মরহুম সামশুল আলম ১৯৩৮ সালে পশ্চিম হাইদগাঁও গ্রামের সম্ভ্রান্ত তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাদাসিদে,সৎ,ধার্মিক,নির্ভীক, সদাহাস্যোজ্জল ও মৃদুভাষী কিন্তু অত্যন্ত প্রত্যয়ী ছিলেন। তিনি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী ও গঠনমূলক চিন্তার অনুসারী ছিলেন। তারমধ্যে সাহিত্যের ছোঁয়া,পাণ্ডিত্য ও দার্শনিক প্রজ্ঞা ছিল। বাবা আকিমু-দ্বীন ও মা সোনাই জান’র পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয় এবং একমাত্র পুত্র সন্তান। ১৯৫৮ সালে তিনি আব্দুস সোবাহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এনট্রেস পাস করেন। পরের বছর হাইদগাঁও চৌধুরী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তিনি বেশ কয়েক বছর আব্দুস সোবাহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন। ১৯৬৫ সালে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী ভূমি অফিসে সরকারি তসিলদার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই বছর তিনি পটিয়া মহকুমার সদরের পাইকপাড়া এলাকার তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ সওদাগরের কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৬ সন্তানের জনক শামসুল আলম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষে হিসাব বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি অনন্য যোগ্যতার কারণে পরিবহন সেক্টরে এ্যাসিসটেন্ট ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর (এটিও) পদে পদোন্নতি পান। রাজনৈতিক জীবনে তিনি যুক্তফ্রন্ট, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এলাকায় একাধিক সামাজিক-সংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধে তিনি দেশ মাতৃকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বিনয়ী, সংযত,অমায়িক স্বভাবের। খুব সহজে লোকজনের সাথে মিশে যেতে পারতেন; অনায়াসে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। বই প্রেমিক শামসুল আলম একজন দার্শনিক,সমাজ সংস্কারক,ধর্ম-ইতিহাসবেত্তা সর্বোপরি পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানগরিমায় এক অনন্য পুরুষ। স্ত্রী, বোন ও ছেলে-মেয়েদের প্রতি তাঁর মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতা ও বিশ্বাস ছিল অগাধ। রাজনৈতি ও কর্মজীবনে নীতির ক্ষেত্রে তিনি আপোষ করতেন না। নিজের বিশ্বাস থেকে তাঁর কখনো পদঙ্খলন ঘটতে দেখিনি।এটাই প্রমাণ করে তাঁর চারিত্রিক দৃঢতা,আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠা। যারা তাঁর সাথে মিশেছেন, তাঁরা জানেন কী অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর। বাংলা,আরবি,হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি সাহিত্যের উপর অসাধরণ দখলে তিনি জ্ঞানের সাগর ছিলেন। এক কথায় তিনি ছিলেন আলোময় মানুষ। তিনি অনন্য,অতুলনীয় একজন। একজন মানুষের অনেকগুলো গুণ থাকে। কোন একটা গুণকে কেন্দ্র করে মানুষ এগিয়ে যায়। মরহুম শামসুল আলম একদম আলাদা। তাঁরমধ্যে অনেকগুলো গুণের সমাবেশ ঘটেছে। একটি বাতিঘর চারপাশের কালোকে যেমন আলোতে ভরে দেয়,ঠিক তিনি তেমটিই ছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালের ৩ রমাদান ইন্তেকাল করেন।
লেখকঃ
স্টাফ রিপোর্টার,
দৈনিক নয়া দিগন্ত
মরহুম সামশুল আলম এর সন্তান
Leave a Reply