বাবু চৌধুরীঃ
ছবির এই লোকটার নাম আতিকুর রহমান ফরহাদ ওরফে দই ফরহাদ। মুছাপুরের ওমেদ আলি মুন্সি বাড়ির আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে ফরহাদ ২০০১ সালে সারিকাইতের কাজী বাড়ির এক হতদরিদ্র পরিবারের বড় মেয়েকে বিয়ে করে। বাবা মা তিন বোন আর এক ভাইয়ের সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটির সকল দায়দায়িত্ব ফরহাদের উপর এসে পড়ে। ফরহাদের বিয়ের সময় তার ছোট শ্যালিকার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। এরপরের গল্পটা হতে পারত এরকম যে পরবর্তীতে ফরহাদ তার মেয়ের বয়সী শ্যালিকাকে পিতৃস্নেহে পড়াশুনা করিয়ে একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবের গল্প একজন ধর্মভীরু ভালমানুষরুপী পিশাচের অকল্পনীয় পৈশাচিকতার গল্প। এই অমানুষ ফরহাদ তার ছোট্ট শ্যালিকার পিতা না হয়ে একজন হিংস্র মাংসলোভী পশুর মত তার শ্যালিকার বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর তখন ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর বড় বোনের চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসায় বেড়াতে গেলে ফরহাদ তার স্ত্রীর সহায়তায় কৌশলে তার শোবার ঘরে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।। এরপর টানা চলতে থাকে অসহায় মেয়েটির উপর তার এই পৈশাচিকতা। পরবর্তীতে উপুর্যপরী ধর্ষণের ফলে মেয়েটি কিশোরী থাকা অবস্থায় দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বড় বোন আর ফরহাদ মিলে মেহেদীবাগের এভারগ্রিন হেলথ সেন্টার প্রাইভেট লিমিটেডে নিয়ে গর্ভপাত করিয়ে আনে। হাসপাতালটির পরিচালকের সঙ্গে ধর্ষক ফরহাদের বন্ধুত্বের খাতিরে বাদীর নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে ওই গর্ভপাত করা হয়। এরপর বড় বোনের বাসায় রেখে টানা ১০ বছর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেয়েটির উপর চলে এই পাশবিক নির্যাতন। মেয়েটিকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে ফরহাদ ও তার স্ত্রী মেয়েটির মুখ বন্ধ রাখে। ধর্ষণের কথা কাউকে জানালে ফরহাদ মেয়েটির ক্ষতি করবে এবং তার পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা দেয়া বন্ধ করে দিবে এমনকি বড় বোনকে তালাক দিবে এমন ভয় দেখিয়ে বড় বোন তার স্বামী ফরহাদের সাথে ছোট বোনকে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে নিতে বাধ্য করতো। ২০২০ সালের মার্চে মেয়েটির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ছেলের সাথে টেলিফোনে আকদ হয়। কিন্তু এর পরেও ফরহাদের হাত থেকে মেয়েটি নিস্তার পায় না। অবশেষে ছেলেটির পরিবার ডিসেম্বরে মেয়েটিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উঠিয়ে নেয়ার পর ফরহাদ নানাভাবে মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। কিন্তু ছেলেটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেলে ফরহাদ যখন আবার মেয়েটিকে উত্যক্ত করতে থাকে তখন সে বাধ্য হয়ে স্বামীকে সব ঘটনা খুলে বলে। এরপর স্বামী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে কৌশলে ফোনালাপে ফরহাদের কৃতকর্মের সব স্বীকারোক্তির রেকর্ডসহ উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে মেয়েটি অবশেষে ২৮ শে মার্চ সন্দ্বীপ থানায় ভগ্নিপতি আতিকুর রহমান আজাদ প্রকাশ ফরহাদ (৫০) এবং বোন কাজী কামরুন্নাহার (৩৮) এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলার পর থেকে ফরহাদ নানা মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে মেয়েটিকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরহাদ সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এই ধর্ষণ মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে বলে মেয়েটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। মেয়েটি ইতিমধ্যে তার জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কার কথা প্রশাসনকে অবহিত করেছে। মেয়েটির ভাষ্য অনুযায়ী শুধু তার সাথেই নয় তার মেজো বোনের সাথেও ফরহাদ একই কায়দায় তার বিকৃত লালসা চরিতার্থ করে আসছে। মেজো বোনের বিয়ে হয়ে দুই বাচ্চা হওয়ার পরেও ফরহাদ ব্ল্যাকমেইল করে এখনো তার সাথে পৈশাচিকতা করে যাচ্ছে। মেজ বোন সংসার আর লোকলজ্জার ভয়ে কখনো এই ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস পায়নি। সন্দ্বীপের পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমেদের বরাতে জানা গেছে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ সর্বাত্মক অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু মামলার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও ফরহাদ এখনো প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
Leave a Reply