খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য বড়দিন এক প্রতিক্ষার দিন,আনন্দের দিন ও মিলনের দিনও বটে। সারা বছর ব্যাপি প্রতিক্ষা করা হয় এ দিনটির আশায়। আধ্যাতিক প্রস্তুতির জন্য মাতা মন্ডলী থেকে আহবান আসে আর মাতা মন্ডলীর আহবানে সাড়া দিয়ে প্রায় সকল খ্রিস্টভক্তগণ কম বেশী প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। সারা বিশ্বের সকল খ্রিষ্টবিশ্বাসীগণ গুরুত্বের সাথে বড়দিন উদ্যাপন করে থাকে। যদিও দিনটি ভৌগলিক দিক থেকে বিশ্লেষণে বছরে সবচেয়ে ছোট দিন। এদিনটি কেন নির্ধারিত হয়েছে সে বিষয় গুরুত্ব বিবেচনা না এনে এ দিনটি যেহেতু খ্রিষ্ট প্রভুর জন্মদিন নির্ধারিত হওয়ার কারনে খ্রিষ্টবিশ্বাসীগণ ঘটা করে উদযাপন করে থাকে। কারণ এদিনটিতে খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের বিশ^াস অনুসারে মুক্তিদাতা ও ত্রানকর্তা জন্ম গ্রহণ করেছেন। মুক্তিগামী মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ত্রানকর্তার জন্ম হওয়ায় দিনটি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই তাৎপর্যময়। তাই দিনটির গুরুত্ব ধ্যান করার অপেক্ষা রাখে। বর্তমান বিশ্বে^র ভোগ বিলাসী জীবন যাপন, ক্ষুধা, অভাব অনটন, যুদ্ধ বিগ্রহ অশুভ প্রতিযোগিতার এক অশান্ত পৃথিবী সময় অতিক্রম করছে তাই এক্ষনে বড়দিনের গুরুত্ব বিবেচনা একান্ত প্রয়োজন।
পুরাতন যুগে প্রবক্তাদের (নবীদের) মুখ দিয়ে উচ্চারিত পরম বিধাতার প্রতিশ্রুতি অনুসারে পাপী তাপী, বন্ধী মানুষকে মুক্ত করতে এজগতে খ্রিষ্ট প্রভুর জন্ম গ্রহন করেছিলেন। প্রাবক্তিক বানী অনুসারে এটি বাস্তবায়নের দিন বিধায় বিশ্বের সকল খ্রিষ্ট বিশা¦সীগণ দিবসটি বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের সাথে পালণ করে থাকে। যিশুর জীবন সকল মানুষের মুক্তির জন্য। যা তিনি তাঁর যাপিত জীবন যাপনে সকল মানুষের মুক্তির তরে কাজ করে গেছেন। যীশু ছিলেন সার্বজনীন সংগত কারনেই খ্রিষ্ট মন্ডলীর সকল সেবা কাজ সার্বজনীন। খ্রিষ্ট বিশ্বাসীগণ সকল কাজে সার্বজনীনতা বজায় রেখে চলেছে। খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের বিশ্বাস সমাজে সকল মানুষ সর্ব শক্তিমান এক সৃস্টিকর্তার সৃষ্টি। সকল মানুষেরই সেবার প্রয়োজন রয়েছে। সবাই ভাল থাকলে সমাজটাও ভাল থাকবে। শুধু একা ভাল থাকলেই সমাজ ভাল থাকতে পারে না । পরম বিধাতা মানুষ সৃস্টি করেছেন এবং মানুষের জন্য সকল কিছু সৃস্টি করেছেন। বিনামূল্যে আমরা সব কিছু পাই, তাই মানুষ মানষের ভাই। তাই ভাই মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্বও রয়েছে। সৃিস্টর সকল কিছুর সংরক্ষণের ও যত্ন নেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এ দায়িত্ব পালন প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। মানুষ এ দায়িত্ব পালনে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। আর এর ফলে ঘটছে সকল অঘটন। তাই আজ এ অশান্ত সমাজ থেকে মুক্তি পেতে বার বার খ্রিষ্ট যিশুর জন্ম একান্ত প্রয়োজন। সংগত কারনেই প্রতি বছর এ দিনটি পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারনত আমরা এ গঠন পাই পরিবারে। তাই আদর্শ সমাজ গঠনে পরিবারের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আর আমরা এ শিক্ষা পাই পবিত্র পরিবারের নিকট। যে পরিবারটি গঠিত হয়েছিল যীশু এবং তাঁর পিতা মাতার সমন্বয় ঐশরিক ভাবে। যে পরিবারে সকলের বাধ্যতা দিয়ে নম্রতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সমাজে সকল চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করেছেন। সত্য ও ন্যায্যতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিয়ে ন্যায় সমাজ বিনির্মানে এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃস্টি করে গেছেন। এ দৃষ্টান্ত আমাদের অনুকরণ করা একান্ত প্রয়োজন।