তহিদুল ইসলাম রাসেল, চট্টগ্রামঃ
বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার ফ্লাইওভারের মুখে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ মাথা ও পা থেঁতলানো মরদেহ দু’টি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠায়। আর সেখানেই ইকবাল-সখিনার পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পরিবেশ।
চমেক হাসপাতালের মর্গে সন্ধ্যায় কথা হয় ইকবালের বড় ভাই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অর্থোপেডিকস রেজিস্ট্রার ডা. তসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করার পর তাদের ঘরে সন্তান আসার কথা ছিল। সখিনা তিন মাসের গর্ভবতী। আর এরমধ্যে এই দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল তাদের সাজানো সংসার আর আমাদের পরিবারের স্বপ্ন।’
সখিনা ফাতেমী নগরের মোস্তফা-হাকিম কে জি অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন আর স্বামী ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী জ্যাক মেশিনারি ইম্পোট এন্ড এক্সপোর্টের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের বাসা নগরের আকবর শাহ থানার সিডিএ ফিরোজ শাহ কলোনিতে। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ধুম ইউনিয়নে।
মর্গের সামনে আহাজারি করছিলেন ইকবালের সহকর্মী মোসলেম উদ্দীনও। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পাঁচ বছর পর তাদের সন্তান হওয়ার খবরে ইকবাল খুব উচ্ছ্বাসিত ছিলেন। আমাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে হাসি মুখে খোশ গল্প করতেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা দুজন জ্যান্ত মানুষকে লাশ বানিয়ে দিবে ভাবতেই পারছি না। ইফতারের দশ মিনিট আগেই আমি খবর পেয়ে এখানে ছুটে আসি। তাদের পরিবারের মনের অবস্থা কি হচ্ছে সেটা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।’
ইকবালের স্বজনরা জানান, সখিনা ফাতেমী রুটিন চেকআপের জন্য মুরাদপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. রোকেয়া বেগমের কাছে গিয়েছিলেন। ডাক্তারখানা থেকে বের হওয়ার পর যখন তার স্বামী ইকবালের মোটরসাইকেলে উঠেন তখন ইফতারের বাকি ছিল আর ৩০ মিনিট। চকবাজার থেকে গোল পাহাড় মোড়-জিইসি মোড় হয়ে জাকির হোসেন রোড ধরে ফিরোজ শাহ কলোনির বাসায় ফেরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু নাসিরাবাদ ওমেন কলেজ মোড়ের যানজটের মুখোমুখি না হতেই বাইক চালিয়ে টাইগার পাস হয়ে আমবাগান দিয়ে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইকবাল। সে হিসেবে তারা ইস্পাহানি মোড় হয়ে টাইগার পাসের দিকে আসতেই পিটস্টপ রেস্টুরেন্টের ১০ গজ আগে দ্রুত গতিতে আসা ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সিমেন্ট মিক্সারবাহী ট্রাক উঠিয়ে দিল প্রকৌশলী ও শিক্ষিকা দম্পতির ওপর।
ওই সময় রাস্তার থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুহুর্তের মধ্যেই মিক্সারবাহী গাড়ি ইকবাল ও সখিনার মাথার উপর সামনের চাকা উঠিয়ে দেয়। এতেও চালকের মন ভরেনি। পরবর্তীতে দ্রুত সটকে পড়ার জন্য বাম পাশ দিয়ে এসে গাড়ির পিছনের চাকা দিয়ে তাদের পা থেঁতলে দেয়। এরপর ওই গাড়ির চালক লালখান বাজার মোড় থেকে একটু সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পরে পথচারীর খবরে কোতোয়ালী থানা পুলিশ এসে ইকবালের পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বের করে তার বড় ভাই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অর্থোপেডিকস রেজিস্টার তসলিম চৌধুরীর কাছে ফোন করেন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করলে পুলিশ ইকবাল-সখিনার লাশ চমেকের মর্গে নিয়ে যায়।
Leave a Reply