মোঃ আলাউদ্দীন, সীতাকুন্ড চট্টগ্রামঃ
দেশীয় সু-সাধু ফলের মাস আষাঁঢ – শ্রাবন। এক কথায়- আম-কাঠালের মাসকে মধু মাস হিসেবে তুলে ধরেছেন গল্পকার, উপন্যাসিক, সাহিত্যিক, কবি,গায়ক-গায়িকাসহ বুদ্ধিজীবিরা। ফলে মধু মাসে আম, জাম,লিচু, কাঠালসহ নানা করমের নানা স্বাদের মধুময় ফলে ভরে উঠে হাট-বাজার। আর তাই গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি ঘরে মৌ- মৌ করে ভেসে বেড়ায় মধু ফলের মধুমাঘা ঘ্রান। সামাজিক অনুষ্ঠানে বা আত্নীয়র বাড়িতে বেড়াতে উপহার হিসেবে কমবেশী সবার হাতে থাকে নানা জাতের দেশীয় ফলের ঝুঁড়ি। যে কারনে ঘরে ঘরে ফলের সমারোহে আতিথিয়তায় মধু ফলের জুড়ি নেই। তবে মধুময় ফলের মধ্যে আম-কাঠালের কদর সবার উপরে। তাই স্বাদে ভরপুর ভিটামিন সমৃদ্ধ রসালু ফল আম-কাঠালের উপস্থিতি রয়েছে সবার ঘরে। যার ফলে মাধু মাসকে মধুময় করতে রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দক্ষিন-পশ্চিমআঞ্চলের সাথে পাল্লা দিয়ে বানিজ্যিকভাবে আমের ফলন শুরু হয়েছে সীতাকুন্ডের নানা স্থানে। বিশেষ করে পাহাড়ের পাদদেশে আমের উপযোগী বেলে ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে স্থানীয় আমের সাথে কলম লাগিয়ে চলছে নানা জাতের আমের ফলন। মাটির উপযুক্ত পেয়ে উপজেলা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পাহাড়ের উচু-নিচু টিলায় বানিজ্যিকভাবে আমের চারায় চাষাবাদ করেন ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধি মো. রাশেদ। সখের বশে ৮ বছর পূর্বে রেলওয়ের পতিত জায়গায় বিভিন্ন জাতের আমের কলম লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে সাড়া ফেলেন চারদিকে। সফল জনপ্রতিনিধিত্বের সাথে একজন সফল আম বাগানি হিসেবে কুড়িয়েছেন সুনাম। সখের বসে লাগানো চারা গাছগুলো দু- বছরের মাথায় ফুলে- ফলে ভরে উঠে জানান দেয় উজ্জল সম্ভবনা। প্রথম বছরেই অধিক ফলন ঘরে তুলে বড় ধরনের লাভের মুখ দেখতে পেয়ে খুলে যাই ভাগ্যের দুয়ার। নানা পরিচর্যা ও পরিশ্রমে আমের আবাদ হয়ে উঠে রীতিমত আয়ের বড় উৎস। সব রকমের হতাশাকে পেছনে ফেলে দিয়ে পৌঁছতে থাকেন সফলতার দ্বার প্রান্তে। তিলে তিলে গড়া তুলা স্বপ্নের বাগান আজ আর্শিবাদ হয়ে উঠেছে বলে জানান বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. রাশেদ।
তিনি বলেন,‘ টাঁঙ্গালের এক বন্ধুর পরামর্শে রেল লাইনের পতিত জায়গায় আমের কলম চারা লাগানো শুরু করি। প্রায় ৩;শ গর্তে সার-ফসফেটসহ নানা জাতের জৈব সারে মিশিয়ে গর্তগুলো প্রস্তুত করা হয়। পরে উপযোগী গর্তে সারি বদ্ধভাবে লাগানো বাগানে এক বছরের মধ্যে ফুল আসে কলমে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী ফলন পেতে প্রথম বছর মুকুল গুলো ফেলে দিতে হয়েছে। পরের বছর থেকে মুকুল আসার পূর্ব হতে চলে গাছের পরিচর্যা। পোকা-মাকড়ের হাত থেকে মুকুল রক্ষায় ছিটাতে হয় কয়েক প্রকারের ঔষুধ। প্রায় ৫ একরের বাগানে রয়েছে হাড়ি ভাঙা, লেহেঙ্গ, অম্রফলি, মল্লিকা, রাঙ্গুয়ায় জাতের আম। বাগানের বিক্রিত আম হতে বছরে প্রায় ৮ লাখ আয় হয়। ফরমালিন ও কার্বাইড মুক্ত আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন নানা প্রাপ্ত হতে ছুটে আসে ক্রেতারা। তাই বাগানের সংগৃহিত আম পাইকারের চেয়ে খুচরা ক্রেতার নিকটে বিক্রি বেশী বলে জানান তিনি।
স্থানীয়ভাবে আমের ফলন বৃদ্ধিতে নতুন দুয়ার উম্মোচিত হওয়ায় ভবিষ্যতে আমের ব্যাপক চাষের সম্ভাববনা তৈরী হবে বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা রতন কান্তি দত্ত বলেন,‘ জৈষ্ট মাস আমের পাকা শুরু হয়ে শ্রাবন মাস পর্যন্ত চলমান থাকে। আম চাষে উপযুক্ত হওয়ায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপকহারে চাষ শুরু হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশ-বিদেশে বিষমুক্ত আমের রপ্তানি হার বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply