আমাদের দেশে নারীদের অনেক রোগকে চাপা দিয়ে রাখা হয়। যেন এই রোগটির সাথে জড়িত থাকে পুরো পরিবারের মান-সম্মান। নারীরাও কিছু রোগের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। মনে মনে ভেবে থাকেন এই ধরণের রোগের কথা জানানো পুরোপুরি অন্যায় কিছু। দেহে পুষে রাখেন প্রাণঘাতী রোগ আর এভাবেই নীরবে নিজেকে নিয়ে যান মৃত্যুর কাছাকাছি।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার এমনই একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ। অনেক নারীই এই রোগের চিকিৎসা করান না। এবং সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হলো অনেকেই শুধুমাত্র লজ্জা পাবার কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেও তা নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। আমাদের দেশে এই রোগটির প্রকোপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অথচ সামান্য সতর্কতা এবং সঠিক শিক্ষা নারীদের এই প্রাণঘাতী রোগের কবল থেকে মুক্তি দিতে পারে খুব সহজেই।
লক্ষণ
১) মাসিকের পাশাপাশি অনিয়মিত রক্তক্ষরণ যেটাকে অনেকেই অনিয়মিত মাসিক হিসেবে ভুল করে থাকেন।
২) তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
৩) সাদা ও ঘন অথবা বাদামি রঙের দুর্গন্ধযুক্ত তরল স্রাব নিঃসরণ।
৪) কোনো ধরণের মারাত্মক ইনফেকশন দেখা দেয়া।
৫) প্রতিবার যৌন মিলনের পর রক্তপাত হওয়া।
৬) বয়স্ক মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তক্ষরণ হওয়া।
কারণ
১) হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী থাকে প্রায় ৯৯%। এই ভাইরাসটি সাধারণত পুরুষের মাধ্যমে নারীদেহে প্রবেশ করে।
২) ধূমপান, তামাক পাতা ব্যবহার, দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও অনিয়ন্ত্রিত সন্তান ধারনের কারণে জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয়।
৩) অপরিষ্কার থাকা ও মাসিকের সময় সঠিকভাবে নিজের যত্ন না নেয়ার কারণে হয়ে থাকে এই মারাত্মক রোগটি।
৪) অপুষ্টি, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে সামান্য ইনফেকশন থেকেও এই রোগটি হতে পারে।
প্রতিরোধ
১) ৯ বছর বয়সের পর সকল মেয়েদের এইচপিভি (HPV) টিকা নেয়া উচিত। তবে, অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির জার্নাল অনুযায়ী, এই টিকা ৯-১৫ বছর বয়সের মধ্যে নিয়ে নেয়া ভালো। ৩ টি ডোজের এই টিকা জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। যদি ১৫ বছরের পর এই টিকা নেয়া হয় তাহলে প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা করিয়ে টিকা নেয়া উচিত। ১৯-২৫ বছরের নারীদের বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
২) যেহেতু এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি পুরুষের মাধ্যমে নারীদেহে প্রবেশ করে তাই যৌন মিলনের সময় সতর্ক থাকুন। এবং কনডম ব্যবহার করুন।
৩) ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।
৪) সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন এবং মাসিক চলাকালীন সময়ে বিশেষ যত্ন নিন।
৫) পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন এবং দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করুন।
Leave a Reply