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে মানুষ হয়ে উঠেছে ভোগবাদী ও লোভী। ভোগ বিলাস ও স্বার্থপরতার কারনে আজ পৃথিবী অশান্ত হয়ে উঠেছে। মানুষ একা বড় হতে চায় আর এ মানসেই বেড়ে উঠছে। শুধু চাই আর চাই চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই। তাই সমাজে সৃস্টি হচ্ছে উচু নিচু,ধনী গরীবের। কেউ বেশী পায় আবার কেউ পায় না। এ কারনেই সমাজে মানুষ স্বার্থপর আচরন করছে।
সমাজের এসমস্যা সমাধানের খ্রিষ্ট প্রভূর জন্ম একান্ত প্রয়োজন। খ্রিষ্ট প্রভুর পুনরোগমন হবেন ঠিক কিšুÍ তিনি বার বার আসবেন না। তিনি প্রতি দিন প্রতি ক্ষনে জন্ম নিতে চান আমাদের মাঝে। তাই আমাদের এ প্রতিক্ষায় থাকতে হয়। বড়দিন শুধু বাহ্যিক দিক দিয়েই পালন করা হলে সঠিক হবে না। বড়দিনের উৎসব পালনের পূর্বে প্রস্তুতির একান্ত প্রয়োজন। তাই মাতা মন্ডলী বড়দিন উৎসবে পূর্ব থেকে প্রস্থুতির জন্য সকল খ্রিস্ট ভক্তকে আহবান জানায়। নেয়া হয় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এসময়ে নিজেকে মূল্যায়ণ করার জন্য থাকে অনেক ধ্যান প্রার্থনার ব্যবস্থা। তবে এতে সময় দেয়া ও অংশগ্রহনের মনমানুসিকতা অনেকেরই নাই, নাই এর গুরুত্ব। বড়দিন শুধু কার্ড আদান প্রদান,সাজ সজ্জা,নতুন কাপড় পড়ার দিনই না। পরিবর্তনের দিন, নতুন হওয়ার দিন। তাই আধ্যাত্মিকতার দিক দিয়ে প্রস্থুতি নিতে না পারলে দিবসটি পালনের তেমন কোন অর্থ হয় না।
কাজেই বড়দিন বাহ্যিক ভাবে আনন্দের দিন হিসাবে দেখা গেলেও এর গভীরে অর্থ রয়েছে। মনে ধ্যানে ও আচরণে এ দিন সকল খ্রিষ্ট ভক্তদের জন্য অনেক তাৎপর্যের বিষয়। বড়দিনের আসল আনন্দ উপলোব্দী করে ছিলাম ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বড়দিনে। বছরটি ছিল আনন্দের কারন সারা বছর ব্যাপি আমরা আতংকে, অনিশ্চয়তায় ও অনাহারে অধ্য আহারে দিন যাপন করে আসছিলাম এবং ৯ মাস দুঃখ কষ্ট ভোগ শেষে বছর সমাপ্তিতে ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় হয়েছিল। আর সেই বিজয় ছিল সীমাহীন আনন্দের কারন বছরটি ছিল যুদ্ধের, প্রতিদিনে শব্দ ছিল গোলা গুলির, সংবাদ ছিল মৃত্যুর, লুটপাট, অগ্নিকান্ডের,অপহরন আর আতংকের ছিল, কখন আমরা আক্রমনের শিকার হব, আমরা অপেক্ষায় থাকতাম বাবা জ্যাঠার ফিরে আসার পথ চেয়ে। কারন জ্যাঠা ও বাবা যেতেন খাদ্যের সন্ধানে, তারা ফিরে আসবেন তো? থবরের একমাত্র ভরসা ছিল আকাশবানি ও বিবিসির খবর । খবর শুনতে হত কম্বলের ভিতরে। ভয় ছিল ঘরে আশ্রিত বয়স্ক এক সনাতন ধর্মী নানিসম সনাতন ধর্মালম্বী বয়স্কো ব্যাি কে নিয়ে। এছাড়া আমার জ্যাঠার কাছে অনেক সনাতন ধর্মালম্বী ব্যাক্তিদের আনাগোনা ছিল আমাদের ঘরে তাই। আর ১৬ই ডিসেম্বর সকালে যখন শুনতে পারলাম দেশ স্বাধীন হয়েছে, বিজয়ের প্রথমে ভয় ভরা আনন্দ অবলোকন করলাম, আর যখন দুপুরে দেখলাম অনেক মানুষ রাস্তায় নেমেছে তখন আনন্দের আর সীমা ছিল না। আমরা রাস্তায় নেমে গেলাম আমাদের শ্লেগান ছিল জয় বংলা। ঐ বছরের বড়দিনের আনন্দের মত আনন্দ আর পাচ্ছি না।
Leave a Reply