করেছে। কলেজর অবকাঠামো দাড়িয়ে আছে স্কুলের জায়গাতেই। এই কলেজের চারপাশ পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় বেষ্টিত।
পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় শুধু পড়ালেখা শিখানোর দায়িত্ব পালন করেনি, প্রাচীন বিদ্যালয় হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে সব রকম দায়িত্ব পালন করেছে। পটিয়ার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে যেমন ভুমিকা রেখেছে ঠিক তেমনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই বিদ্যালয় সব দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছে এই বিদ্যালয়।
সব কিছু বিবেচনা করে বলা যায়, পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় সব ধরনের যোগ্যতা দিয়েই সরকারিকরণ হবে। কারো বদান্যতায় নয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করণ হোক এটা শুধু প্রত্যাশা নয় প্রাণের দাবী। আর তা যদি না হয় তাহলে ধরে নিব দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট। যেখানে যোগ্যতা বড় নয়। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার দাপটই সব কিছুর নিয়ামক।
পুনশ্চ- লেখাটি একান্ত আমার নিজস্ব অভিমত। কাউকে ছোট করা বা উদ্দেশ্য প্রনোদিত নয়।
লেখকঃ
বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মী।
Leave a Reply