পরিবেশ ক্ষতিকরের অন্যতম উপাদান হলো প্লাস্টিক বর্জ। প্লাস্টিক বর্জ্যের ফলে মাটি দূষিত হয় এবং এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে জীবজগত ও উদ্ভিদকূল উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা ব্যাহত হয়, কৃষি উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতা বিঘ্নিত হয়।একসময়ের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার প্লাস্টিক এখন পরিবেশ দূষণ নামের দুঃস্বপ্নের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অপব্যবহার এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমাদের ব্যবহার্য যে দ্রব্যটি পরিবেশ দূষণের পেছনে অন্যতম বড় অবদান রাখছে তা হলো প্লাস্টিক। আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ব্যবহার করছি এবং পরিবেশকে দূষিত করছি।
সত্যি কথা বলতে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন কাজে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্লাস্টিক দ্রব্য ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব মনে হতে পারে। সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মুখে দেয়া চুষনি, দুধের বোতল থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন খাবার প্লেট, জগ, গ্লাস, থালা, বাটিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসই তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। কিন্তু এই প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? মোটেও না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক বা পলিথিন যেভাবে মিশ্রিত হয়ে আছে তা বর্জন করা প্রায় অসম্ভব হতে পারে। প্লাস্টিক পন্যের বিপরীতে যে, অন্য পণ্য ব্যবহার করবো সেই পণ্য সহজলভ্য নেই বা সচারাচরভাবে বাজারে আসছে না। সরকার পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিন্তু যেখান থেকে যে কারখানা থেকে এই পণ্যের উৎপাদন হয় সেগুলোর বিষয়ে তো নিষেধাজ্ঞা দেয় নি। একদিকে কারখানায় পলিথিনের উৎপাদন করে বাজারে ছাড়বে অন্য দিকে সাধারণ মানুষের উপর পলিথিন ব্যবহারে নিষিদ্ধ করবে তাতে কি ফলপ্রসূ হবে? যেকোনো একটি পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সেই পণ্যের কারখানা বন্ধ সহ তার বিপরীত পণ্যও বাজারে চাহিদা পরিমাণ রাখতে হবে। পলিথিন বা প্লাস্টিক পরিবেশ ক্ষতিকারক পণ্য সেটা সকলেরই জানা তবে কিভাবে সরকারের চোখ ফাকি দিয়ে কারখানা চলে? একটি কারখানা করতে হলে সরকারের অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হওয়ার কথা তবে এত সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু সরকার সেই দিকে খেয়াল না রেখে শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলেই ব্যবহার কমবে না। গোড়া থেকেই নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী বিশ্ব কিংবা আমাদের পরের প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনি জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মানুষ অসচেতন বেশি। বিশ্বের অনেক জাতির মধ্য আমরা বাঙ্গালী জাতিই আছি যে নিজের ভালো নিজে না বুঝে বরং নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে শেষ করে দেই। আমরা কিন্তু ভালোর দিক কিংবা ক্ষতির দিক উভয় বিষয়ে অবগত আছি কিন্তু তা মানছি না। আমরা যা বলি তা করি না এটাই হলো বাস্তবতা। নির্বোধ আমরা পরিবেশ নষ্ট করে বড় বড় বিল্ডিং করার প্রতিযোগিতা করি আর এর মাধ্যমেই পরিবেশ কে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজেরাই নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলি। আমরা এটা বুঝতে অক্ষম যে পরিবেশ ধ্বংস করে যতই কিছুই করি না কেনো তা কখনও সুখকর নয়। দিনদিন যেভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে তা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে আগামী বাসযোগ্য পৃথিবী অনুপোযোগী হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবেশ,শিশুসহ সকল ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এখন থেকেই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরী। বিশ্ময়কর বিষয় হল প্রতিবছর জাতিসংঘ জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ; সেখানে বিশ্বের প্রায় সকল ছোট বড় দেশ অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণের অর্থ বাজেট করা সহ সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগন জলবায়ু মোকাবেলায় তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন কিন্তু সম্মেলন শেষে সেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না বরং দেখা যায় জলবায়ুর বিপুল ক্ষতিকারক পদার্থ সহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে এক দেশ আরেক দেশে প্রতি তাদের শক্তি জানান দিতে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাসী চরম অস্থিরতায় ভোগে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে আগামী কয়েক বছর পর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বসবাসের জন্য অনুপোযোগী নগর হিসেবে বিবেচিত হবে। ঢাকা অতিমাত্রায় ধুলোবালি, ব্যাপকভাবে শব্দ দূষণ, বায়ূ দূষণ, পলিথিন বা প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশ বিপর্যস্ত। এই পরিবেশ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহনের করলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। বলা যায় সঠিক সিদ্ধান্ত বা আইনের প্রয়োগ ঢিলেঢালা হওয়া কারণেই মূল। যেমন বর্তমানে সরকার পলিথিন কিংবা প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন সেটিও আমি যথার্থ মনে করছি না ; কারণ শুধু ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা নির্মূল করা যাবে না। সত্যিকার অর্থে প্লাস্টিক বা পলিথিন নির্মূল করতে হলে সেই ধরণের সকল কারখানার অনুমোদন বাতিল করে বিকল্প পরিবেশ বান্ধব পণ্যের উৎপাদন মূখী কারখানা চালু করার বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে তবেই প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন ব্যবহার নির্মূল করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply