উপসম্পাদকীয়ঃ
‘মৃত্যুই যখন অনিবার্য, চিকিৎসকের ভুল সেখানে হবেই’-এ কথা সকলেরই জানা। চিকিৎসকরা তো রক্ত মাংসেরই মানুষ। কর্মই হোক আর মর্মই হোক অথবা নিছকই প্রতীকীই হোক প্রায় হাজারো দিবসের মাঝে ১লা জুলাই চিকিৎসক দিবস।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
ক্যালেন্ডারের পাতা অনুসারে বছরের প্রতিটি দিনের ২৪ ঘন্টাই এমনকি প্রতিটি পাবর্ণেও তারা আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় অসুস্থ মানুষের পাশে থাকবে সব সময় এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বিশেষ গর্ব অনুভব করেন, আমাদের গর্ব ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ কালে কালে যুগে যুগে বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনেই চিকিৎসক সমাজের রয়েছে প্রত্যক্ষ ভূমিকা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যে সর্বাধিক শহীদ হন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশের দক্ষ চিকিৎসকগণ পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রতি নিয়তই সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তাঁদের মেধা-মনন-প্রজ্ঞা-নিষ্ঠা আর একাগ্রতা দিয়ে।
বাংলাদেশের মানুষদের ভুল ধারণা রয়েছে যেটার জন্য প্রতিনিয়তই তারা চিকিৎসকদের গালিগালাজ করে থাকেন। বাংলাদেশের আপামর জনগনের ধারণা কেবলমাত্র চিকিৎসকরাই্ জনগণের করের টাকায় মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেন আর তাই জনগণের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র চিকিৎসকদেরই। যারা এই ধারণা পোষণ করেন তাদের প্রতি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ব্যক্তিই জনগণের করের টাকায় পড়েন। সেই হিসেবে প্রশাসনের আমলা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, উকিল, বিচারপতি, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ সকল পেশার মানুষই কোন না কোনভাবে জনগনের করের টাকায় পড়েছেন। সুতরাং জনগণের করের টাকায় পড়ায় দায় শুধুমাত্র চিকিৎসকরা নেবেন কেন? আর জনগনের অন্যতম মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তার জনগনের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মেধাবীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাঁদের মেধা দিয়ে চিকিৎসক হবার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচিত হন। এভাবেই চিকিৎসক তৈরি হয়। তবে চিকিৎসকদের সেবা প্রদানকালে দায়বদ্ধতার চেয়ে মানবিকতাকে গুরুত্ব দেওয়া বেশী প্রয়োজন।
আমি বিশ্বাস করি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রাইমারি চিকিৎসক, প্রাথমিক দন্ত চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই চিকিৎসা সেবাকে সার্বজনীন করা সম্ভব। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবাকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে তৃণমূলে পৌঁছে দেবার যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টারই অগ্র সৈনিক আমাদের চিকিৎসক সমাজ। আমাদের এ অভিযাত্রার সহযাত্রী প্রশাসন এবং সাংবাদিক বন্ধুরাও।
লেখকঃ
কলামিস্ট, সংগঠক ও চিকিৎসক
Leave a Reply