তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন।
“এসো স্বপ্ন দেখাই, আলো ছড়াই, একসাথে” স্লোগান নিয়ে বিজয় দিবসে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব । ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সারাদিন ব্যাপী এই উৎসবে ছিল বিজয় র্যালি, মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা, আলোচনা ও কথামালা, মুক্তিযুদ্ধের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রনাট্য, প্যাপেট থিয়েটার ও সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিট এর সহযোগিতায় রক্তদান ও রক্তের গ্রæপ পরিক্ষা।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। তাই তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। সেই সাথে জানতে হবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক ও উৎসব কমিটির সমন্বয়ক আবদুল্লাহ ফারুক রবি। সকাল ১০টায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম শিক্ষার্বোড সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির উৎসব ও আনন্দের দিন। বাঙালি জাতির বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। তাই বিজয়ের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রত্যয়ের এই আয়োজন নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি উৎসবে আগত দর্শক ও শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের বিভিন্ন গল্প শোনান।
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, বিজয়ের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলতে হবে। জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে হব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। একাডেমির সদস্য শুকান্ত দাশ ও শিবু মল্লিকের সঞ্চালনায় আলোচনা ও কথামালায় আরো অংশ নেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্পী কল্যান সমিতির সভাপতি মিলন কান্তি দে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর কর্মকর্তা লায়ন একেএম সালাহ্ উদ্দিন এমজেএফ, কেডিএ মোটরস্ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদারুল ইসলাম, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ডা. ছৈয়দ সাইফুল ইসলাম, প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমির উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, কাউন্সিলর রুপক সেন, পটিয়া বাংকারস্ এসোসিয়েশন এর সভাপতি মুহাম্মদ আমির হোসাইন, ব্যাংকার মোরশেদুল আলম চৌধুরী, উৎসবের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক শান্তপদ বড়ৃুয়া, কুসুম কলি আসরের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. এম. হোসাইন রানা, বেসরকারী কারা পরিদর্শক আবদুল হান্নান চৌধুরী লিটন, জনতা ব্যাংক ব্যবস্থাপক রোকন উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন পারভেজ, মাবিলা এন্ড ছৈয়দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম হারুনুর রশিদ, সংগীত শিল্পী অপু চন্দ্র দে, ক্রীড়া সংগঠক বোরহান উদ্দিন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক প্রণব চেীধুরী, দৈনিক দেশবার্তা সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ আবু ছালেহ, উৎসবের সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ দাশ, চিত্র শিল্পী হামেদ হাসান, একাডেমির সমন্বয়ক এমরান হোসেন রাসেল, সিনিয়র সদস্য আবদুল আল মোমেন প্রমুখ। উৎসবে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পংকজ কুমার দস্তিদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবুল কাশেম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউছুপ মাষ্টারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সেই সাথে মহামারী করোনা কালীন সময়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখার জন্য হ্নদ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এ কে এম নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সকাল ৮টায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় র্যালীর মাধ্যমে শুরু হয় বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠান। তারপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রক্ত দান ও রক্ত গ্রæপ পরীক্ষা কর্মসুচি। সেই সাথে চলতে থাকে বিভিন্ন সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা ও গেইম শো। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রনাট্য ও প্যাপেট থিয়েটার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম, সপ্তক সংগীত বিদ্যাপীঠ, ক্যানভাস পাপেট থিয়েটার, গীতল সাংস্কৃতিক একাডেমি, ক্লাসিকেল এন্ড মডার্ন ডান্স একাডেমি, আনন্দধারা শিল্পী গোষ্ঠী, ছায়াবিথী সংগীত একাডেমি, ছনহরা নান্দনিক শিল্পকলা একাডেমি, রংগীন ঘুড়ি সাংস্কৃতিক একাডেমি, শিশু সংগীত বিদ্যালয়, ত্রিনেত্র সংঘ ও প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমির সদস্যরা। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় ৩৪৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। তার মধ্য থেকে ৩৪ জন প্রতিযোগীকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে অতিথিরা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার বিতরণ করেন।
Leave a Reply